আইসিজেতে রোহিঙ্গা গণহত্যার শুনানি শুরু হচ্ছে মঙ্গলবার

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

২৭ মাস আগে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক ইতিহাসের নারকীয় তাণ্ডব শুরু করেছিল মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। রোহিঙ্গাদের ওপর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এবার মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলার শুনানি কাল শুরু হচ্ছে দ্য হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিজে)। নভেম্বরের ১১ তারিখ ওআইসির সমর্থন নিয়ে গাম্বিয়ার করা ওই মামলায় এই দফায় টানা তিন দিন শুনানি চলবে। ওই শুনানিতে গাম্বিয়া ও মিয়ানমার নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করবে।

রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মামলাটিকে নানা কারণে যুগান্তকারী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। গণহত্যার অভিযোগে আইসিজেতে এর আগে যেসব মামলা হয়েছে, সেগুলো ছিল প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে (যেমন সার্বিয়া বনাম বসনিয়া এবং সার্বিয়া বনাম ক্রোয়েশিয়া)। অথচ মিয়ানমার থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরে অবস্থিত গাম্বিয়া মামলাটি করেছে। আবার এই প্রথম নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাফাই দিতে হাজির হচ্ছেন আদালতে। নিজের দেশের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে কার্যত সু চি তাঁর দেশের সামরিক বাহিনীর নৃশংসতার যৌক্তিকতা দেওয়ার চেষ্টা করবেন। আইসিজের শুনানিতে অংশ নিতে গিয়ে ব্যক্তি সু চি জুয়া খেলছেন কি না, সেই প্রশ্ন কিন্তু এরই মধ্যে উঠেছে।

গাম্বিয়ার পক্ষে শুনানিতে অংশ নেবেন সে দেশের অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইনমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু। রুয়ান্ডার গণহত্যার জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা পরিচালনার অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ তামবাদুর সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইনে বিশেষজ্ঞ যুক্তরাজ্যের প্রফেসর ফিলিপ স্যান্ডসসহ বেশ কয়েকজন বিশ্ব পরিসরে নেতৃস্থানীয় আইনজ্ঞ শুনানিতে অংশ নেবেন বলে কথা রয়েছে। মঙ্গলবার আদালতে গাম্বিয়া তার বক্তব্য উপস্থাপন করবে এবং বুধবার মিয়ানমার তার অবস্থান তুলে ধরবে। এরপর বৃহস্পতিবার সকালে গাম্বিয়া এবং বিকেলে মিয়ানমার প্রতিপক্ষের যুক্তি খণ্ডন ও চূড়ান্ত বক্তব্য পেশ করবে।

গাম্বিয়া ও মিয়ানমারের পাশাপাশি বাংলাদেশ ও কানাডার প্রতিনিধিরা শুনানির সময় পিস প্যালেসে থাকছেন। বাংলাদেশ ও কানাডার পাশাপাশি নেদারল্যান্ডস নেপথ্যে থেকে গাম্বিয়াকে সহযোগিতা করবে বলে কূটনীতিক সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।

আদালতে গত ১১ নভেম্বর পেশ করা আবেদনে গাম্বিয়া বলেছে, কথিত সাফাই অভিযানের সময় গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, যেগুলোর উদ্দেশ্য ছিল গোষ্ঠীগতভাবে অথবা আংশিকভাবে রোহিঙ্গাদের ধ্বংসসাধন। এ জন্য গণহারে হত্যা, ধর্ষণ ও অন্যান্য যৌন সহিংসতা, কখনো কখনো বাড়িতে লোকজনকে আবদ্ধ রেখে সেগুলো জ্বালিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে গ্রামগুলোর পদ্ধতিগত ধ্বংসসাধন করা হয়েছে। গাম্বিয়া গণহত্যাবিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদের ৩ নম্বর ধারার আলোকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সনদ লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে। গাম্বিয়া ও মিয়ানমার দুই দেশই ১৯৪৮ সালে গৃহীত এই সনদে স্বাক্ষরকারী এবং ওই ধারায় সনদ লঙ্ঘনবিষয়ক বিরোধ আইজিসেতে নিষ্পত্তির বিধান রয়েছে। গাম্বিয়া সনদ লঙ্ঘনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিষয়টি নিরসনে গত ১১ অক্টোবর মিয়ানমারকে কূটনৈতিকভাবে চিঠি দেয়।

আদালতে পেশ করা আবেদনে গাম্বিয়া বলেছে, ওই চিঠির কোনো জবাব না পাওয়ায় সংক্ষুব্ধ হয়ে তারা আদালতের শরণাপন্ন হয়েছে। সনদ লঙ্ঘনের বিষয়ে দেশটি জাতিসংঘের অনুসন্ধানকারী দলের তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্যগুলোর কথা উল্লেখ করেছে। আবেদনে বলা হয়েছে যে গণহত্যামূলক কার্যকলাপ এখনো চলছে এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী গণহত্যার হুমকির মুখে রয়েছে। গাম্বিয়া দাবি করেছে, আইসিজের বিধিমালা এবং গণহত্যা সনদের বিধি অনুযায়ী মিয়ানমারের সঙ্গে তাদের বিরোধ নিষ্পত্তির এখতিয়ার আদালতের রয়েছে।