ছাত্রদল করার 'অপরাধে' দুই ছাত্র হলছাড়া

ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার ‘অপরাধে' দুই ছাত্রকে মারধর করে আবাসিক হল থেকে বের করে দিয়েছে ছাত্রলীগ। তাঁদের হলের ত্রিসীমানায় দেখলে ফের মারধরের হুমকিও দিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতারা আজ সোমবার ভোরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এএফ রহমান হলে এ ঘটনা ঘটে৷

হল থেকে বিতাড়িত ওই দুই ছাত্র হলেন মনোবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাকিবুল হাসান এবং একই বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র মো. সুমন৷ কোনো পদে না থাকলেও তাঁরা ছাত্রদলের সমর্থক। তাঁদের হল থেকে বিতাড়িত করায় নেতৃত্ব দিয়েছেন হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও আসন্ন হল কমিটির শীর্ষ পদপ্রত্যাশী আফসার হাসান৷

ভুক্তভোগী ও হল শাখা ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, হলের ১১১ নম্বর কক্ষে ঘুমাচ্ছিলেন মো. সুমন৷ ভোরে আফসার হাসানের নির্দেশে হল শাখা ছাত্রলীগের এক নেতা তাঁকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে হলের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে নিয়ে যান৷ সেখানে ছাত্রদল সংশ্লিষ্টতার জন্য তাঁকে মারধর করেন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা মারধরের পর তাঁরা সুমনের কাছে জানতে চান, তিনি কাদের সঙ্গে চলাফেরা করেন৷ তখন সুমন রাকিবের নাম বললে ১১৩ নম্বর কক্ষ থেকে রাকিবকেও ধরে নিয়ে আসেন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। পরে আফসার হাসানের নেতৃত্বে হলের অতিথিকক্ষে নিয়ে গিয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ, তল্লাশি ও মারধর করেন ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী৷ রড ও স্ট্যাম্প দিয়ে তাঁদের ভয়ভীতি দেখানো হয়। অতিথিকক্ষ থেকে হল সংসদের কক্ষে নিয়েও কিছুক্ষণ তাঁদের হুমকি-ধমকি দেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা

ভুক্তভোগী রাকিবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ছাত্রদলের সমর্থক হলেও কোনো দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিই না৷ প্রত্যেকের রাজনৈতিক আদর্শ থাকতেই পারে৷ কিন্তু বৈধ ছাত্র হিসেবে হলে থাকার অধিকার আমার আছে৷ কিন্তু ছাত্রলীগের নেতারা আমাদের হলের ত্রিসীমানায় যেতে মানা করেছেন, গেলে মারধরের হুমকি দিয়েছেন। আপাতত এক বন্ধুর বাসায় থাকছি, কিন্তু ঢাকায় আমার থাকার তেমন কোনো জায়গা নেই৷' আর মো. সুমনের অভিযোগ, তাঁর মানিব্যাগ সার্চ করার সময় আফসার হাসান মানিব্যাগে থাকা তিন হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়েছেন৷ কিন্তু ভয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি৷

ঘটনার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও স্যার এএফ রহমান হলের ছাত্র শামসুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, 'রাকিব ও সুমন আমাদেরই ছোট ভাই৷ তাঁরা ছাত্রদলের সমর্থক হলেও নানা কারণে দলীয় কর্মসূচিতে আসে না৷ নির্যাতন করা ছাত্রলীগের স্বভাব৷ ২০১৩ সালে আমাকেও ছাত্রলীগ ওই হল থেকে বিতাড়িত করেছিল৷ নির্যাতন করা তাঁদের স্বভাব৷ ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের এই ফ্যাসিস্ট আচরণ সাধারণ ছাত্রসমাজ খুব শিগগিরই ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দেবে৷'

তবে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের কাছে দুই ছাত্রকে মারধর ও তিন হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা আফসার হাসান৷ আর হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি তাঁর জানা নেই৷ তিনি খোঁজ নিয়ে দেখছেন৷

এ বিষয়ে জানতে স্যার এএফ রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক কে এম সাইফুল ইসলাম খানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি৷ আর হলের একজন আবাসিক শিক্ষক ঘটনাটি জানলেও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি৷