কক্সবাজারের পাহাড়-টিলা ও সৈকত রক্ষার বিষয়ে রুল

কক্সবাজারের সাতটি উপজেলার পাহাড়, টিলা, পাহাড়ি বন কাটা রোধে এবং সমুদ্র সৈকত রক্ষার বিষয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এ রুল দেন।

রুলে কক্সবাজার সদর, মহেশখালী, টেকনাফ, রামু, চকরিয়া, উখিয়া এবং পেকুয়া উপজেলার পাহাড়, পাহাড়ি বন, টিলাকে কোনো ধরনের পরিবর্তন, রূপান্তর, কাটা বা ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। সমুদ্র সৈকতের উন্নয়ন নিষেধ এলাকা ও সংরক্ষিত এলাকার দূষণকারী, বেআইনি ও অননুমোদিত স্থাপনা বা অবকাঠামো অপসারণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। উভয় ক্ষেত্রে বিবাদীদের ব্যর্থ হিসেবে কেন ঘোষণা করা হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়।

জনস্বার্থে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) গত সপ্তাহে ওই রিটটি করে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মিনহাজুল হক চৌধুরী ও সাঈদ আহমেদ কবীর। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।

রুলে কক্সবাজার পৌর এলাকায় হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট, বাজারসহ বাণিজ্যিক স্থাপনায় পরিবেশগত ছাড়পত্র ও পয়ঃশোধন প্ল্যান্ট (সিটিপি) নিশ্চিত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং সমুদ্র সৈকতে উচ্ছিষ্ট প্লাস্টিক ও পৌর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জরুরি উদ্যোগ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া কক্সবাজার পৌরসভার নাজিরারটেক থেকে টেকনাফের বদর মোকাম পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকত, সৈকতের ঝাউ গাছসমৃদ্ধ ৩০০ মিটার উন্নয়ন নিষিদ্ধ ও ৫০০ মিটার সংরক্ষিত এলাকা এবং কক্সবাজার শহর ও সৈকত উন্নয়ন পরিকল্পনার সুপারিশকৃত পর্যটন এলাকায় ‘ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের’ ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব, পরিবেশ সচিব, বিমান ও পর্যটন সচিব, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব, জনপ্রশাসন সচিব ও পানিসম্পদ সচিবসহ ২২ বিবাদীকে ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

রুলের বিষয়টি জানিয়ে আইনজীবী সাইদ আহমেদ কবীর প্রথম আলোকে বলেন, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে টেকনাফ সমুদ্র সৈকতের ১০ হাজার ৪৬৫ হেক্টর এলাকার প্রাণ বৈচিত্র্য, নির্মল জলরাশি এবং পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষার জন্য সরকার ১৯৯৯ সালে ওই এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে। ফলে এই এলাকায় স্থাপনা বা অবকাঠামো নির্মাণ করা যাবে না। প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার লাবনী পয়েন্টে সার্কিট হাউস নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে ১০ তলা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নো ডেভেলপমেন্ট জোন অর্থাৎ উন্নয়ন নিষেধ এলাকায়ও স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। অথচ এসব এলাকায়ও স্থাপনা নির্মাণ চলছে। কক্সবাজারের ওই সাতটি উপজেলায় পাহাড়, পাহাড়ি বন, টিলা কেটে স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য ব্যাপকভাবে বিনষ্ট হচ্ছে—এসব যুক্তিতে ওই রিটটি করা হয়।