কর্মীরা এখন নেতা, ভাড়া করা লোক দিয়ে পোস্টার লাগাতে হয়: কাদের

খুলনায় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে বক্তব্য দেন ওবায়দুল কাদের। সার্কিট হাউস মাঠ, খুলনা, ১০ ডিসেম্বর। ছবি: সাদ্দাম হোসেন
খুলনায় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে বক্তব্য দেন ওবায়দুল কাদের। সার্কিট হাউস মাঠ, খুলনা, ১০ ডিসেম্বর। ছবি: সাদ্দাম হোসেন

‘মঞ্চ যত বাড়ছে, নেতা তত বাড়ছে। নেতা যত বাড়ছে, কর্মী তত কমছে। এখন আর পোস্টার-ব্যানার লাগাতে কর্মী খুঁজে পাওয়া যায় না। টোকাই দিয়ে, ভাড়া করা লোক দিয়ে পোস্টার লাগাতে হয়। কর্মীরা এখন নেতা, পোস্টার লাগাবে কে?’

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে এসব কথা বলেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। খুলনায় অনুষ্ঠিত জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আজ মঙ্গলবার তিনি এসব কথা বলেন।

দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, ছবি টাঙিয়ে, বিলবোর্ড প্রদর্শন করে নেতা হওয়া যায় না। নেতা হতে হলে নেতৃত্বের যোগ্যতা, কর্মীদের ভালোবাসা অর্জন করতে হবে। দলের প্রকৃত কর্মীদের মূল্যায়ন করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কর্মীরা বাঁচলে আওয়ামী লীগ বাঁচবে। দুঃসময়ের কর্মীদের বাদ দিয়ে সুবিধাবাদীদের নেতা বানাবেন, সময় এলে এসব সুবিধাবাদী থাকবে না। দুঃসময় এলে বসন্তের কোকিলেরা হারিয়ে যাবে।

শুদ্ধি অভিযানকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ বলে মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘খুলনায় কেউ গ্রেপ্তার হচ্ছে না বলে ভাববেন না তিনি (প্রধানমন্ত্রী) কিছু জানেন না। চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, মাদক ব্যবসায়ী, দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসীরা সাবধান। কখন কে ধরা পড়বে বলা মুশকিল। আপনারা সতর্ক হয়ে যান। ভালো হয়ে যান।’

সম্মেলনে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন শেষে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন ওবায়দুল কাদের। সার্কিট হাউস মাঠ, খুলনা, ১০ ডিসেম্বর। ছবি: সাদ্দাম হোসেন
সম্মেলনে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন শেষে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন ওবায়দুল কাদের। সার্কিট হাউস মাঠ, খুলনা, ১০ ডিসেম্বর। ছবি: সাদ্দাম হোসেন

বিএনপিকে নিয়ে বিচলিত না হতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘বিএনপি পথহারা পথিকের মতো দিশেহারা। বিএনপির রাজনীতি ভুলের চোরাবালিতে আটকে গেছে। একে একে দুই উইকেট পড়ে গেছে। আরও উইকেট পড়ার অপেক্ষায়। মির্জা ফখরুল ইসলামের মুখে দুর্নীতবিরোধী কথা ভূতের মুখে রাম রাম। হাওয়া ভবন হলো দুনীতি ভবন, মানুষ বলে খাওয়া ভবন।’

খুলনা নগরের সার্কিট হাউস মাঠে একই মঞ্চে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বিশেষ অতিথি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, খালেদা জিয়ার জামিনের জন্য প্রধান বিচারপতির এজলাসে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা যে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছেন, তা নজিরবিহীন। এ ঘটনা থেকে বোঝা যায় বিএনপি কতটা অসহিষ্ণু। তিনি আরও বলেন, দল ক্ষমতায় আসায় যারা অনুপ্রবেশ করেছে, তারাই টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এসব অনুপ্রবেশকারীর হাত থেকে দলকে মুক্ত রাখতে হবে।

বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘দয়া করে সন্ত্রাসী, বিএনপি-জামায়াত এবং চাঁদাবাজদের দলে প্রশ্রয় দেবেন না। নির্বাচনে টিকে থাকতে আমাদের কোনো ভাড়া করা লোকের দরকার নেই। এরাই দলে এসে অশান্তি সৃষ্টি করে।’ ব্যক্তিগত স্বার্থে বিতর্কিতদের দলে না টানতে অনুরোধও করেন তিনি।

সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। সার্কিট হাউস মাঠ, খুলনা, ১০ ডিসেম্বর। ছবি: সাদ্দাম হোসেন
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। সার্কিট হাউস মাঠ, খুলনা, ১০ ডিসেম্বর। ছবি: সাদ্দাম হোসেন

এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় দলীয় পতাকা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য। স্বাগত বক্তব্য দেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক। সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মশিউর রহমান, খুলনা-২ আসনের সাংসদ শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েল, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মির্জা আজম, বাগেরহাট-২ আসনের সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময়, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এস এম কামাল হোসেন, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ।