মানবাধিকার শুনলেই রাষ্ট্রের মেজাজ বিগড়ে যায় কেন: সুলতানা কামাল

বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে একডো আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সুলতানা কামাল। সিলেট, ১০ ডিসেম্বর। ছবি: আনিস মাহমুদ
বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে একডো আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সুলতানা কামাল। সিলেট, ১০ ডিসেম্বর। ছবি: আনিস মাহমুদ

মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল প্রশ্ন রেখে বলেন, মানবাধিকার কিংবা মানবাধিকারকর্মী শুনলেই রাষ্ট্রের মেজাজ বিগড়ে যায় কেন। তিনি এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে নতুন প্রজন্মের মানবাধিকারকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে সিলেট নগরের একটি রেস্তোরাঁয় একসভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘এথনিক কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন’ (একডো)। সুলতানা কামাল এতে মূল আলোচক ছিলেন।

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুলতানা কামাল বলেন, ‘মানবাধিকার বলতে কী বোঝায়, সেটা নিয়েও কিন্তু আমাদের নিজেদের মধ্যে একটা অস্বচ্ছ ঝামেলা রয়েছে। সব মানবাধিকার লঙ্ঘনই অপরাধ। মানবাধিকার কিংবা মানবাধিকারকর্মী শুনলেই রাষ্ট্রের মেজাজ বিগড়ে যায় কেন? তাদের (রাষ্ট্রের) কেন মনে হয়, এঁরা (মানবাধিকারকর্মী) রাষ্ট্রবিরোধী? তার মানে, রাষ্ট্র সম্পর্কে আমাদের পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। এসব নিয়ে নতুন প্রজন্মকে ভাবতে হবে।’

রাষ্ট্র ও সরকার দুটি ভিন্ন জিনিস উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের বোঝানো হয়, রাষ্ট্র আর সরকার এক। রাষ্ট্র ও সরকার দুইটা ভিন্ন জিনিস। রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকে সরকার। রাষ্ট্রের মূল উপাদান হচ্ছে জনগণ। আমরা নতুন প্রজন্মের কাছে মানবাধিকার বিষয়ে খুব পরিষ্কার কিছু দিতে পারছি না।’

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘সংস্কৃতি বলতে শুধু মাত্র নাচ-গান-নাটক-আবৃত্তি ইত্যাদি চিন্তার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখি। সংস্কৃতি একটি মানুষ কিংবা জাতির প্রকাশভঙ্গি, একটি জাতির দৈনন্দিন জীবনযাপনের ধারা, সামাজিক জীবনের ধারা। তাই মানবাধিকার আমাদের সংস্কৃতিরই একটি অংশ।’

বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এ মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন একডোর নির্বাহী পরিচালক লক্ষ্মীকান্ত সিংহ। সভায় সিলেটের প্রবীণ রাজনীতিবিদ বেদানন্দ ভট্টাচার্য, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম, ব্লাস্ট সিলেটের সমন্বয়ক ইরফানুজ্জামান চৌধুরী, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী, ওয়ার্কার্স পার্টি সিলেট জেলা সভাপতি সিকান্দর আলীসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ অংশ নেন।

এদিকে, আজ সিলেটে বিভিন্ন সংগঠন পৃথক পৃথক কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালন করে। সকালে ক্যাম্পাসে শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে দিবসটি উদ্‌যাপন করে নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (এনইইউবি) ল স্টুডেন্টস ফোরাম। একই ধরনের কর্মসূচি পালন করে ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস ক্রাইম রিপোর্টার্স ফাউন্ডেশন সিলেট বিভাগীয় কমিটি। ‘মানবাধিকার সুরক্ষায় তারুণ্যের অভিযাত্রা’ স্লোগানে গোল্ডেন বাংলা ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠন শোভাযাত্রা করে। ইসলামি যুব আন্দোলন সিলেট জেলা শাখা বিকেলে অধিকারবঞ্চিত মানুষের মধ্যে সিলেট রেলস্টেশনে শীতবস্ত্র বিতরণ করে।