মাগুরায় টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রিতে ডিলারদের অনাগ্রহ

কম দামে টিসিবির পেঁয়াজ কিনতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে লম্বা লাইন ধরেছেন ক্রেতারা। ছবি: কাজী আশিক রহমান
কম দামে টিসিবির পেঁয়াজ কিনতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে লম্বা লাইন ধরেছেন ক্রেতারা। ছবি: কাজী আশিক রহমান

ঘড়ির কাটা বেলা ১টা ছুঁই ছুঁই। মঙ্গলবার দুপুরে মাগুরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে নারী-পুরুষের আলাদা দুটি লাইন। সবাই অপেক্ষা করছেন ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পেঁয়াজ কেনার জন্য। সকাল ৯টা থেকে লাইনে দাঁড়ানো গৃহিণী সেলিনা আক্তার। এক কেজি পেঁয়াজের জন্য এতক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার কারণ জানতে চাইলে সেলিনা বললেন, দাঁড়িয়ে না থেকে উপায় কি? এক কেজি পেঁয়াজ পেলেও তো লাভ। বাজারের পেঁয়াজের যে দাম, তা তো কেনার উপায় নেই।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত সপ্তাহ থেকে মাগুরায় টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রি শুরু হয়েছে। কম দামে পেঁয়াজ পাওয়ার আশায় প্রতিদিনই লাইন ধরছেন অসংখ্য মানুষ। কিন্তু টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না অধিকাংশ ডিলার। যে কারণে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের।

টিসিবির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাগুরার চার উপজেলায় টিসিবির অনুমোদিত ডিলার আছেন ১৪ জন। তাঁদের মধ্যে সদর উপজেলার মাত্র দুজন ডিলার পেঁয়াজ তুলেছেন, যা ট্রাকে করে বিক্রি করা হচ্ছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে। টিসিবি বলছে, বিক্রি করার মতো পর্যাপ্ত পেঁয়াজ তাদের কাছে আছে। কিন্তু পেঁয়াজ তোলার প্রতি আগ্রহ নেই ডিলারদের।

টিসিবির পণ্য বিক্রিতে অনাগ্রহের কারণ জানতে পাঁচজন ডিলারের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁরা জানান, টিসিবির পণ্য বিক্রি করে যে লাভ হয় তার চেয়ে ঝামেলা পোহাতে হয় বেশি। পণ্যের মান নিয়েও প্রশ্ন থাকে অনেক সময়। তা ছাড়া এটি যেহেতু নিয়মিত কার্যক্রম নয়, তাই অনেক ব্যবসায়ীর পুঁজির সংকট থাকে।

টিসিবির পেঁয়াজ তুলতে আগ্রহী হচ্ছেন না নিবন্ধিত ডিলাররা। যে কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। ছবি: কাজী আশিক রহমান
টিসিবির পেঁয়াজ তুলতে আগ্রহী হচ্ছেন না নিবন্ধিত ডিলাররা। যে কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। ছবি: কাজী আশিক রহমান

মাগুরায় যে দুটি প্রতিষ্ঠান পেঁয়াজ এনেছে, তাদের একটি মেসার্স আসাদ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. আসাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই পেঁয়াজ বিক্রি করতে গিয়ে আমার অন্তত ২০ হাজার টাকা লোকসান হবে। এই আট টন পেঁয়াজ বিক্রি করতে গিয়ে তিন দিন একটা ট্রাক বসে আছে। আমিসহ ১০ জন শ্রমিক কাজ করছি।’ এ ছাড়া আট টন পেঁয়াজের মধ্যে প্রায় পাঁচ শ কেজি পচা বলে দাবি করেন তিনি।

চলতি সপ্তাহের শুরু থেকে উপজেলা পর্যায়েও পেঁয়াজ দেওয়া শুরু করেছে টিসিবি। তবে মাগুরা সদরের দুই ডিলার ছাড়া অন্য তিন উপজেলার কোনো ব্যবসায়ী এখনো পেঁয়াজ তোলেন নি। এতে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলার বাসিন্দারা। এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলার সাচিলাপুর বাজারের মেসার্স তারেক অ্যান্ড ব্রাদার্সের মালিক এএইচএম আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, টিসিবির পণ্য বিক্রি করে কোনো ব্যবসায়ীর লাভ হয় না। এ কারণে জেনে বুঝে কোনো ব্যবসায়ী পণ্য তুলতে চান না। তা ছাড়া তাদের কার্যক্রমও নিয়মিত নয়। তাই পণ্য কেনার পুঁজি থাকে না। পণ্যের মান ঠিক রেখে কমিশন বাড়ালে আর কার্যক্রম নিয়মিত করলে ডিলাররা পণ্য তুলতে আগ্রহী হবে বলে মনে করেন ওই ব্যবসায়ী।

গত বছর রমজানের সময়ও বেশির ভাগ ডিলার পণ্য তোলেন নি। জেলা প্রশাসন বলছে, পেঁয়াজ এনে বিক্রির জন্য ডিলারদের বিভিন্ন ভাবে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। মাগুরা জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) রাজীব চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সাতজন ডিলারকে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল যে তাঁরা যদি পেঁয়াজ না আনে, তাহলে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। এর মধ্যে দুজন পেঁয়াজ এনেছেন। বাকিরা বলেছেন লাইসেন্স বাতিল হলেও তাদের উপায় নেই। পেঁয়াজ বিক্রি তদারকির জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি পাঁচ ছয়জন পুলিশ নিয়োজিত রয়েছেন বলে জানান তিনি।

টিসিবি'র খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কার্যনির্বাহী মো. রবিউল মোর্শেদ প্রথম আলোকে বলেন, ডিলাররা প্রতি কেজি পেঁয়াজ পাচ্ছেন ৩৮.৫০ টাকা করে। সেই পেঁয়াজ তাঁরা বিক্রি করছেন ৪৫ টাকায়। প্রতি কেজিতে সাড়ে ছয় টাকা কমিশনেও তাঁদের লাভ হয় না, এটা অবিশ্বাস্য। আর পচা পেঁয়াজের যে হিসাব তাঁরা দিচ্ছেন সেটাও সঠিক নয়। সাত-আট টন পেঁয়াজের মধ্যে সর্বোচ্চ এক শ কেজি পচা থাকতে পারে। ভবিষ্যতে যারা পণ্য বিক্রিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করবে তাঁদের লাইসেন্স বাতিল করে নতুন ডিলার নিয়োগ করা হবে বলেও জানান তিনি।