দেশে সহিংসতা কমলেও উগ্রবাদের চর্চা বেড়েছে

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৬ সালের তুলনায় এখন দেশে জঙ্গিগোষ্ঠীর সহিংস কার্যক্রম ৯০ ভাগ কমে এসেছে। কিন্তু উগ্রবাদের চর্চা বেড়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ।

গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় উগ্রবাদবিরোধী জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিনে সহিংস জঙ্গিবাদ দমনের একটি খসড়া কৌশলপত্র উপস্থাপনের সময় এ তথ্য দেন সিটিটিসির উপকমিশনার সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ২০১৬ সালে দেশে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর দাওয়াতি শাখার সদস্যসংখ্যা ছিল সাড়ে ৫০০। এই সংখ্যা এখন তিন হাজারে পৌঁছেছে। জঙ্গিবাদে যুক্ত ব্যক্তিদের ৫৬ শতাংশই বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া। তাঁদের ৮২ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়।

তবে গত তিন বছরে দেশে উগ্রবাদের চর্চা কেন সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়ে গেল, সে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। সহিংস জঙ্গিবাদ দমনের কৌশলপত্র উপস্থাপনা শেষে সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোর প্রশ্নের জবাবে বলেন, বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীগুলোকে মোটের ওপর চার ভাগে আগে ভাগ করা যেত। বামপন্থী, ডানপন্থী, মধ্য বামপন্থী ও মধ্য ডানপন্থী। পরের দিকে কট্টর মৌলবাদী ও নাস্তিক—এ দুটি পক্ষ যুক্ত হয়। ইদানীং দেখা যাচ্ছে মধ্য বাম, মধ্য ডান ও ডানপন্থীদের বড় অংশ কট্টর পন্থার দিকে ঝুঁকছে।

সিটিটিসি যে কৌশলপত্রটি তৈরি করেছে, সেটি সংশ্লিষ্ট ১৬টি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এর বাইরেও এ–সম্পর্কিত সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে কৌশলপত্রটি চূড়ান্ত করা হবে। এতে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে সমাজের সবাই; ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠী; উগ্রবাদের পথে পা বাড়ানো মানুষ, যারা আইন অমান্য করছে এবং কারাবন্দী বা কারাভোগ করে বেরিয়ে আসা লোকজনের কথা মাথায় রেখে প্রতিরোধমূলক কর্মসূচি হাতে নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

ঢাকায় বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত এ সম্মেলনে গতকাল প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি সন্তানদের সব সময় ভালো কাজে ব্যস্ত রাখার জন্য প্রত্যেক পরিবারের প্রতি অনুরোধ করেছেন। এতে করে ছেলেমেয়েরা জঙ্গিবাদে জড়াবে না বলে মনে করেন তিনি।

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী কারাগারে জঙ্গিবাদবিরোধী কর্মসূচি জোরদার করার দরকার বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, জঙ্গিদের ধরা, চিহ্নিত করা, কারাগারে পাঠানো, মামলা করাসহ বিভিন্ন কাজে যতটা তৎপরতা আছে; কারাগারে জঙ্গিবাদবিরোধী কার্যক্রম ততটা নেই। যারা কারাগার থেকে বেরিয়ে আসছে, তাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগের কথাও বলেন তিনি।

>

সিটিটিসি বলছে, ২০১৬ সালে দেশে জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্য ছিল সাড়ে ৫০০। তা এখন তিন হাজারে পৌঁছেছে।

জঙ্গিবাদবিরোধী প্রচারে দক্ষতার ঘাটতির কথা বলেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, তিনি এর আগে অ্যান্টিটেররিজম ইউনিটে কাজ করেছেন। তিনি দেখেছেন, জঙ্গিবাদে যারা জড়াচ্ছে, তাদের বড় অংশই আহলে হাদিস সম্প্রদায়ের। তাদের মাথায় যারা উগ্রবাদী মতবাদ ঢোকাচ্ছে, তাদের শনাক্ত করা দরকার। কিন্তু কাউকে উগ্র মতবাদ থেকে বের করে আনার জন্য যে ধর্মীয় জ্ঞান দরকার, তা পুলিশ বা কারা কর্তৃপক্ষের নেই।

সম্মেলনে মাঠপর্যায়ে কর্মরত বেসরকারি সংস্থাগুলো অভিজ্ঞতা বিনিময় করে। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুটি বিষয় আলোচিত হয়নি। একটি হলো এ দেশের জঙ্গিদের আন্তর্জাতিক যোগাযোগ, অপরটি হলো সাংঘর্ষিক রাজনীতি। তাঁর মতে, সাংঘর্ষিক রাজনীতিতে চরমপন্থার উদ্ভব হয়, কখনো কখনো তাতে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা থাকে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশে এমনটা হওয়ার কথা ছিল না।