বগুড়ায় স্বাস্থ্যসেবায় অচলাবস্থা

সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়ে একসঙ্গে ৯ জন চিকিৎসক অন্যত্র বদলি হয়ে যাওয়ায় ২৫০ শয্যার বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে শল্য বিভাগ চিকিৎসকশূন্য হয়ে পড়েছে। এতে ওই হাসপাতালে ১০ দিন ধরে সব ধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধ রয়েছে। ফলে অস্ত্রোপচারের রোগীরা চিকিৎসা নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন। শূন্য হয়ে পড়েছে চক্ষু ও শিশু বিভাগ।

অন্যদিকে একসঙ্গে ১৫ চিকিৎসক বদলি হয়ে যাওয়ায় চিকিৎসাসেবা নিয়ে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে জেলার সরকারি ১৮টি হাসপাতালে। শল্য চিকিৎসক এবং অবেদনবিদ পদে চিকিৎসক না থাকায় অস্ত্রোপচার বন্ধ রয়েছে কাহালু ও শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী ১৯৬৪ সালে বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া এলাকায় এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৮ সালে এই হাসপাতাল ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। বগুড়ায় জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ চালুর প্রথম দিকে কলেজটির সঙ্গে এই হাসপাতাল সংযুক্ত ছিল। এই হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ থেকে ৩২০ রোগী ভর্তি থাকে। অন্তর্বিভাগ ও বহির্বিভাগ মিলে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ রোগী চিকিৎসা নেন এখানে। হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৭৩টি। বর্তমানে শূন্য পদ ৩৩টি। সর্বশেষ গত ৩০ নভেম্বর জুনিয়র কনসালট্যান্ট থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়ে একসঙ্গে আট চিকিৎসক বদলি নিয়ে চলে গেছেন অন্যত্র। এখন জুনিয়র কনসালট্যান্টের ১০টি পদই শূন্য। এ ছাড়া সিনিয়র কনসালট্যান্টের ১১টি পদের মধ্যে ২টি পদ শূন্য রয়েছে। 

আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তার দুটি পদ, আবাসিক ফিজিশিয়ান এবং আবাসিক সার্জনের দুটি পদের সব কটি, সহকারী রেজিস্ট্রারের ১৬টি পদের ৭টি, ১৪টি চিকিৎসা কর্মকর্তার মধ্যে ১১টি, চিকিৎসা কর্মকর্তার (ব্লাড ব্যাংক) একমাত্র পদ, অ্যানেসথেটিস্ট একমাত্র পদ, রেডিওলজিস্টের একমাত্র পদ, ইমারজেন্সি চিকিৎসা কর্মকর্তার ৮টি পদের ৬টি, প্যাথলজিস্টের দুটি পদ, ডেন্টাল সার্জনের একটি এবং ইউনানি চিকিৎসা কর্মকর্তার একটি পদ শূন্য রয়েছে। বর্তমানে চিকিৎসক না থাকায় শল্য বিভাগ, চক্ষু বিভাগ এবং শিশু বিভাগের সেবাদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

গত রোববার অ্যাপেনডিকসের ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন গাবতলীর দুর্গাহাটা গ্রামের শহিদুল ইসলাম। দুদিন ভর্তি থাকার পর সার্জারি চিকিৎসক না থাকায় তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। শহিদুল বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসক নেই। অপারেশন বন্ধ। বহু রোগী ফেরত যাচ্ছেন।

মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এ টি এম নুরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, একসঙ্গে আটজন চিকিৎসক পদোন্নতি পেয়ে চলে যাওয়ায় চিকিৎসক শূন্য হয়ে পড়ায় সার্জারি বিভাগে অস্ত্রোপচার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। অবেদনবিদ পদ শূন্য হলেও একজন চিকিৎসা কর্মকর্তাকে দিয়ে এই কাজ চালিয়ে সীমিতসংখ্যক প্রসূতি মায়ের অস্ত্রোপচার কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। এ ছাড়া শিশু ও চক্ষু বিভাগে চিকিৎসক না থাকার কারণে সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

একসঙ্গে ১৫ জন চিকিৎসক সহকারী অধ্যাপক পদোন্নতি পেয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ায় অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে বগুড়ার ১৮টি সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে। এর মধ্যে শল্য চিকিৎসক না থাকায় কাহালু ও শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অস্ত্রোপচার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়েছে।

জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে জানা গেছে, জেলায় ১৮টি হাসপাতালে ৩৩০টি চিকিৎসক পদ রয়েছে। এর মধ্যে ২৪১টি পদ শূন্য হয়ে পড়েছে। বর্তমানে কর্মরত চিকিৎসকের সংখ্যা মাত্র ৮৯। সিংহভাগ পদ শূন্য থাকায় ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা কার্যক্রম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিভিল সার্জনের নিয়ন্ত্রণাধীন ১২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, তিনটি ২০ শয্যার বিশেষায়িত হাসপাতাল, একটি বক্ষব্যাধি ক্লিনিক, একটি বক্ষব্যাধি হাসপাতাল এবং একটি স্কুল হেলথ ক্লিনিক রয়েছে। এসব হাসপাতাল-ক্লিনিকে জুনিয়র কনসালট্যান্ট পদ থেকে ১৫ জন চিকিৎসক পদোন্নতি পাওয়ায় ৩০ নভেম্বর থেকে এসব পদ শূন্য। এ ছাড়া জেলায় আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তার (আরএমও) ১৪টি পদের সব কটিই শূন্য। ২০ শয্যার সান্তাহার, নন্দীগ্রাম ও আলিয়ারহাট বিশেষায়িত হাসপাতালে ৬ জন করে চিকিৎসকের পদ থাকলেও রয়েছেন মাত্র ১ জন করে। বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, বক্ষব্যাধি ক্লিনিক এবং স্কুল হেলথ ক্লিনিকে দুটি করে পদ থাকলেও চলছে একজন করে চিকিৎসক দিয়ে। 

 জানতে চাইলে বগুড়ার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ১৫ জন জুনিয়র কনসালট্যান্ট একসঙ্গে চলে যাওয়ায় চিকিৎসকশূন্যতার কারণে কাহালু ও শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অস্ত্রোপচার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। সদ্য নিয়োগ পাওয়া বেশ কিছু চিকিৎসককে বগুড়ায় পদায়ন করা হয়েছে। তাঁরা এখনো যোগদান করেননি। যোগদান করলে সংকট কিছুটা কেটে যাবে।