গণহত্যার বিচার চায় রোহিঙ্গারা

নেদারল্যান্ডসে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে রোহিঙ্গাদের গণহত্যা মামলায় ন্যায়বিচারের দাবিতে রোহিঙ্গাদের মানববন্ধন। গতকাল দুপুরে কক্সবাজারের উখিয়ার জামতলী শিবিরে।  প্রথম আলো
নেদারল্যান্ডসে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে রোহিঙ্গাদের গণহত্যা মামলায় ন্যায়বিচারের দাবিতে রোহিঙ্গাদের মানববন্ধন। গতকাল দুপুরে কক্সবাজারের উখিয়ার জামতলী শিবিরে। প্রথম আলো

নেদারল্যান্ডসের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) রোহিঙ্গাদের গণহত্যা মামলার শুনানি শুরু হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছে কক্সবাজারে বিভিন্ন শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে উখিয়ার জামতলী শিবিরের কয়েক শ রোহিঙ্গা খোলা মাঠে সংক্ষিপ্ত মানববন্ধন ও সমাবেশ করে গণহত্যার জন্য মিয়ানমারের উপযুক্ত বিচার দাবি করে। এ সময় তারা রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের পক্ষে তাদের সমর্থন ব্যক্ত করে।

সূত্র জানায়, সকাল থেকে রোহিঙ্গারা টেকনাফ-উখিয়ার বিভিন্ন শিবিরের অভ্যন্তরে মিয়ানমারকে বর্জন ও সে দেশের নেত্রী অং সান সু চির শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করার চেষ্টা করে। কিন্তু প্রশাসনিক অনুমতি না পাওয়ায় শিবিরে রোহিঙ্গারা মিছিল ও সমাবেশ করতে পারেনি।

রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, মিয়ানমারকে বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে জার্মানভিত্তিক ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশনসহ ১০টি দেশের ৩০ মানবাধিকারকর্মী, শিক্ষক ও পেশাজীবী সংগঠন। তারা মিয়ানমারকে বিশ্বব্যাপী বর্জনের প্রচারে নেমেছে। 

এ প্রসঙ্গে ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’–এর (এআরএসপিএইচ) জেনারেল সেক্রেটারি সৈয়দ উল্লাহ বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার শুরু হয়েছে। এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে আমরা আজ (মঙ্গলবার) রোহিঙ্গা শিবিরে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল-সমাবেশ করার জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমতি চেয়েছিলাম। কিন্তু অনুমতি পাওয়া যায়নি। তবে দুপুরের নামাজের পর কিছু রোহিঙ্গা জামতলী শিবিরের কাছে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে।’

রোহিঙ্গাদের মানববন্ধন

বেলা দেড়টার দিকে কয়েক শ রোহিঙ্গা জামতলী শিবিরের বাইরে খোলা মাঠে জড়ো হয়ে মানববন্ধন করে। এতে গণহত্যার দায়ে মিয়ানমারের বিচার ও অং সান সু চির শাস্তি দাবি করে তারা। এ সময় বিভিন্ন দাবি–সংবলিত ফেস্টুন ব্যবহার করা হয়। স্লোগান ছিল ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, উই স্ট্যান্ড উইথ বাংলাদেশ’। 

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরে মিছিল-সমাবেশের খবর তাঁর জানা নেই। এ জন্য কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে নেদারল্যান্ডসে বিচার নিয়ে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়, সেদিকে পুলিশের সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে।

কক্সবাজারের শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মাহাবুব আলম তালুকদার বলেন, আইসিজেতে রোহিঙ্গাদের গণহত্যা মামলার বিচার নিয়ে রোহিঙ্গা শিবিরে মিছিল-সমাবেশের অনুমতি কাউকে দেওয়া হয়নি। 

সু চির বিচার চায় রোহিঙ্গারা

গতকাল উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, জামতলী, মধুরছড়া, টেকনাফের লেদা, মোছনি, নয়াপাড়া, জাদিমোরা, শালবাগান শিবির ঘুরে অনেকের মুখে আন্তর্জাতিক আদালতের বিচার নিয়ে আলোচনা শোনা যায়। বালুখালী শিবিরের বাসিন্দা কেফায়েত উল্লাহ বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আদালত থেকে আমরা ন্যায়বিচার পাব আশা করছি। আমরা দ্রুত রাখাইনে ফিরতে চাই।’

জামতলী শিবিরের আবদুল মাবুদ ও সখিনা খাতুন বলেন, সু চির নীরবতায় রাখাইনে ২০১৭ সালের আগস্টে সেখানকার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন চালিয়েছিল। এর বিচার হওয়া উচিত।

রোহিঙ্গা তরুণী আরেফা খাতুন বলেন, ‘আমরা গাম্বিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞ। রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ে তারা মাঠে নেমেছে।’

কুতুপালং শিবিরের রোহিঙ্গা মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘দুই বছর ধরে আমরা দাবি জানিয়ে আসছি—রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিতে হবে, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের স্বাধীনভাবে চলাফেরার সুযোগ ও নিরাপত্তা দিতে হবে। তাহলেই রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফিরে যাবে। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আদালতের কাছে যুগান্তকারী রায় প্রত্যাশা করি আমরা।’