প্রকাশ্য আদালতে দায় স্বীকার করে নিন

>

রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার দাবিতে দ্য হেগের পিস প্যালেসের সামনে বিক্ষোভকারীদের অবস্থান। রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার তিন দিনের শুনানি শুরুর দিনে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের কাছে মিয়ানমারকে ‘গণহত্যা বন্ধের’ আদেশ চেয়েছে গাম্বিয়া।  এএফপি
রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার দাবিতে দ্য হেগের পিস প্যালেসের সামনে বিক্ষোভকারীদের অবস্থান। রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার তিন দিনের শুনানি শুরুর দিনে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের কাছে মিয়ানমারকে ‘গণহত্যা বন্ধের’ আদেশ চেয়েছে গাম্বিয়া। এএফপি

রাখাইনে যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, সেনা কমান্ডারদের পাশাপাশি তার দায় সু চির ওপরও বর্তায়।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের দায় প্রকাশ্য আদালতে স্বীকার করে নেওয়ার জন্য দেশটির স্টেট কাউন্সেলর সুচির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী আটজন। তাঁরা বলেছেন, রাখাইনে যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, সেনা কমান্ডারদের পাশাপাশি তার দায় সু চির ওপরও বর্তায়।

গত সোমবার এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছেন আট নোবেল বিজয়ী। নোবেল ওমেন’স ইনিশিয়েটিভের ওয়েবসাইটে বিবৃতিটি প্রকাশিত হয়েছে। ইরানের শিরিন এবাদি (২০০৩), লাইবেরিয়ার লেমাহ গবোই (২০১১), ইয়েমেনের তাওয়াক্কুল কারমান (২০১১), উত্তর আয়ারল্যান্ডের মাইরেড মাগুয়ের (১৯৭৬), গুয়াতেমালার রিগোবার্টা মেনচু তুম (১৯৯২), যুক্তরাষ্ট্রের জোডি উইলিয়ামস (১৯৯৭), ভারতের কৈলাস সত্যার্থী (২০১৪) ও ড. মুহম্মদ ইউনূস (২০০৬)।

বিবৃতিতে নোবেলজয়ীরা বলেন, ‘শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে আমরা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যাসহ সব অপরাধ প্রকাশ্যে স্বীকার করে নেওয়ার জন্য শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চির প্রতি আহ্বান জানাই।’

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের গণহত্যার শুনানি গতকাল মঙ্গলবার শুরু হয়েছে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে)। মিয়ানমারের গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড বন্ধে জাতিসংঘকে অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে দেশটির বিরুদ্ধে মামলাটি করেছে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। চলতি বছরের নভেম্বরে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ ওই আদালতে মামলাটি করা হয়। মামলায় মিয়ানমারে পক্ষে লড়ছেন স্বৈরশাসনের অধীনে দীর্ঘদিন গৃহবন্দী থাকা সু চি নিজেই।

রোহিঙ্গা নিপীড়নের বিষয়ে সু চির অবস্থানে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নোবেলজয়ীরা। বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, ‘আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে এসব অপরাধের নিন্দা জানানোর পরিবর্তে অং সান সু চি এ রকম নৃশংসতা সরাসরি অস্বীকার করে আসছেন।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার জন্য দায়ী মিয়ানমারকে জবাবদিহি করতে এবং এসব অপরাধের শিকার ব্যক্তিদের বিচার পাওয়ার পথ সুগম করতে এ পদক্ষেপ গ্রহণের (মামলা করার) জন্য আমরা গাম্বিয়াকে সাধুবাদ জানাই।’

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংস অভিযান চালায় সেনাবাহিনী। এই অভিযানের মুখে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেন সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। বর্তমানে বাংলাদেশের কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে সব মিলিয়ে ১০ লাখের মতো রোহিঙ্গা বসবাস করছেন। তাঁদের প্রত্যাবাসন কার্যক্রমও সফলতার মুখ দেখেনি। রোহিঙ্গাদের আশঙ্কা, মিয়ানমারে ফিরে গেলে তাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নেই। তাই তারা সেখানে ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছে।

নোবেলজয়ীরা বলেন, ‘শান্তির মানুষ হিসেবে আমরা রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের নিয়মতান্ত্রিক বৈষম্য মোকাবিলা ও রোহিঙ্গাদের জাতীয়তা, ভূমির মালিকানা, আন্দোলনের স্বাধীনতা এবং অন্যান্য মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য অং সান সু চির প্রতি আহ্বান জানাই। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের প্রতি তাঁর ব্যক্তিগত ও নৈতিক দায়িত্ববোধ পালন এবং তাঁর অধীনে সংঘটিত গণহত্যার স্বীকৃতি ও নিন্দা জানাতে অনুরোধ করছি।’

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইয়েমেনের তাওয়াক্কুল কারমান, শিরিন এবাদি ও মাইরেড মাগুয়ের কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন। তাঁরা ১০০–র বেশি রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকার নেন। তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া নিদারুণ কাহিনি শোনেন তাঁরা। এ বিষয়ে কথা বলতে তাঁরা অং সান সু চির সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য ভিসাপ্রাপ্তির অনুরোধ করেন। কিন্তু মিয়ানমার তাঁদের ভিসা দেয়নি।