নাগরিকত্ব বিল ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থানকে দুর্বল করবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। ছবি: বাসস
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। ছবি: বাসস

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ভারত ঐতিহাসিকভাবে একটি সহনশীল দেশ, যারা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে। সেখান থেকে পদস্খলন হলে ভারতের ঐতিহাসিক অবস্থান দুর্বল হবে।

আজ বুধবার দুপুরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর দপ্তরে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট আল মিলারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এই সাক্ষাৎ শেষে ভারতের নাগরিকত্ব বিল পাসের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি এ কথা বলেন।

এ কে আব্দুল মোমেন জানান, মার্কিন রাষ্ট্রদূত তাঁর সঙ্গে আলোচনায় নাগরিকত্ব বিলের প্রসঙ্গটি তুলেছেন। যুক্তরাষ্ট্র ধর্মীয় স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। তাই ভারতে ধর্মভিত্তিক যে রায় হয়েছে, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যথেষ্ট ক্রিটিক্যাল (সমালোচনামুখর)। এটা তাদের অবস্থানকে দুর্বল করেছে।

ভারতীয় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় গত সোমবার নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হয়েছে। ওই বিল অনুযায়ী, নাগরিকত্ব তাঁদেরই দেওয়া হবে, যাঁরা বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ভারতে চলে এসেছেন। আগের আইন অনুযায়ী ১২ বছর ভারতে থাকলে কেউ নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকারী হতেন। নতুন সংশোধনী অনুযায়ী সেই সময়সীমা কমিয়ে ৬ বছর করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক কমিশন (ইউএসসিআইএরএফ) ওই দিনই এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিলটিতে ধর্মীয় মানদণ্ড বেঁধে দেওয়াটা বিপজ্জনক।

ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাসের বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান কী তা জানতে চাইলে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘ভারত ঐতিহাসিকভাবে একটা সহনশীল দেশ, যারা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে। সেখান থেকে পদস্খলন হলে ভারতের ঐতিহাসিক অবস্থান দুর্বল হবে বলে আমি মনে করি। আমি মনে করি যে এ নিয়ে কতগুলো কথা উঠেছে, এর অনেকগুলো সত্যি নয়। আমাদের দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি অত্যন্ত বেশি। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। আমাদের দেশে অন্য ধর্মের লোক কেউ নিপীড়িত নয়। উন্নয়নের মহাসড়কে আমরা যাত্রা শুরু করেছি। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমরা সবাইকে একই দৃষ্টিতে দেখি। বাংলাদেশে আমরা কে কোন ধর্মের, সেটা নিয়ে বিচার করি না। বিচার করি সে বাংলাদেশের নাগরিক। আমরা সব ধর্মের লোককে অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে দেখি। যেটা উনারা তথ্য দিয়েছেন, বাংলাদেশে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, কথাটা সত্যি নয়। যাঁরা তথ্য নিয়েছেন, ওনাদের যাঁরা বুঝিয়েছেন, তাঁরা সত্যি কথা বলেননি।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ। বর্তমানে আমাদের মধ্যে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। স্বাভাবিকভাবে আমাদের জনগণ আশা করে, ভারত এমন কিছু করবে না, যার ফলে এই সম্পর্ক যাতে কোনো ধরনের দুশ্চিন্তা বা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।’