কেরানীগঞ্জে আগুনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৩

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের প্লাস্টিক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা ১৩–তে পৌঁছেছে। তাঁদের মধ্য একজন ঘটনাস্থলে আর ১২ জন হাসপাতালে মারা গেছেন। চিকিৎসকেরা বলছেন, দগ্ধ লোকজনের মধ্যে অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক।

গতকাল বুধবার রাত থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অগ্নিদগ্ধ লোকজনের মৃত্যু ঘটে। এখন লাশ নেওয়ার অপেক্ষায় স্বজনেরা মর্গের সামনে বসে আছেন।

অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ৮ জন ভর্তি রয়েছেন। শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি আছেন ১০ জন।

জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়কারী অধ্যাপক সামন্তলাল সেন আজ সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। ইনস্টিটিউটে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, কেরানীগঞ্জের প্লাস্টিক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় হাসপাতালে ভর্তি কারও অবস্থা আশঙ্কামুক্ত নয়। সবার শ্বাসনালি পোড়া। চাকরিজীবনে এমন ভয়াবহ পোড়া রোগী দেখেননি বলেও জানান তিনি।

গতকাল বিকেলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়ার হিজলতলা এলাকার প্রাইম প্লেট অ্যান্ড প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের কারখানায় ভয়াবহ আগুন লাগে। এতে গতকালই ১ জন নিহত ও ৩৪ জন দগ্ধ হন।

আগুন লাগার কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। কারখানার শ্রমিকদের ধারণা, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে আগুন লাগতে পারে। অগ্নিকাণ্ডের পর কথা বলার জন্য মালিকপক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি।

ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের উপসহকারী পরিচালক কাজী নজমুজ্জামান গতকাল জানান, এর আগেও কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল আগুন লাগার পর বিকেল ৪টা ২৯ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

সন্ধ্যায় দগ্ধ লোকজনকে দেখতে হাসপাতালে যান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এবং কেরানীগঞ্জের সাংসদ নসরুল হামিদ। এ সময় তিনি অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, কারখানাটির অনুমোদন ছিল না বলে জানা গেছে। নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে থাকা কারখানাগুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে তিনি স্থানীয় সরকার ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে বলেছিলেন। কিন্তু কারখানাগুলো সরানো যায়নি।

এর আগে চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় আগুন লেগে ৭০ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর টাম্পাকো প্যাকেজিং ফ্যাক্টরিতে আগুনে নিহত হন ২৪ জন।

জানা গেছে, কারখানাটিতে বিরিয়ানির প্লেট, প্যাকেট ও একবার ব্যবহার উপযোগী (ওয়ান টাইম ইউস) গ্লাস তৈরি করা হয়। পুরান ঢাকার ওয়ারী এলাকার ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম কারখানাটির মালিক। কারখানায় কর্মীর সংখ্যা প্রায় ২০০। যে ইউনিটে আগুন লাগে, সেখানে ৮০ জন কর্মরত ছিলেন।

শ্বাসনালি পুড়েছে ৩২ জনেরই
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের আবাসিক চিকিৎসক আ ফ ম আরিফুল ইসলাম বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে ভর্তি অগ্নিদগ্ধ লোকজনের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। প্রত্যেকের শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। ভর্তি রোগীদের অবস্থা এতই খারাপ যে তাঁরা কোনো কথাই বলতে পারছেন না।

দগ্ধ ব্যক্তিদের ১০ জনের বয়স ১৪ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত। বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, দগ্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে আলম, জিনারুল ইসলাম, ফারুক, মেহেদী ও রাজ্জাকের শরীরের শতভাগ পুড়ে গেছে। ৯০ শতাংশ পুড়েছে দুর্জয় ও সুজনের। ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত পুড়েছে ১০ জনের।