খালেদার জামিন শুনানির রায় গণভবন থেকে: ছাত্রদল

আপিল বিভাগ খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে দেওয়ার পর রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল বের করে ছাত্রদল। বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সামনে গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়। ছবি: প্রথম আলো
আপিল বিভাগ খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে দেওয়ার পর রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল বের করে ছাত্রদল। বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সামনে গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়। ছবি: প্রথম আলো

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। তবে আদালত নয়, বরং গণভবন থেকে এই রায় দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এ রায় প্রত্যাখ্যান করে সংগঠনটির নেতারা বলেছেন, ‘বিতর্কিত’ এই রায়ের পরিণতি হবে ‘ভয়াবহ’।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ আজ বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে দেন। এর প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ-মিছিল পরবর্তী সমাবেশে ছাত্রদলের নেতারা এসব কথা বলেন।

আপিল বিভাগ খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে দেওয়ার পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল বের করে ছাত্রদল। সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কয়েক শ নেতা-কর্মী মিছিলে অংশ নেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের (এসএম হল) সামনে গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়। মিছিলের পর সেখানেই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।

সমাবেশে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান বলেন, ‘আপিল বিভাগের এই রায় আমরা মানি না। দেশের আপামর ছাত্রসমাজ এ রায় প্রত্যাখ্যান করেছে। সরকার আদালতকে প্রভাবিত করে এই রায় ছিনিয়ে নিয়েছে৷ বিতর্কিত এই রায়ের পরিণতি হবে ভয়াবহ।’

জামিন না দিয়ে খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারাগারে দীর্ঘ সময় আটক রাখার ষড়যন্ত্র হচ্ছে—অভিযোগ করে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সমাবেশে বলেন, ‘এই বাকশালি সরকারের সময়ে আমরা দেখেছি, বিচারের অধিকার কেড়ে নিয়ে প্রধান বিচারপতিকে ষড়যন্ত্র করে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজের রায়টি আদালত থেকে নয়, বরং গণভবন থেকে দেওয়া হয়েছে।’

কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিন উদ্দীন রাজু, সাইফ মাহমুদ জুয়েল, সহসাংগঠনিক সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির, কেন্দ্রীয় নেতা কাজী রওনকুল ইসলাম প্রমুখ অংশ নেন।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ আজ বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে পর্যবেক্ষণও দেন। পর্যবেক্ষণে আপিল বিভাগ বলেছেন, যদি আবেদনকারী (খালেদা জিয়া) প্রয়োজনীয় সম্মতি দেন, তাহলে মেডিকেল বোর্ড দ্রুত তাঁর অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্টের (বায়োলজিক এজেন্ট) জন্য পদক্ষেপ নেবে, যা বোর্ড সুপারিশ করেছে।

গত বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়। এই সাজা বাতিল চেয়ে গত বছরের ১৮ নভেম্বর হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া। শুনানি নিয়ে গত ৩০ এপ্রিল হাইকোর্ট ওই আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে বিচারিক আদালতের দেওয়া জরিমানার আদেশ স্থগিত করেন। এ ছাড়া বিচারিক আদালতে থাকা মামলার নথি তলব করেন হাইকোর্ট। গত ২০ জুন মামলার নথি হাইকোর্টে আসার পর খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন আদালতে তুলে ধরেন তাঁর আইনজীবীরা। গত ৩১ জুলাই জামিন আবেদন খারিজ করেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্টে জামিন চেয়ে বিফল হয়ে গত ১৪ নভেম্বর আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করেন খালেদা জিয়া। এই জামিন আবেদনের শুনানিতে গত ২৮ নভেম্বর আপিল বিভাগ খালেদা জিয়ার সবশেষ স্বাস্থ্যগত অবস্থা সম্পর্কে জানাতে মেডিকেল বোর্ড গঠন করে বোর্ডের মেডিকেল রিপোর্ট ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে দাখিল করতে নির্দেশ দেন। সেদিন (৫ ডিসেম্বর) মেডিকেল প্রতিবেদন জমা না পড়ায় শুনানি পিছিয়ে ১২ ডিসেম্বর (আজ) তারিখ ধার্য করেন আদালত।