সু চি অবশিষ্ট ভাবমূর্তিটুকুও ঝুঁকিতে ফেলছেন

অং সান সু চি। ছবি: রয়টার্স
অং সান সু চি। ছবি: রয়টার্স

মার্কিন সিনেটে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট পার্টির ১০ সদস্য রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমার সেনাদের পক্ষ নেওয়ায় অং সান সু চির তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। ১০ মার্কিন সিনেটর মনে করেন, রোহিঙ্গা এবং অন্য সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যাপক নৃশংসতার জন্য অভিযুক্ত সেনাবাহিনীর পক্ষে সাফাই গেয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে নিজের যেটুকু ভাবমূর্তি আছে, সেটাও ঝুঁকিতে ফেলছেন সু চি। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন সিনেট সদস্যরা আইসিজেকে পুরোপুরি সমর্থনের জন্য মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর সু চির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, এ মাসের ১০ তারিখ মার্কিন সিনেটের ১০ সদস্য ওই চিঠি লিখেছেন। ১০ ডিসেম্বর রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে মিয়ানমারের বিচার আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে শুরু হয়েছে। এদিন মামলার বাদী গাম্বিয়া আদালতে বক্তব্য দেয়। এর পরদিন বক্তব্য দেয় মিয়ানমার।

চিঠিতে সই করেছেন মার্কিন সিনেটে রিপাবলিকান পার্টির সদস্য মার্শা ব্ল্যাকবার্ন, টড ইয়াং, ডেমোক্র্যাট পার্টির সদস্য ক্রিস ভ্যান হলেন, রিচার্ড ডারবিন, ব্রায়ান শোয়াটজ, ট্যামি বল্ডউইন, জেফ্রি মার্কলে, রবাট ক্যাসি, বেঞ্জামিন কার্ডিন ও রন ওয়াইডেন।


চিঠির শুরুতে ২০১০ সালে অন্তরীণ থেকে সু চির মুক্তি, পূর্ণাঙ্গ গণতন্ত্রের পথে উত্তরের লক্ষ্যে দেশটির ২০১৫ সালের নির্বাচন এবং একটি গণতান্ত্রিক, অংশগ্রহণমূলক ও সমৃদ্ধ মিয়ানমারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষার বিষয়গুলো উল্লেখ করেছেন।

মার্কিন সিনেটরেরা লিখেছেন, ‘আমরা এটা বুঝি, এ ধরনের উত্তরণ সহজ হয়েছে, এমন নজির খুবই কম, যখন সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ থাকে। তবে জটিলতা কোনোভাবেই অজুহাত হতে পারে না। আপনি যেভাবে ২০১৭ সালের নিষ্ঠুর ও তথাকথিত “শুদ্ধি অভিযান” নামে অভিহিত অভিযান সামাল দিয়েছেন, তা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। ওই অভিযানে হাজার হাজার রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছেন এবং ৭ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। গণহত্যা সনদ অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলায় আপনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন শুনে আমরা আরও হতাশ হয়েছি। জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান মিশন যখন মিয়ানমারের সেনাদের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যার কর্মকাণ্ডে’ অংশ নেওয়ার অভিযোগ করেছে, সে সময় সেনাবাহিনীর পক্ষে আপনার অবস্থানে আমরা উদ্বিগ্ন।’

মার্কিন সিনেটরেরা বলছেন, ‘আমরা আইসিজেকে পুরোপুরি সমর্থনের জন্য আপনার প্রতি আহ্বান জানাই। এই সহযোগিতার ক্ষেত্রে আইসিজেতে অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপ গ্রহণ কিংবা এ নিয়ে কোনো আলোচনার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত। আপনার সরকারের অবশ্যই জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্ত মিশনকে পুরোপুরি এবং অবারিতভাবে সমগ্র মিয়ানমারে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত। যাতে ওই মিশনের সদস্যরা আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে কোনো অপরাধ এবং মানবাধিকার ও নির্যাতনের অভিযোগের তদন্ত করতে পারেন।’

মার্কিন সিনেটে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান পার্টির ১০ সদস্য মনে করেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে এসে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আপনি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার সুরক্ষার সিদ্ধান্ত নিলে আমরা আপনাকে সমর্থনের জন্য তৈরি আছি। কিন্তু এটা করতে ব্যর্থ হলে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে অন্যায়ের জন্য জবাবদিহির আওতায় আনতে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক শক্তির প্রয়োগ করে যাব। মিয়ানমারকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সবার অংশগ্রহণই একমাত্র পথ।’