শুনানিতে অভিযোগ নিয়ে মুখোমুখি একই হাসপাতালের দুই কর্মকর্তা

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানিতে মঞ্চে উপস্থিত দুদকের কমিশনার (অনুসন্ধান) মোজাম্মেল হক খান ও দুদকের কর্মকর্তারা। তাঁদের সামনে দুই পাশে অভিযোগ নিয়ে পরস্পরের মুখোমুখি শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও ওই হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক। দুজনই সরকারি কর্মকর্তা। অভিযোগ, হাসপাতালের যাবতীয় কেনাকাটা ও ব্যয়সংক্রান্ত তথ্য প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে জানানো হতো না।

সদর হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইলিয়াছ হোসেন দুদকে লিখিত অভিযোগ করেন, হাসপাতালের কোনো কেনাকাটা ও ব্যয়সংক্রান্ত বিষয়ে তাঁর কোনো মতামত নেওয়া হতো না এবং তাঁকে জানানো হতো না। অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে গোপনে এ কাজ করতেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক। দুদকের গণশুনানি উপলক্ষে দুজনকেই তলব করা হয়। প্রশাসনিক কর্মকর্তার বক্তব্য উপস্থাপনের পর দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান বক্তব্য জানতে চান হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের। তত্ত্বাবধায়ক মুনির আহমেদ খান শুনানিতে বলেন, তিনি সম্প্রতি ওই হাসপাতালে যোগ দিয়েছেন। অভিযোগগুলো তাঁর আমলের নয়। তিনি বলেন, হাসপাতালের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কিছু অনিয়ম রয়েছে। যার যে দায়িত্ব, তা পালনে বাধ্য করার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন তিনি। হাসপাতালের কেনাকাটা, আয়-ব্যয়, সবকিছু স্বচ্ছতার সঙ্গে করা হবে, তিনি এমন নিশ্চয়তা দেন গণশুনানিতে।

আজ বৃহস্পতিবার শরীয়তপুর সদর উপজেলা সভাকক্ষে দুদকের এই গণশুনানি হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কমিশনার মোজাম্মেল হক খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন দুদকের পরিচালক আক্তার হোসেন, ফরিদপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবু সাঈদ ও কমলেশ মণ্ডল।

গণশুনানিতে ৪৪টি অভিযোগের শুনানি হয়। প্রতিটি অভিযোগের বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেন শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের। সেখানে সরকারি সব দপ্তরের প্রধানেরা এবং যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাঁরা উপস্থিত ছিলেন। এ শুনানি উপলক্ষে এক সপ্তাহব্যাপী সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ নেয় দুদক।

৪৪টি অভিযোগের বেশ কয়েকটি অভিযোগ ছিল ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। তবে অভিযোগকারী ও অভিযুক্ত ভূমি সহকারী কর্মকর্তারা কেউই উপস্থিত ছিলেন না।

অভিযোগ ছিল সদর সাবরেজিস্ট্রার পরিমল চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে। দলিল নিবন্ধনের সময় জমির মূল্যের প্রতি এক লাখ টাকার বিপরীতে এক হাজার টাকা তাঁকে দিতে হয়। অভিযোগকারী উপস্থিত না থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি। সাবরেজিস্ট্রার পরিমল দাস শুনানিতে কমিশনকে জানান, এ অভিযোগ সঠিক নয়। সরকারি ফি ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে নেওয়া হয়। কোনো অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয় না।

গোসাইরহাট উপজেলার ধীপুর গ্রামের বাসিন্দা জব্বার খান অভিযোগ করেন সরকারি প্রসিকিউটর (জিপি) আলমগীর হোসেন মুন্সির বিরুদ্ধে। তাঁর অভিযোগ জিপি জমির মামলার রায় করিয়ে দিয়ে আট লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ নেন। ওই টাকার বিনিময় একটি রায় হয় তাঁদের পক্ষে। সরকারপক্ষ আপিল করে, ওই আপিলে জিতিয়ে দেওয়ার জন্য আরও ১০ লাখ টাকা দাবি করেছেন। এ সময় দুদকের পক্ষ থেকে আলমগীর হোসেন মুনশিকে ডাকা হয়। কিন্তু তিনি হাজির হননি। পরে দুদক ওই অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ ছাড়া গণশুনানিতে শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম, প্যানেল মেয়র বাচ্চু ব্যাপারী, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাসেম তপাদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, জেলা পরিষদের সদস্য কামরুজ্জামান, গণপূর্ত বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী তিমির কুমার মণ্ডল, আনিছুর রহমান, জেলা কারাগার, এলজিইডি, সিভিল সার্জন, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক, সদর উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হামিদুল হক ও সাবেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রমুখের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে।