দুর্নীতির ব্যাপারে সরকারি কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিসিএস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন একাডেমিতে ১১৩, ১১৪ ও ১১৫তম আইন এবং প্রশাসন কোর্সের সমাপনী ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। ঢাকা, ১২ ডিসেম্বর। ছবি: পিআইডি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিসিএস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন একাডেমিতে ১১৩, ১১৪ ও ১১৫তম আইন এবং প্রশাসন কোর্সের সমাপনী ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। ঢাকা, ১২ ডিসেম্বর। ছবি: পিআইডি

দুর্নীতি ও ঘুষের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে প্রশাসনের নতুন কর্মকর্তাসহ সরকারি চাকরিজীবীদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বিসিএস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন একাডেমিতে ১১৩,১১৪ ও ১১৫ তম  আইন এবং প্রশাসন কোর্সের সমাপনী ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ঘুষ ও দুর্নীতির ব্যাপারে আপনাদের সবাইকে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে। এই সব ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি অনেক সময় আমাদের সমাজকে ধ্বংস ও উন্নয়নকে ম্লান করে দেয়। তাই আপনাদের এ ব্যাপারে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।’ 


শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি প্রশাসনের নতুন কর্মকর্তাদের বলব, জনগণের ট্যাক্স এবং কৃষক-শ্রমিকের কঠোর পরিশ্রমের কল্যাণে আমরা একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি। তাই তাদের এই পরিশ্রমলব্ধ অর্থের যেন যথাযথ ব্যবহার হয় এবং সুপরিকল্পিত ও সাশ্রয়ীভাবে যেন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডগুলো সম্পন্ন হয়, সেদিকে আপনাদের বিশেষ নজর দিতে হবে।’

দেশের আরও উন্নয়নের জন্য দেশপ্রেম ও কর্তব্যপরায়ণতার সঙ্গে কাজ করার জন্য নতুন কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আপনাদের এ কথা মনে রাখতে হবে যে আমাদের এবং আপনাদের সন্তানরা ভবিষ্যতে এখানেই বাস করবে। তাই আপনাদের এ কথাও মাথায় রাখতে হবে যে আপনারা আপনাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কী রেখে যাচ্ছেন। আপনারা যদি এই চিন্তাচেতনা ও আদর্শ লালন করে কাজ করেন, তবে আমাদের দেশ আরও এগিয়ে যাবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার দুর্নীতি, সন্ত্রাসবাদ ও মাদকের মতো সামাজিক ব্যাধির মূল উৎপাটনের জন্য অভিযান শুরু করেছে এবং এ ব্যাপারে বিশেষ নজর দিতে নতুন প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কর্মকর্তাদের আরও বেশি উদ্ভাবনীর পরিকল্পনার সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জানি, আপনারা প্রতিটি ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলার অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারেন। এলাকাগুলোর উন্নয়ন আপনাদের কাজের মাধ্যমে দৃশ্যমান হবে। তাই দেশের জন্য ভালোবাসা ও কর্তব্যপরায়ণতার সাথে এই উদ্ভাবনী পরিকল্পনাগুলো কাজে লাগাতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ১১৩, ১১৪ ও ১১৫তম আইন এবং প্রশাসন কোর্সে অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তারা। ঢাকা, ১২ ডিসেম্বর। ছবি: পিআইডি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ১১৩, ১১৪ ও ১১৫তম আইন এবং প্রশাসন কোর্সে অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তারা। ঢাকা, ১২ ডিসেম্বর। ছবি: পিআইডি

সততার শক্তিই সবচেয়ে বড় শক্তি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার পদ্মা সেতুর বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগ মোকাবিলা এবং চ্যালেঞ্জে বিজয় লাভ করেছে।

এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের কিছু লোকের উসকানির কারণে বিশ্বব্যাংক এসব অভিযোগ এনেছিল। যারা বিশ্ব ব্যাংককে দিয়ে এসব অভিযোগ করিয়েছিল, তারা আমার হাত থেকে লাভবান হয়েছিল। আমি তাদের গ্রামীণফোনের ব্যবসা দিয়েছিলাম। আমি ১৯৮৫-৮৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিলাম এবং আমার সরকার জাতিসংঘে গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণের ধারণার ওপর প্রস্তাব পেশ করেছিল এবং ১৯৯৬ সালে এটি পাস করতে সাহায্য করেছিল। সেই লোকই গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদের জন্য পদ্মা সেতুর জন্য বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন তহবিল বন্ধ করতে গিয়েছিল।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার প্রশ্ন, একজন নোবেল বিজয়ী ব্যক্তি একটি ব্যাংকের এমডি পদের জন্য এতটা লোভী হয়ে উঠেছিলেন কেন?’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রচলিত আইন অনুযায়ী একজন এমডি কেবল ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত পদে থাকতে পারেন। অথচ সে সময়ে এই ব্যক্তির বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। বাংলাদেশ ব্যাংক যখন অবৈধভাবে পদ আঁকড়ে থাকায় বাধা সৃষ্টি করল, তখনই পদ্মা সেতুর কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কারণ, তিনি ছিলেন হিলারির বন্ধু।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের দুজন খ্যাতিমান সম্পাদকও সে সময়ে পদ্মা সেতুর জন্য বিশ্বব্যাংকের অর্থসহায়তা বন্ধ রাখতে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আমি তখন এটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। আমি তখন বললাম, কোথায় দুর্নীতি হয়েছে, তা প্রমাণ করতে হবে।’

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এইচ এন আশিকুর রহমান এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহমেদ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে বিসিএস প্রশাসন একাডেমির রেক্টর কাজী রওশন আখতার শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। রেক্টর অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী তিন কোসের্র তিন তরুণ কর্মকর্তা তাঁদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বক্তব্য দেন।