কাজে যেতে চাননি দুর্জয়

দুর্জয় দাস।  ছবি: সংগৃহীত
দুর্জয় দাস। ছবি: সংগৃহীত

কেরানীগঞ্জে কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের পর মারাত্মক দগ্ধ দুর্জয় দাস হেঁটে চলে আসেন দুর্ঘটনাস্থল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে। পরে তাঁর বাবা ছুটে এসে পিকআপ ভ্যানে তুলে নিয়ে যান স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকে দুর্জয়কে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া দুর্জয়ের জীবনের আশা ছেড়ে দেন চিকিৎসকেরা।

বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকদের কাছ থেকে কোনো আশা না পেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে এক প্রকার জোর করেই ছেলেকে কেরানীগঞ্জের বাসায় নিয়ে যান দুর্জয়ের বাবা মিন্টু দাস। গতকাল বিকেলের পর থেকে কথা বলতে শুরু করেন দুর্জয়।

দুর্জয়ের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে মিন্টু দাস বলেন, ‘পোলায় এখন কথা কইতাছে। পুরা শরীর পোড়া। তয় চোখে দেখে। পরিবারের সবাই এখন ওর পাশে আছে। আমরা ভাইঙ্গা পড়ি নাই।’

দুর্জয়ের বয়স ১৮। চার ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকার প্রাইম পেট অ্যান্ড প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের কারখানায় তিনি চাকরি নেন মাত্র চার মাস আগে। গতকাল দুপুরে বার্ন ইউনিটে কথা হচ্ছিল দুর্জয়ের প্রতিবেশী সাকিব নামের আরেক তরুণের সঙ্গে। তিনি জানান, বুধবার অগ্নিকাণ্ডের দিন মায়ের কাছে মন খারাপের কথা বলে দুর্জয় কাজে যেতে চাননি। তবে এক দিন পরেই বেতনের দিন থাকায় মা সবিতা দাস তাঁকে অনুরোধ করে কাজে পাঠান।

দুর্জয়ের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন আ ফ ম আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘দুর্জয়ের শ্বাসনালিসহ শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গেছে। এ অবস্থায় কোনো রোগীর বাঁচার কথা না। আর দুর্জয়ের পরিবারের লোকজনও তাঁকে হাসপাতালে রাখতে চাননি।’

গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় কথা হয় দুর্জয়ের বাবা মিন্টু দাসের সঙ্গে। পেশায় পিকআপ ভ্যান চালক এই ব্যক্তি বলেন, ‘আগুন লাগার পর প্রায় এক কিলোমিটার হাঁইট্যা আমার পোলা বেগুনবাড়ি ব্রিজের কাছে চইল্যা আসে। সেইখান থেইক্যা আমি তারে দ্রুত মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়া আসি। মিটফোর্ড থেইক্যা আমগোরে ফেরত দিলে চইলা আসি ঢাকা মেডিকেলে। কিন্তু ডাক্তার যখন কইলো পোলার বাঁচার আশা নাই, তখন মনে হইলো হাসপাতালে থাইকা কী লাভ? তাই পোলারে বাসায় নিয়্যা আসছি।’

চুনকুটিয়া এলাকায় একতলা টিনশেড ওই কারখানায় একবার ব্যবহারযোগ্য প্লেট, কাপসহ প্লাস্টিকের বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করা হতো।