মিয়ানমারের গণহত্যার সাফাই স্ববিরোধী

আইসিজেতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর ও এজেন্ট অং সান সু চি। দ্য হেগ, নেদারল্যান্ডস, ১১ ডিসেম্বর।   ছবি: ইউএন নিউজ
আইসিজেতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর ও এজেন্ট অং সান সু চি। দ্য হেগ, নেদারল্যান্ডস, ১১ ডিসেম্বর। ছবি: ইউএন নিউজ

গণহত্যার মতো অপরাধের যে সাফাই দেওয়া যায় না, তা আবারও স্পষ্ট হলো মিয়ানমারের গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকারের মাধ্যমে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের তরফে গণহত্যার উদ্দেশ্য প্রমাণের ক্ষেত্রে যে কৌশল অনুসরণ করা হয়, তাকে স্পষ্টতই গণহত্যা অস্বীকারের চিরন্তন ধারারই আরেকটি নজির বলা চলে।

মিয়ানমারের গণহত্যার অভিযোগে আইসিজেতে গাম্বিয়ার করা মামলায় তিন দিনের শুনানি গতকাল বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। গতকাল প্রথমে গাম্বিয়া ও পরে মিয়ানমার পুনরায় নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন এবং অপর পক্ষের বক্তব্য খণ্ডন করে। দুই দেশের বক্তব্য শোনার পর আদালতের প্রেসিডেন্ট আবদুলকোয়াই আহমেদ ইউসুফ জানান, যত শিগগির সম্ভব আদালত তাঁর সিদ্ধান্ত উভয় পক্ষকে জানিয়ে দেবেন। তাঁর এই ঘোষণার মাধ্যমে শুনানি শেষ হয়।

মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্বকারী অধ্যাপক সাবাস গণহত্যার সংজ্ঞায়নের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, এর ব্যাপ্তি খুবই সীমিত। মিয়ানমারে মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়ে থাকলেও তাকে আইনের দৃষ্টিতে গণহত্যা বলা যাবে না। মিয়ানমারের প্রতিনিধি অং সান সু চি তাঁর দেশে সামরিক বিচারব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটানোর ধারা এবং জাতিগত সম্প্রীতি গড়ে তোলার সুযোগ দাবি করে গাম্বিয়ার আবেদন খারিজ করার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, মামলাটি আদালতের তালিকা থেকে বাদ দিলে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার দাবিও খারিজ হয়ে যাবে।

তবে এর আগে সকালের অধিবেশনে গাম্বিয়া মিয়ানমারের প্রায় সব যুক্তিকেই খণ্ডন করে তাদের আবেদনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে এবং অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা হিসেবে ছয়টি নির্দেশনা জারির আহ্বান জানায়। গাম্বিয়ার প্রতিনিধিত্বকারী বিশেষজ্ঞরা মিয়ানমারের আইনজীবী দলে প্রতিনিধিত্বকারী দুজন বিশেষজ্ঞের তত্ত্বকেই কাজে লাগিয়ে মিয়ানমারের দাবিকে খণ্ডন করেন। বিকেলে ওই দুই বিশেষজ্ঞের একজন তাঁর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টায় সংবাদমাধ্যমের ওপর কিছুটা দায় চাপান।

গণহত্যার সাফাই দিতে শান্তির দূত অং সান সু চির অপ্রত্যাশিত ভূমিকায় বিশ্ববাসীর ঘোর না কাটতেই গণহত্যার সংজ্ঞা নিরূপণকারী একজন আইন বিশেষজ্ঞের ভূমিকা কতটা স্ববিরোধী তা আদালতে তুলে ধরেছেন গাম্বিয়ার প্রতিনিধিত্বকারী অক্সফোর্ডের বিশেষজ্ঞ। দ্য হিডেন জেনোসাইড বইয়ের রচয়িতা অধ্যাপক সাবাস মিয়ানমারের প্রতিনিধি হিসেবে আদালতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি অনুসৃত নৃশংসতার ভয়াবহতাকে যেভাবে লঘু করে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন, তার জবাবে অক্সফোর্ডের অধ্যাপক ফিলিপ স্যান্ডস আদালতে বলেছেন, তিনি তাঁর মত বদলাতে পারেন না, তা নয়। তবে ২০১৩ সালে আল-জাজিরা টেলিভিশনে তিনি গণহত্যার যেসব লক্ষণ বা আলামতের কথা বলেছিলেন, সেগুলো থেকে নিবৃত্ত থাকতে মিয়ানমারকে আদালত নির্দেশ দিলে আবেদনকারী দেশের কোনোই আপত্তি থাকবে না।

গাম্বিয়ার প্রতিনিধিত্বকারী যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী পল রাইখলার মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের তালিকায় থাকা হার্ভাডের অধ্যাপক অ্যান্ড্রিস জিমারম্যানের তত্ত্ব তুলে ধরে অন্তর্বর্তী আদেশের জরুরি প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন (জিমারম্যান অবশ্য মঙ্গলবার আদালতে কোনো বক্তব্য দেননি)। মিয়ানমারের আইনজীবীরা বিশেষত অধ্যাপক ওকোয়া যুক্তি দিয়েছিলেন যে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধানী দলের প্রতিবেদনের পর বহু মাস পেরিয়ে গেছে এবং সাম্প্রতিককালে এমন কিছু ঘটেনি, যে কারণে জরুরিভিত্তিতে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন হবে। জিমারম্যান এর আগে তাঁর রচনায় লিখেছিলেন, যেকোনো পরিস্থিতি বহুদিন ধরে বিদ্যমান বলে সেখানে ‘জরুরি’ হস্তক্ষেপের প্রয়োজন শেষ হয়ে যায় না। মিয়ানমারের ক্ষেত্রে কেন এই তত্ত্ব প্রযোজ্য হবে না?

>

তিন দিনের শুনানি শেষে আদালত জানান, যত শিগগির সম্ভব সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

এই মামলায় দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে মিয়ানমারের পক্ষে দেশটির বেসামরিক সরকারের প্রধান অং সান সু চি গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাস দমনে সশস্ত্র বাহিনী মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করে থাকলে তা দেশটির নিজস্ব ব্যবস্থায় বিচার করার কথা বলেছেন তিনি। কোনো প্রাণহানি ও নৃশংসতায় গণহত্যার উদ্দেশ্য প্রমাণিত হয়নি দাবি করে মিয়ানমারের আইনজীবীরা গাম্বিয়ার আবেদন খারিজ করা উচিত বলে আদালতে বক্তব্য দিয়েছেন।

যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রের মতো মিয়ানমারেও সামরিক অপরাধের বিচার সামরিক বিচারব্যবস্থায় হয়ে থাকে উল্লেখ করে সু চি বলেন, বুথিডংয়ে দ্বিতীয় আরেকটি সামরিক আদালতে বিচার চলছে। ওই বিচারকে বাধাগ্রস্ত করা ঠিক হবে না। সামরিক বিচারব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানোর সুযোগ না দিয়ে তাকে দেশের বাইরে বের করা (আন্তর্জাতিকীকরণ) উচিত নয় বলেও তিনি দাবি করেন।

 মংডু শহরে একটি ফুটবল ম্যাচে হাজির দর্শকদের ছবি দেখিয়ে সু চি বলেন, ‘সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় কাজ করছি এবং আমরা তা চালিয়ে যেতে চাই। আদালতের কাছে আমরা সেই সুযোগ চাই।’ সু চি বলেন, ২০১৬-১৭-এর মতো আন্তজাতিগত সংঘাত আবার শুরু হোক, এমন কিছু আমরা চাই না।’ মিয়ানমারের পক্ষে প্রথমে বক্তব্য দেন ক্রিস্টোফার স্টকার, যাতে তিনি ওআইসির পক্ষ থেকেই মামলাটি করা হয়েছে বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন এবং সে জন্য মামলার অর্থায়ন কে করেছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বাংলাদেশ কেন মামলা করেনি এবং সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে সেই সুযোগ বাংলাদেশের ছিল বলেও তিনি দাবি করেন। প্রত্যাবাসন বিষয়ে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেকোনো ধরনের অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার নির্দেশনা প্রত্যাবাসনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

নেদারল্যান্ডস সময় সকাল ১০টায় আদালতের প্রেসিডেন্ট ইউসুফের সভাপতিত্বে শেষ দিনের শুনানি শুরু হলে গাম্বিয়ার পক্ষে পল রাইখলার বলেন, মিয়ানমার অপরাধের কথা অস্বীকার করেনি। দেশটির আইনজীবীরা জাতিসংঘ তদন্তকারীদের প্রতিবেদনের উপসংহারগুলো নাকচ করেননি। এমনকি দেশটির প্রতিনিধি অং সান সু চি বলেছেন, সামরিক বাহিনীর কেউ কেউ অপরাধ করে থাকতে পারেন, সে জন্য তাঁদের বিচার হবে। তাঁদের আপত্তি প্রধানত দুটো। প্রথমত, মিয়ানমার গণহত্যার কথা অস্বীকার করেছে। দ্বিতীয়ত, গণহত্যার উদ্দেশ্য থাকা সম্ভব মনে করা হলেও তার ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী আদেশ দেওয়া যায় না।

রাইখলার বলেন, মিয়ানমারের আইনজীবী অধ্যাপক সাবাস গণহত্যার উদ্দেশ্য প্রমাণের জন্য সাতটি নির্দেশক থাকা আবশ্যক বলে দাবি করেছেন। সেই সাতটি নির্দেশকের কথা গাম্বিয়ার আবেদনে রয়েছে এবং মিয়ানমার সেগুলো অস্বীকার করেনি। কিন্তু তারপরও বলা হচ্ছে, নৃশংসতায় গণহত্যার উদ্দেশ্য ছিল না। গণকবর নেই এমন দাবির জবাবে তিনি বলেন, তদন্তকারীদের সেখানে ঢুকতে না দিয়ে এমন দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এপির একজন সাংবাদিক পাঁচটি গণকবর চিহ্নিত করেছেন।

রাইখলার এসব নির্দেশক বা লক্ষণগুলো একে একে তুলে ধরে প্রতিটি বিষয়ে মিয়ানমারের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন, মিয়ানমার এগুলোর কোনোটিই অস্বীকার করেনি। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তদন্তে চরম নিষ্ঠুরতার প্রমাণ মেনে নিয়ে সু চি রাষ্ট্রীয় বিচারের ব্যবস্থার কথা বলেছেন। বর্বর কৌশল অনুসরণের কারণে ৩৯২টি রোহিঙ্গা গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার প্রমাণ মিলেছে, যা অস্বীকার করা হয়নি। ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার অসংখ্য নজির তুলে ধরা হলেও মিয়ানমারের আইনজীবীরা এ বিষয়ে একটি কথাও বলেননি। অবমাননাকর এবং সমাজচ্যুত করার ভাষা ব্যবহারের প্রমাণ সেনাপ্রধানের ফেসবুক পেজে, যেখানে তিনি বলেছেন, সরকার বাঙালি সমস্যা সমাধানের অসমাপ্ত কাজ সমাধা করবে। নাগরিকত্ব আইনে রোহিঙ্গাদের কোনো স্বীকৃতি না দেওয়ার বিষয়ে সু চি বলেছেন, মুসলমান শিশুদের জন্মসনদ দেওয়া হবে। জন্মসনদ আর নাগরিকত্ব এক নয়। সু চি নিজেই স্বীকার করেছেন, দেশটির সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন। কেননা, সেনাসদস্যদের বিচার সামরিক আইনে হয় এবং সামরিক বাহিনী নিজেদের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠতে পারে না। রাইখলার রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানোর নীতি অনুসরণের বিভিন্ন নজির তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আদালত নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন, সু চি আদালতে রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করেননি। শুধু বিচ্ছিন্নতাবাদী আরসা গোষ্ঠীর কথা বলার সময় ছাড়া তিনি তাদের মুসলিম হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবাসন বিষয়ে মিয়ানমারের বক্তব্যকে প্রতারণা অভিহিত করে রাইখলার বলেন, মিয়ানমার নিজেই স্বীকার করেছে যে খুব সামান্যসংখ্যকই ফিরেছে। প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মিয়ানমার যেসব ব্যবস্থার কথা দাবি করেছে, তা প্রতারণা (ফ্রড)। মিয়ানমারের আইনজীবী মিস ওকোয়া প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশের আগ্রহ এবং চীন, জাপান ও ভারতের সহায়তার বিষয়টিকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ বলেছে, মিয়ানমার প্রত্যাবাসনের জন্য কিছুই করেনি। চীন, জাপান ও ভারত সহায়তার যে প্রস্তাব দিয়েছে, সে জন্য তাদের ধন্যবাদ প্রাপ্য। কিন্তু প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরির দায়িত্ব তো মিয়ানমারের। মিয়ানমার সেটি পালনে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি এ ক্ষেত্রে নভেম্বরে বাংলাদেশের দেওয়া সর্বসাম্প্রতিক বিবৃতি থেকে উদ্ধৃত করে বলেন, মিয়ানমার নিরাপদ ও মর্যাদার সঙ্গে ফেরার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে কিছুই করেনি।

গাম্বিয়ার পক্ষে আইনজীবী পিয়েঁর দ্য’আর্জেন এরপর বক্তব্য দিতে উঠে বলেন, গাম্বিয়া স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে এই মামলা করেছে। গাম্বিয়া ওআইসির প্রক্সি বা প্রতিভূ হিসেবে মামলা করেনি। গাম্বিয়া ওআইসির সাহায্য চাইতেই পারে। অন্যদেরও সাহায্য চাইতে পারে। সুতরাং, গাম্বিয়া ওআইসির সহায়তা নেওয়ায় বলা যাবে না যে ওআইসি এই মামলার আবেদনকারী।

পিয়েঁর দ্য’আর্জেন বলেন, গাম্বিয়া ওআইসি মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর মামলা করেছে বলে মিয়ানমারের আইনজীবী স্টকারের দাবি বিভ্রান্তিকর। মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধ ওআইসির নয়, গাম্বিয়ার। পিয়েঁর দ্য’আর্জেন মিয়ানমারের আইনজীবী স্টকারকে উদ্ধৃত করে বলেছেন, তিনি দাবি করেছেন, কোনো অপরাধ যদি ঘটেও থাকে, তাহলেও গাম্বিয়ার সে বিষয়ে মামলা করার অধিকার নেই। গাম্বিয়া কূটনৈতিক ব্যবস্থায় তার আপত্তির কথা জানাতে পারে, কিন্তু আদালতে আসতে পারে না। স্টকারের এসব বক্তব্য সঠিক নয়। গাম্বিয়া সনদের স্বাক্ষরকারী হিসেবে সনদ লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদনের অধিকার রাখে।

অধ্যাপক ফিলিপ স্যান্ডস গাম্বিয়ার পক্ষে দাঁড়িয়ে বলেন, ১৯৪৮-এর গণহত্যা সনদের বাধ্যবাধকতা পূরণ করছে কি না, সে প্রশ্ন তোলার অধিকার গাম্বিয়ার অবশ্যই রয়েছে। এ বিষয়ে তিনি অতীতের রায়ের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক সনদের অংশীদার হিসেবে অন্তর্বর্তী আদেশের আবেদন করার অধিকার গাম্বিয়ার রয়েছে।

অধ্যাপক ফিলিপ স্যান্ডস বলেন, গণহত্যার উদ্দেশ্য সম্পর্কে মিয়ানমারের আইনজীবী অধ্যাপক সাবাস একটি নতুন আইনগত মান নির্ধারণ করার চেষ্টা করেছেন, যেটি পরীক্ষিত নয়। কিছু কিছু কার্যক্রমে গণহত্যার লক্ষণ বলে ধারণা তৈরি হলেও সব কার্যক্রম গণহত্যার ধারণা প্রমাণ করে না, এমন দাবি ঠিক নয়।

অধ্যাপক স্যান্ডস বলেন, অধ্যাপক সাবাস শিক্ষাবিদ হিসেবে ২০১৩ সালে গণহত্যা কাকে বলে, তার ব্যাখ্যায় আল-জাজিরাকে কী বলেছিলেন, তা উল্লেখ করেন। এরপর স্যান্ডস বলেন, ‘তিনি যে মত বদলাতে পারেন না, সে কথা আমি বলব না। মিয়ানমারের আইনজীবী হিসেবে অধ্যাপক সাবাস শুনানিতে দাবি করেছিলেন, মিয়ানমারে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকতে পারে, কিন্তু সেটা গণহত্যা নয়।’

 অধ্যাপক স্যান্ডস আরও বলেন, ‘অন্তর্বর্তী আদেশ পরিস্থিতির জন্য সহায়ক হবে না মিয়ানমারের এমন দাবির জবাব হচ্ছে, আমরা সে কারণেই সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছি। বসনিয়ায় আদেশ দেওয়ার পরও সেব্রেনিৎসায় যে গণহত্যা হয়েছিল, সেই দৃষ্টান্ত দিয়েই আমরা বলেছি, সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা কেন প্রয়োজন এবং তার বাস্তবায়নের সময় বেঁধে দেওয়া জরুরি। অধ্যাপক সাবাস তাঁর ২০১৩ সালের সাক্ষাৎকারে গণহত্যা প্রতিরোধে যেসব পদক্ষেপ প্রয়োজন বলেছিলেন, সেগুলো যদি আদালত তাঁর নির্দেশে অন্তর্ভুক্ত করেন, তাতে আমরা আপত্তি করব না।’

গাম্বিয়ার পক্ষে শুনানিতে সর্বশেষ বক্তব্য দেন দেশটির প্রতিনিধি আইনমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের জীবন হুমকির মুখে। গাম্বিয়া প্রতিবেশী না হতে পারে, কিন্তু গণহত্যা সনদের স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে গণহত্যা বন্ধ এবং তা প্রতিরোধে আমাদের দায়িত্ব রয়েছে।’