বরিশালে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের মৃত্যু: তদন্ত কমিটি গঠন

শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে প্রগতিশীল চিকিৎসক ফোরাম ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) বরিশাল জেলা শাখা। ছবি: সাইয়ান
শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে প্রগতিশীল চিকিৎসক ফোরাম ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) বরিশাল জেলা শাখা। ছবি: সাইয়ান

বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক শিক্ষানবিশ (ইন্টার্ন) চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

আজ শুক্রবার দুপুরে প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের পরিচালক বাকির হোসেন। তিনি জানান, ওই শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের মৃত্যুতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের গাফিলতি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি। হাসপাতালের উপপরিচালক জসীম উদ্দিন হাওলাদারকে প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম, মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইমরুল কায়েস ও আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মাশরেকুল ইসলাম।

গত মঙ্গলবার শ্বাসকষ্টজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষানবিশ চিকিৎসক মারুফ হোসেন। পরদিন বুধবার অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়। মারুফের সহপাঠী ও পরিবারের অভিযোগ, আইসিইউর ১০টি ভেন্টিলেটর মেশিন (কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস যন্ত্র) বিকল থাকায় তাঁকে কৃত্রিম উপায়ে অক্সিজেন দেওয়া হয়নি। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা যান মারুফ।

মারুফের সহপাঠী শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মনজুরুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, মারুফের মৃত্যুর সম্পূর্ণ দায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। আইসিইউর ১০টি ভেন্টিলেটর অকেজো থাকার পরেও কেন সেগুলো চালু রাখা হয়েছিল, এটি একটি বড় প্রশ্ন। ভেন্টিলেটরগুলো লাগানো হয় ২০১৭ সালে। এগুলোর ১০ বছরের ওয়ারেন্টি থাকার কথা। তাহলে তিন বছরের মাথায় সেগুলো নষ্ট হওয়ার পরেও কেন বদলানো হলো না? এ ছাড়া অ্যাম্বুলেন্সে তোলার সময় তাঁকে অক্সিজেন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। ওই সময়ই তাঁর মৃত্যু হয়।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ২৩ জুলাই শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পূর্ব দিকের নতুন দোতলা ভবনের নিচতলায় আইসিইউটি চালু করা হয়। ইউনিটটি চালুর সময় থেকেই রোগীদের জন্য ১০টি আইসিইউ বেড, ১০টি বড় আকারের ভেন্টিলেটর মেশিন, তিনটি ছোট আকারের ভেন্টিলেটর ও মনিটর সরবরাহ করা হয়। কিন্তু একে একে সব কটি ভেন্টিলেটর মেশিন নষ্ট হওয়ায় হাসপাতালে আসা মুমূর্ষু রোগীদের ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

এদিকে মারুফের মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ও আইসিইউসহ সব বিভাগের নষ্ট যন্ত্রপাতি মেরামতসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়ে শহরের অশ্বিনীকুমার হলের সামনে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে প্রগতিশীল চিকিৎসক ফোরাম ও বাসদ বরিশাল জেলা শাখা।

হাসপাতালের পরিচালক বাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভেন্টিলেটর মেশিন অকেজো হওয়ার পর গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাসপাতাল বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন স্থানীয়ভাবে এগুলো মেরামত করার উদ্যোগ নিতে। সে অনুযায়ী আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। যে প্রতিষ্ঠান এগুলো স্থাপন করেছিল, তাদের আমরা ১১ বার চিঠি দিয়েছি। তারা বলেছে, তিন বছরের ওয়ারেন্টি ছিল, সেই মেয়াদ শেষ। এখন এসব যন্ত্র মেরামত করতে তারা যে অর্থ চাচ্ছে, তা দিয়ে নতুন যন্ত্রই কেনা সম্ভব।’