বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের উদ্বেগ

রানা দাশগুপ্ত। ফাইল ছবি
রানা দাশগুপ্ত। ফাইল ছবি

ভারতের লোকসভা এবং রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব সংশোধন বিল পাস হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। সংগঠনটি বলেছে, এর ফলে অধিকতর নিরাপত্তার আশায় বাংলাদেশে বাস করা সংখ্যালঘুরা দেশত্যাগে উৎসাহিত হতে পারে। একই সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরে অসাম্প্রদায়িক আন্দোলনে তাদের অংশগ্রহণকে নিরুৎসাহিত করতে পারে। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে বাংলাদেশের ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের স্বার্থ কতখানি রক্ষিত হবে, তা ভেবে দেখার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। শুক্রবার ঢাকায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর থেকে সংখ্যালঘুদের জীবন, পরিবার ও সম্পদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে দেশত্যাগে বাধ্য করেছিল একটি গোষ্ঠী। ভারতের নাগরিকত্ব বিল ওই গোষ্ঠীকে সাম্প্রদায়িক নির্যাতন, নিপীড়ন, ভূমি দখল, ধর্মান্তরকরণ অব্যাহত রেখে সংখ্যালঘুদের দেশছাড়া করতে অধিক উৎসাহী করবে। 

রানা দাশগুপ্ত বলেন, সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগ কমবেশি অব্যাহত আছে। সাম্প্রদায়িক নির্যাতন-নিপীড়নও অব্যাহত আছে। বহুত্ববাদী সমাজ থেকে বাংলাদেশ ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে। এসব সমস্যার মৌল সমাধান গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের মধ্যে নিহিত রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারি দলের নির্বাচনী ইশতেহারে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষার্থে জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন ও পার্বত্য চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে আশা প্রকাশ করা হয়।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, অর্পিত সম্পত্তি আইনের অব্যাহত প্রয়োগ-অপপ্রয়োগে, সাম্প্রদায়িক নির্যাতন-নিপীড়নে ক্ষতিগ্রস্ত ও আতঙ্কিত হয়ে’ ৭৫ পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর এক বিশাল অংশকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল। তারা প্রতিবেশী রাষ্ট্রে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর পূর্ব পাকিস্তানে মোট জনসংখ্যার ২৯ দশমিক ৭ শতাংশ ছিল সংখ্যালঘু। ২০১১ সালে তা নেমে আসে ৯ দশমিক ৬ শতাংশে। এটি আদমশুমারির প্রতিবেদন থেকে স্পষ্টতই বোঝা যায়। অবশ্য বছরখানেক আগে পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত ১০ বছরে ২ শতাংশ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী বেড়েছে। সংখ্যালঘু ভিন্ন অন্য জনগোষ্ঠীর লোকজন ভারতে আশ্রয় নিয়েছে কি না, সে-সংক্রান্ত কোনো তথ্য হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কাছে নেই।
নিম চন্দ্র ভৌমিকের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে কাজল দেবনাথ, বাসুদেব ধর, জে এল ভৌমিক, নির্মল রোজারিও, মঞ্জু ধর, মনীন্দ্র কুমার নাথ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি