চোখের জলে সহকর্মীকে বিদায়

জুমার নামাজের মোনাজাতের সময় অনেক পাটশ্রমিক কান্নায় ভেঙে পড়েন। গতকাল খুলনার প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিলের সামনে।  প্রথম আলো
জুমার নামাজের মোনাজাতের সময় অনেক পাটশ্রমিক কান্নায় ভেঙে পড়েন। গতকাল খুলনার প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিলের সামনে। প্রথম আলো

তিন দিন ধরে আমরণ অনশনে অংশ নিয়েছিলেন খুলনার প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক আবদুস সাত্তার (৫৫)। তাঁর কাঁথা, বালিশ, কম্বলও ছিল ওই অনশনস্থলে। প্লাটিনাম জুট মিলের গেটে গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় জানাজা শেষে তাঁর লাশ দাফনের জন্য পাঠানো হয় তাঁর গ্রামের বাড়িতে। এ সময় লাশের গাড়িতে তুলে দেওয়া হয় সেই কাঁথা-বালিশ–কম্বলও।

জানাজা শেষে লাশ গাড়িতে তুলে দেওয়ায় সময় অনেক সহকর্মী কান্নায় ভেঙে পড়েন। অশ্রুসিক্ত হয়ে সহকর্মীকে বিদায় দিয়ে আবার অনশনে বসেন তাঁরা।

সাত্তারের বাড়ি পটুয়াখালী জেলায়। সেখানেই তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যরা থাকেন। খুলনায় প্লাটিনাম জুট মিলের পাশের এক মেসে থাকতেন তিনি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মারা যাওয়ার পর লাশ নিয়ে আসা হয় প্লাটিনাম জুট মিলে। ওই মিলের মসজিদে সারা রাত রাখা হয় তাঁর লাশ। জুমার নামাজের পর জানাজা হওয়ার কথা থাকলেও পরিবারের সদস্যদের দাবিতে সকাল ১০টায় জানাজা হয়। ওই জানাজায় অংশ নেন রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন জুট মিলের হাজার হাজার শ্রমিক।

জানাজা শেষে বিদায় দেওয়ার পর শ্রমিকদের কণ্ঠের জোর যেন আরও বেড়ে যায়। এ সময় শ্রমিকদের ‘সরকার তুমি যেই হও, শ্রমিকদের দাবি মেনে নাও’, ‘রক্ত দিয়েছি আরও দেব, দাবি নিয়ে ঘরে ফিরব’ এমন বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়। অনেকে সাদা কাফনের কাপড় পরে অনশন করছেন।

শ্রমিকেরা বলছেন, সহকর্মী সাত্তারের মৃত্যু তাঁদের আরও বেশি দাবি আদায়ে সংকল্পবদ্ধ করেছে। আর কত শ্রমিকের মৃত্যু হলে সরকার পাটকলশ্রমিকদের দাবি মেনে নেবেন তা দেখতে চান শ্রমিকেরা।

>

পাটকলশ্রমিকদের অনশন
‘সরকার তুমি যেই হও, শ্রমিকদের দাবি মেনে নাও’ ‘রক্ত দিয়েছি আরও দেব, দাবি নিয়ে ঘরে ফিরব’ এমন স্লোগান দেন শ্রমিকেরা

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলশ্রমিকদের ওই আমরণ অনশন কর্মসূচির ডাক দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদ। ওই পরিষদের ডাকে খুলনা অঞ্চলে থাকা ৯টি পাটকলের মধ্যে আটটি পাটকলের শ্রমিকেরা নিজ নিজ মিল গেটের সামনে ওই কর্মসূচি পালন করছেন। শুধু যশোরের কার্পেটিং জুট মিলের শ্রমিকেরা অংশ নিচ্ছেন না।

ওই পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ও প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক নেতা খলিলুর রহমান বলেন, চার দিন ধরে চলা ওই কর্মসূচিতে এরই মধ্যে অসুস্থ হয়ে সাত্তার মারা গেছেন। গুরুতর অসুস্থ হয়ে প্রায় ৪৫ জনের মতো শ্রমিককে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে অনেকেই চিকিৎসা নিয়ে আবার অনশনস্থলে ফিরে এসেছেন। স্যালাইনরত অবস্থায় রয়েছেন প্রায় ১৮০ জনের মতো শ্রমিক। 

 শ্রমিকদের ১১ দফা দাবি মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সম্মিলিত নাগরিক পরিষদ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। গতকাল শুক্রবার সকালে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলশ্রমিকদের ১১ দফা দাবিতে আমরণ অনশনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সংহতি সমাবেশ করেন তাঁরা। খুলনা নগরের পিকচার প্যালেস মোড়ে ওই সংহতি সমাবেশে খুলনার বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সংগঠনের আহ্বায়ক কুদরত-ই-খুদার সভাপতিত্বে ও খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্যসচিব বাবুল হাওলাদারের পরিচালনায় সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সম্পাদক সিপিবি নেতা জলি তালুকদার, সিপিবির কেন্দ্রীয় সদস্য এস এ রশীদ, খুলনা নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক আ ফ ম মহসীন, নারী নেত্রী রোজী রহমান প্রমুখ।

এদিকে দুপুরে জুমার নামাজের পর খালিশপুর শ্রমিকদের অনশনস্থলে যান গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকি। এ সময় তিনি শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, সরকার পাটশিল্প ধ্বংসের নীলনকশা চূড়ান্ত করেছে। শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনই পারে সব ষড়যন্ত্র রুখে দিতে।