'স্বপ্নপূরণের দিনে কাঁদব না, হাসতে এসেছি'

শহীদুল্লা কায়সারের সারেং বৌ উপন্যাসের ইংরেজি সংস্করণের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন কথাশিল্পী হাসনাত আবদুল হাই। পাশে পান্না কায়সার ও অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। বইটি প্রকাশ করেছে প্রথমা প্রকাশন। গতকাল বিকেলে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে।  ছবি: প্রথম আলো
শহীদুল্লা কায়সারের সারেং বৌ উপন্যাসের ইংরেজি সংস্করণের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন কথাশিল্পী হাসনাত আবদুল হাই। পাশে পান্না কায়সার ও অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। বইটি প্রকাশ করেছে প্রথমা প্রকাশন। গতকাল বিকেলে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে। ছবি: প্রথম আলো

‘৪৮ বছর ধরে এই দিনটি এলে কাঁদি। পত্রিকায় নানা রকম ইন্টারভিউ দিই। দুঃখের কথা, সংগ্রামের কথা বলি। আজ ব্যতিক্রমী একটি দিন। সারেং বৌ ইংরেজিতে প্রকাশের স্বপ্নপূরণের দিনে আমি কাঁদব না, হাসতে এসেছি।’

গতকাল শনিবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শহীদুল্লা কায়সারকে স্মরণ ও তাঁর লেখা সারেং বৌ উপন্যাসের ইংরেজি সংস্করণ আ সিম্যান’স ওয়াইফ বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানে শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লা কায়সারের স্ত্রী পান্না কায়সার এসব কথা বলেন। প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে প্রথমা প্রকাশন।

স্বামীর সঙ্গে তাঁর যাপিত জীবন ২ বছর ১০ মাসের উল্লেখ করে সাবেক সাংসদ পান্না কায়সার বলেন, ‘এই বাংলাদেশের স্বাধীনতা এখনো অপূর্ণ। এখনো আমাদের অনেক দূর যেতে হবে। তাঁরা (শহীদ বুদ্ধিজীবীরা) কর্মে, চিন্তায় আমাদের পথ দেখিয়েছেন, এখনো দেখাচ্ছেন।’

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, কথাশিল্পী, সাংবাদিক ও শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লা কায়সারের বিখ্যাত সারেং বৌ উপন্যাসের ইংরেজি সংস্করণ আ সিম্যান’স ওয়াইফ প্রকাশ করেছে প্রথমা প্রকাশন। উপন্যাসটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত ও লেখক সৈয়দ নাজমুদ্দীন হাশেম।

অনুষ্ঠানে বাংলার সঙ্গে ইংরেজি মিলিয়ে অনুবাদের বিভিন্ন দিক খুঁটিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন কথাশিল্পী হাসনাত আবদুল হাই। এ সময় তিনি উচ্ছ্বাস, ক্রোধ, রসিকতা, ভয়সহ বিভিন্ন সূচক দিয়ে বইয়ের অনুবাদের গ্রহণযোগ্যতার মাপজোখ করেন।

বইটির অনুবাদকে সরল অনুবাদ উল্লেখ করে বর্ষীয়ান এই আলোচক বলেন, বইটি বিদেশি পাঠক টানবে, তারা পড়বে। নবিতুনের (উপন্যাসের প্রধান চরিত্র) কাহিনি অতীতের নয়, এটা নারীদের চিরায়ত কাহিনি।

অনুবাদের সময় লেখক মূল ঘটনার প্রতি বিশ্বস্ত থেকেছেন উল্লেখ করে সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, উপন্যাসের ঘনবদ্ধ ভাষা ধরে রাখতে অনুবাদক সক্রিয় ভাষা দিয়েছেন। অনুবাদের বর্ণনা প্রাঞ্জল ও গতিশীল। আবার প্রধান গল্পের আড়ালে তিনি রূপকভাবও তুলে ধরেছেন।

শহীদুল্লা কায়সার ও সৈয়দ নাজমুদ্দীন হাশেম ভালো বন্ধু ছিলেন বলে জানান নাজমুদ্দীন হাশেমের স্ত্রী নুরুননাহার হাশেম। তিনি বলেন, ‘অনুবাদের কাজটি অনেক আগের। দেখানোর জন্য পুরো পাণ্ডুলিপিটি শহীদুল্লা কায়সারকে দিয়েছিলেন। এরপর যুদ্ধের পরে পাণ্ডুলিপির হদিস ছিল না। এ বছর পেয়েছি। সেই লেখা বই আকারে প্রকাশ হওয়ায় ভীষণ গর্বিত।’

>

‘সারেং বৌ’-এর ইংরেজি সংস্করণ
শহীদুল্লা কায়সারের সারেং বৌ উপন্যাসের ইংরেজি সংস্করণ আ সিম্যান’স ওয়াইফ প্রকাশ করেছে প্রথমা প্রকাশন

অনুষ্ঠানের শুরুতে উপন্যাস থেকে কিছু অংশ পাঠ করেন সারেং বৌ সিনেমার নবিতুন অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী। ‘সারেং আসবে না রে, আসবে না। বিদেশের সোহাগ যে পায়, সে কখনো দেশে ফেরে? সে দেশে ফেরে না।’ এই অংশ পড়ার সময় কবরীর অশ্রু ঝরছিল, সে অশ্রুতে সিক্ত হয়েছেন উপস্থিত অতিথিরাও।

প্রকাশনা অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। তিনি শহীদুল্লা কায়সার ও সৈয়দ নাজমুদ্দীন হাশেমের শিক্ষাজীবন, কর্মজীবন ও সংগ্রামের নানা দিক তুলে ধরেন। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মতিউর রহমান বলেন, বুদ্ধিজীবীদের শেষ সময়ের হত্যাকাণ্ড ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলেছে। তবে শুরু হয়েছিল ২৫ মার্চ রাতে।

সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান, নাট্যব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান, সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ, লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, লেখক আনোয়ারা সৈয়দ হক, অভিনেতা–নির্মাতা আফজাল হোসেনসহ দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী অণিমা রায়ের কণ্ঠে ‘ও আমার দেশের মাটি’ গান দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। শেষ হয় ওয়ার্দা আশরাফের কণ্ঠে জোয়ান বায়েজের ‘বাংলাদেশ’ গান দিয়ে।