আজিমপুর মাতৃসদনে কেনাকাটায় দুর্নীতি পেয়েছে দুদক

আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে কেনাকাটায় দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বাজারদরের চেয়ে দুই থেকে তিন গুণ বেশি দামে ওষুধ, সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি ও প্যাথলজিসামগ্রী কেনাকাটায় প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়। তাই এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।

দুদকের মুখপাত্র প্রণব কুমার ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, আজ রোববার কমিশন এ বিষয়ে মামলার অনুমোদন দেয়। চার অর্থবছরে কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগে চারটি আলাদা মামলা হবে। আগামী মঙ্গলবার মামলা করবেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা।

কেনাকাটায় দুর্নীতির ওই অভিযোগ অনুসন্ধান করেন দুদকের উপপরিচালক মো. আবুবকর সিদ্দিক। তাঁর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কমিশন সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দেয়।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, মামলায় ১৭ জন চিকিৎসক ও সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের ৮ জনকে আসামি করা হবে। আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়ক ইসরাত জাহানকে চারটি মামলাতেই আসামি করা হচ্ছে।

দুদকের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান ২০১৪-১৫ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত চার অর্থবছরের কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করা হয়। দুদকের অনুসন্ধান বলছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে কার্যাদেশ অনুযায়ী ঠিকাদারকে ওষুধ সরবরাহের বিপরীতে ৩২ লাখ ৯১ হাজার ৭২০ টাকার বিল পরিশোধ করা হয়। অথচ খুচরা মূল্য ও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মূল্য অনুযায়ী ওই একই ওষুধের সর্বোচ্চ মূল্য ১৬ লাখ ৪৫ হাজার ২৯৮ টাকা। বাকি টাকা অতিরিক্ত দেওয়া হয়েছে। এভাবে চার অর্থবছরে একই প্রক্রিয়ায় প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। দুদক বলছে, এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দায় ও ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রমাণ মিলেছে।

যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে, তাঁরা হলেন আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়ক ইসরাত জাহান, পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের সাবেক অধ্যক্ষ ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য পারভীন হক চৌধুরী, মাতৃসদনের সাবেক সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য মাহফুজা খাতুন, সাবেক সহকারী কো-অর্ডিনেটর (ট্রেনিং অ‌্যান্ড রিসার্চ) ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য চিন্ময় কান্তি দাস, সাবেক মেডিকেল অফিসার ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম, মেডিকেল অফিসার (শিশু) ও বাজারদর যাচাই কমিটির সদস্য মাহফুজা দিলারা আকতার।

মাতৃসদনের মেডিকেল অফিসার ও বাজারদর যাচাই কমিটি সদস্য নাজরিনা বেগম, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও সদস্যসচিব-বাজারদর যাচাই কমিটি জহিরুল ইসলাম, পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য জেবুন্নেসা হোসেন, সিনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি) ও বাজারদর যাচাই কমিটির সভাপতি রওশন হোসনে জাহান, মাতৃসদনের সাবেক সহকারী কো-অর্ডিনেটর (ট্রেনিং অ‌্যান্ড রিসার্চ) ও পরিবার পরিকল্পনার অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. লুৎফুল কবীর খান, মেডিকেল অফিসার ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য রওশন জাহান, সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক হালিমা খাতুন, মাতৃসদনের বিভাগীয় প্রধান (শিশু) ও বাজারদর যাচাই কমিটির সদস্য মো. আমীর হোচাইন, সাবেক সমাজসেবা কর্মকর্তা ও বাজারদর যাচাই কমিটির সদস্য মোছা. রইছা খাতুন ও সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান আসামি হচ্ছেন।

এ ছাড়া পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কাজী গোলাম আহসান, সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিন, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (শিশু) নাদিরা আফরোজ, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. নাছের উদ্দিন, সমাজসেবা কর্মকর্তা বিলকিস আক্তার, মেডিকেল অফিসার আলেয়া ফেরদৌসিকেও আসামি করা হচ্ছে।

ঠিকাদারদের মধ্যে মনার্ক এস্টাব্লিশমেন্টের মালিক মো. ফাতে নূর ইসলাম, মেসার্স নাফিসা বিজনেস কর্নারের মালিক শেখ ইদ্রিস উদ্দিন (চঞ্চল), সান্ত্বনা ট্রেডার্সের মালিক নিজামুর রহমান চৌধুরী আসামি হচ্ছেন।

আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল। নামমাত্র মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আওতাধীন হাসপাতালটি ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ ২০০০ সালে আবারও চালু হয়।