সরকার সশস্ত্র বাহিনীকে একটি আধুনিক-সুদক্ষ বাহিনীতে পরিণত করার লক্ষ্যে কাজ করছে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিরপুর সেনানিবাসের শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স (এনডিসি)-২০১৯ এবং আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স (এএফডব্লিউসি কোর্স)-২০১৯–এর গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণ দেন। ঢাকা, ১৫ ডিসেম্বর। ছবি: পিআইডি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিরপুর সেনানিবাসের শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স (এনডিসি)-২০১৯ এবং আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স (এএফডব্লিউসি কোর্স)-২০১৯–এর গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণ দেন। ঢাকা, ১৫ ডিসেম্বর। ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার সশস্ত্র বাহিনীকে পরিবর্তিত বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে সক্ষম একটি আধুনিক, পেশাদার ও সুদক্ষ বাহিনীতে পরিণত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

মিরপুর সেনানিবাসের শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে আজ রোববার সকালে ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স (এনডিসি)-২০১৯ এবং আর্মড ফোর্সেস ওয়্যার কোর্স (এএফডব্লিউসি কোর্স)-২০১৯–এর গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা ১৯৭৪ সালে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী পরিচালনার যে নীতিমালা করে যান, তারই আলোকে আমরা ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করেছি। আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে আরও শক্তিশালী ও যুগোপযোগী করতে সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’

পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলাটা জরুরি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতেই আমরা সশস্ত্র বাহিনীর জন্য নতুন নতুন অস্ত্রশস্ত্র জোগাড় থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং বিভিন্ন জায়গায় নতুন করে সেনানিবাসও গড়ে তুলেছি।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘দেশের জন্য যখন যেটা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট সচেতন এবং সেই পদক্ষেপ নিচ্ছি। কারণ, আমরা একটা পেশাদার ও প্রশিক্ষিত সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে শান্তিরক্ষী মিশনে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রেও আমাদের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হচ্ছে। আবার শান্তিরক্ষী মিশনে গিয়ে আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যেন আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা চলতে পারেন, যুদ্ধ সরঞ্জামের সঙ্গে যেন তাঁদের পরিচিতি থাকে এবং তাঁরা যেন যেকোনো ক্ষেত্রে ভূমিকা পালনে কোনো ধরনের দ্বিধাগ্রস্ত না হন, সে জন্য প্রশিক্ষণ ও আধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের বিষয়ে আমরা সচেতন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সব সময় এটা মনে করি, প্রশিক্ষণ, গবেষণা, দেশপ্রেম, মানুষের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ এবং মানুষের প্রতি ভালোবাসা—প্রতিটি মানুষের মাঝেই এসব চিন্তা থাকা উচিত। দেশমাতৃকার জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকারেই আপনারা সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা এখানে এসেছেন।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘সব সময় একটা কথাই মনে রাখবেন, অনেক রক্ত দিয়ে এই স্বাধীনতা অর্জন। কোনোক্রমেই আমরা একে ব্যর্থ হতে দিতে পারি না। বাংলাদেশ হবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ।’

ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ স্ট্র্যাটেজিক স্তরে একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে অসামরিক পরিমণ্ডলেও যথেষ্ট সমাদৃত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি উচ্চপদস্থ অসামরিক কর্মকর্তারা এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রভূত অবদান রেখে চলেছেন। কলেজের কমান্ড্যান্ট, সব ফ্যাকাল্টি সদস্য, রিসোর্স পারসনস ও স্টাফ অফিসারদেরও আন্তরিক ধন্যবাদ জানান তিনি।

বিদেশি সামরিক কর্মকর্তা, জনপ্রশাসন ও সশস্ত্র বাহিনীর ৮৫ জন কর্মকর্তা, ‘এনডিসি কোর্স-২০১৯’–এ এবং সশস্ত্র বাহিনীর ৩৮ জন কর্মকর্তা ‘এএফডব্লিউসি কোর্স-২০১৯’ অংশগ্রহণ করেন।

১৬টি দেশের সামরিক কর্মকর্তারা এতে অংশ নেন। দেশগুলো হচ্ছে চীন, মিসর, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, কুয়েত, মালয়েশিয়া, নেপাল, নাইজেরিয়া, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, তানজানিয়া, যুক্তরাজ্য, মালি ও নাইজার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে জাতির পিতা একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালেই দেশকে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে রেখে যেতে সমর্থ হন। যেখান থেকে এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গ্র্যাজুয়েশন লাভ করা সম্ভব হয়েছে, যা ধরে রাখতে হবে আগামী ২০২৪ সাল পর্যন্ত। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পাশাপাশি ১০ বছর ও ২০ বছর মেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনার বাস্তবায়ন এবং আগামীর প্রজন্মকে সুন্দর জীবন দেওয়ার জন্য নেদারল্যান্ডস সরকারের সহযোগিতায় শতবর্ষ মেয়াদি ‘ডেলটা পরিকল্পনা-২১০০’ প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের উদ্যোগের ও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে দুঃখ ও দারিদ্র্য আমরা দেখেছি, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তা যেন আর দেখতে না হয়, সে জন্য আমরা একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে রেখে যেতে চাই এবং উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা যেন অক্ষুণ্ন থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।’

ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের কমান্ড্যান্ট লেফটেন্যান্ট জেনারেল শেখ মামুন খালেদ অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তিন বাহিনীর প্রধান, মুখ্য সচিব, উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও অধ্যাপক, বিশিষ্ট নাগরিক, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও মিলিটারি অ্যাটাচিরা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। পরে শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত এনডিসি ও ডিএসসিএসির পরিচালনা পর্ষদের যৌথ সভাতেও যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী।