সমস্যা শুধু রিক্রুটিং এজেন্সির নয়, সবার: প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদ
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদ

সৌদি আরবে নারী কর্মী পাঠানো নিয়ে সৃষ্ট সংকট উত্তরণে আগামী সাত দিনের মধ্যে আলাদা বা সামষ্টিকভাবে মতামত জানাতে বেসরকারি খাতের জনশক্তি রপ্তানিকারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদ। তিনি বলেন, সমস্যা শুধু রিক্রুটিং এজেন্সির নয়, সবার। সবাই মিলেই সমাধান করতে হবে। সবার মধ্যে সমাধানের মানসিকতা থাকতে হবে।

আজ রোববার নারী কর্মীদের অধিকতর সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পর্যালোচনা ও রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়। সেখানে এসব কথা বলেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, শ্রমবাজার সংকুচিত হয়ে আসছে। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালু হলেও আগের মতো কর্মী পাঠানোর সুযোগ থাকবে না। সৌদি আরবেও কর্মী যাওয়া কমে যাচ্ছে। তাই নতুন শ্রমবাজার খুঁজে বের করতে সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।

মতবিনিময় সভায় বলা হয়, সৌদি আরবে যাওয়া নারী কর্মীদের এবং তাঁদের যারা পাঠায়, ওই সব এজেন্সির ৮০ শতাংশ স্বাক্ষর জাল (নকল)। অনিয়ম করে পাঠানো নারীদের কিছু তথ্য নমুনা হিসেবে দেখিয়েছে সৌদি আরবের সরকার। এভাবে চলতে থাকলে শ্রমবাজারের বিপর্যয় বাড়বে। তাই পরস্পরকে দোষারোপ না করে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

মতবিনিময় সভায় সৌদিতে নারী কর্মী পাঠানো বেসরকারি খাতের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর পক্ষ থেকে বিভিন্ন সমস্যা ও দাবি তুলে ধরেন ব্যবসায়ীরা। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম রেজা বলেন, ‘পুরো নিয়োগপ্রক্রিয়া দালালের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। যে নারীকে পাঠিয়েছেন, তাঁর চেহারাও দেখেননি। একটা মেয়েও এজেন্সির নাম জানে না। হিন্দু মেয়ে মুসলিম বানিয়ে, ১৫ বছর বয়সীকে ২৫ বছর বানিয়ে পাঠানোর শাস্তি হবে না? আপনাদের দায়িত্ব শুধু প্লেনে ওঠাবেন আর আমাদের অফিস অনুমোদন দেবে। এভাবে চলতে পারে না।’

এরপর একাধিক ব্যবসায়ী প্রতিবাদ করে বলেন, সব দোষ কি এজেন্সির, সরকারের কোনো দোষ নেই? বয়স বাড়িয়ে বা কমিয়ে পাসপোর্ট করে কীভাবে। এর উত্তরে প্রবাসীসচিব সেলিম রেজা বলেন, পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষ গাফিলতি করেছে, অন্যায় করেছে। কিন্তু নিয়োগের (রিক্রুট) প্রাথমিক শর্ত হচ্ছে সাক্ষাৎকার নেওয়া। কোনো এজেন্সি তা করে না। এভাবে ব্যবসা করা যাবে না।

ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, কিছু এনজিও (বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা) সমস্যা খুঁজে খুঁজে বের করে নারী কর্মী পাঠাতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। ক্ষুদ্র ঋণ চালু রাখতে এসব করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। এর উত্তরে সচিব বলেন, সরকারের সীমাবদ্ধতা আছে, আপনাদের তো নেই। আপনার নেতিবাচক প্রচারের বিপরীতে বিদেশ গিয়ে সফল হওয়া নারীদের তথ্য প্রচার করতে পারেন।

ব্যবসায়ীরা বলেন, নারী কর্মীদের অভিযোগ পাওয়ার পর সৌদি আরবের এজেন্সির কাছে সহায়তা চাইলেও পাওয়া যায় না। সৌদির নিয়োগপ্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত সিস্টেম ‘মোসানেদ’ শুধু তাদের স্বার্থ দেখে। তাই কোনো প্রতিকারও পাওয়া যায় না। অথচ দেশে অভিযোগ পেলেই লাইসেন্স সাময়িকভাবে স্থগিত করে দেওয়া হয়। তদন্তের আগে এটি না করার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এমনকি তাদের সার্ভার লক (সাময়িক স্থগিত) না করে বিকল্প শাস্তি দেওয়ার দাবি জানান তাঁরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে যাদের লাইসেন্স স্থগিত আছে, তাদের পাইপলাইনে থাকা কর্মীদের যাওয়ার ব্যবস্থা করতে জনশক্তি, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান ব্যুরোকে (বিএমইটি) নির্দেশনা দেন প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী।

সৌদি আরবের এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে সৌদি এজেন্সিকে কালো তালিকাভুক্ত করতে হবে, যাতে ওই এজেন্সি বাংলাদেশ থেকে আর কর্মী নিতে না পারে। বাংলাদেশে সৌদি দূতাবাসেও একটি চক্র কাজ করে বিভিন্ন অনিয়ম করে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ের কাছে দাবি জানান তাঁরা। এ ছাড়া বৈধভাবে পাঠানো কর্মীদের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হলে মানব পাচার আইনে মামলা না করার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

এর জবাবে সচিব বলেন, সৌদি এজেন্সি যদি অভিযোগের পরে সহায়তা না করে, তাহলে তাদের কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। দোষারোপ না করে একযোগে কাজ করতে হবে।

মতবিনিময় সভায় বিএমইটির মহাপরিচালক মো. শামছুল আলম, বেসরকারি খাতের জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার সভাপতি বেনজীর আহমদ, মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। শুরুতে নিবন্ধ পাঠ করেন যুগ্ম সচিব মো. যাহিদ হোসেন।