আবারও ফ্ল্যাট ব্যবসায় সিডিএ

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) আবারও ফ্ল্যাট বিক্রি করতে যাচ্ছে। নির্মাণাধীন ১৬৫টি ফ্ল্যাটের বর্গফুটপ্রতি ৫ হাজার টাকা দাম রেখেছে সংস্থাটি। যা একই এলাকায় বাস্তবায়িত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ফ্ল্যাটের দামের চেয়ে বেশি। সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বর্গফুটপ্রতি দাম আরও কম রাখার দাবি জানিয়েছেন আগ্রহী ক্রেতারা।

চট্টগ্রাম নগরের ২ নম্বর গেটের বেবি সুপার মার্কেট এলাকায় ‘সিডিএ স্কয়ার’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। প্রকল্পে ১৮ তলার দুটি ও ১৯ তলার একটি ভবন নির্মাণাধীন। এসব ভবনে ১ হাজার ৫০০, ১ হাজার ৮০০ এবং ২ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট আছে।

আগ্রহী ক্রেতাদের কাছে গত ২৮ নভেম্বর থেকে ফরম বিক্রি শুরু করেছে সিডিএ। চলবে আগামী ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। ভবনগুলোর নির্মাণকাজ শেষে ২০২২ সালে গ্রাহকদের কাছে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান প্রকল্পসংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।

সিডিএ সূত্র জানায়, আট বছর আগে এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। নকশা জটিলতা ও ফ্ল্যাট ব্যবসায় মন্দার কারণে প্রকল্পের নির্মাণকাজ দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। দুই বছর আগে নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৩৬ কোটি টাকা।

ফ্ল্যাট ব্যবসা সিডিএর কাজ নয় বলে মন্তব্য করেছেন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশের (আইইবি) চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার মজুমদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সিডিএর কাজ হচ্ছে অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও নগরায়ণকে নিয়ন্ত্রণ করা। এদিকে তাদের মনোযোগ কম। এখন ফ্ল্যাট বিক্রির জন্য তারা যে দর নির্ধারণ করেছে, তা সরকারি সংস্থা হিসেবে অবশ্যই বেশি।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, তিনটি ভবনের মধ্যে একটির সাততলা পর্যন্ত ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি দুটির কাজ হয়েছে দোতলা পর্যন্ত। প্রতিটি ভবনে ৩০-৪০ জন করে শ্রমিক কাজ করছিলেন।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টিবিএল-জাকির হোসেন জেভির প্রকল্প সমন্বয়ক প্রকৌশলী গোলাম হাক্কানি জানান, তাঁরা ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করার চেষ্টা করছেন।

বরাদ্দপ্রক্রিয়া শুরু করতেই ৮ বছর

সিডিএ ২০১১ সালের শেষের দিকে এই ফ্ল্যাট প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছিল। প্রকল্পের প্রশাসনিক অনুমোদন দেওয়া হয় ২০১২ সালের ১০ মার্চ। প্রথমবার এই প্রকল্পে দুটি ২২ তলা ও একটি ২৫ তলা ভবন নির্মাণ করার কথা ছিল। ওই সময় প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৫৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের করা পাইলের নকশায় জটিলতা থাকায় প্রকল্পের কাজ থমকে যায়। পরে ২০১৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নতুন করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে নকশা প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর কাজ শুরু হয়।

নির্মাণকাজে দেরি হওয়া প্রসঙ্গে সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক কাজী কাদের নেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় এনে নকশায় পরিবর্তন আনা হয়। ভবনগুলোর উচ্চতা কমিয়ে ১৮ ও ১৯ তলা করা হয়। আর ফাউন্ডেশনের (ভিত্তি) নকশাও পরিবর্তন করতে হয়। ফলে এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কাজ শুরু করতে সময় লেগেছে।

দাম বেশির অভিযোগ

এই প্রকল্পের আওতায় ২ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে ৪০টি। বর্গফুটপ্রতি ৫ হাজার টাকা হলে প্রতিটি ফ্ল্যাটের দাম পড়বে ১ কোটি টাকা। ১ হাজার ৫০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের দাম ৭৫ লাখ টাকা এবং ১ হাজার ৮০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের দাম হবে ৯০ লাখ টাকা। এ ছাড়া নিবন্ধন ফিও ক্রেতাকে দিতে হবে।

এই প্রকল্প এলাকার বিপরীতে পাশে মেয়র গলি, কসমোপলিটন আবাসিক এলাকা এবং ২ নম্বর গেট এলাকায় ফ্ল্যাট প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে কয়েকটি বেসরকারি আবাসন প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান বর্গফুটপ্রতি ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা করে বিক্রি করেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য ৫ হাজার টাকাও নেওয়া হয়েছে।

সিডিএর ফ্ল্যাটের দাম তুলনামূলক বেশি বলে মন্তব্য করেছেন আবাসন ব্যবসায়ী মালিকদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সহসভাপতি আবদুল কৈয়ুম চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সিডিএ একটি সেবা সংস্থা। তারা যদি ব্যবসা করে তাহলে এই খাতের ব্যবসায়ীরা কোথায় যাবেন? আবার সিডিএ যে এলাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, ওই এলাকায় রিহ্যাবের সদস্যরা ফ্ল্যাট বিক্রি করছেন সর্বোচ্চ ৪ হাজার টাকায়। দাম বেশি রাখার কারণে ফ্ল্যাট বিক্রি করতে সিডিএকে হিমশিম খেতে হবে। কাজীর দেউড়ির ক্ষেত্রেও যে রকম অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়েছিল।

নগরের মুরাদপুর এলাকার বাসিন্দা ও চাকরিজীবী মোরশেদুল আলম বলেন, সিডিএ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো দাম রেখেছে। এই দামে ফ্ল্যাট কেনা কষ্টসাধ্য।

সূত্র জানায়, নগরের কাজীর দেউড়িতেও একটি ফ্ল্যাট প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সিডিএ। এখানেও দাম রাখা হয়েছিল বর্গফুটপ্রতি ৫ হাজার টাকা। ২০০৯ সালে নেওয়া এই প্রকল্পে এখন পর্যন্ত ৬৪টি ফ্ল্যাটের মধ্যে বিক্রি হয়েছে ৫৭টি।

তবে দাম বেশি নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রকল্প পরিচালক কাজী কাদের নেওয়াজ। তাঁর দাবি, প্রকল্প এলাকায় যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকবে তাতে দাম বেশি নয়। ক্রেতারা একসঙ্গে কিংবা আট বছর মেয়াদে কিস্তিতে ফ্ল্যাটের মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন।

সিডিএ সূত্রের ভাষ্য, এই প্রকল্পে মোট জমির ৫৭ শতাংশ উন্মুক্ত থাকবে। শিশুদের জন্য খেলার মাঠ, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সিনেমা হল, জিমনেশিয়াম, ক্যাফেটেরিয়া, কমিউনিটি স্পেস, হেলিপ্যাডসহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকবে।