সৌদিতে নারী কর্মী পাঠাতে পারলেই লাভ এজেন্সির

গত তিন বছরে গড়ে প্রতিবছর ৭০ হাজারের বেশি নারী কর্মী গেছেন সৌদি আরবে। প্রথম আলো ফাইল ছবি
গত তিন বছরে গড়ে প্রতিবছর ৭০ হাজারের বেশি নারী কর্মী গেছেন সৌদি আরবে। প্রথম আলো ফাইল ছবি

যেকোনোভাবে সৌদি আরবে একজন নারী কর্মী পাঠাতে পারলেই অন্তত ১ হাজার মার্কিন ডলার বা প্রায় ৮৫ হাজার টাকা লাভ হয় একটি রিক্রুটিং এজেন্সির (জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান)। বেশি লাভের উদ্দেশ্যে যাচাই–বাছাই ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না করেই নারীদের সেখানে পাঠানো হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নারী কর্মী বাছাইয়ের কাজটি নিজেরা না করে পুরোপুরি দালালদের ওপর ছেড়ে দিয়েছে বেশির ভাগ এজেন্সি।

একজন নারী কর্মী সৌদি আরবে পৌঁছার পর বাংলাদেশি এজেন্সির ব্যাংক হিসাবে অন্তত ২ হাজার মার্কিন ডলার জমা দেয় সৌদি এজেন্সি। আর নারী কর্মী পাঠাতে সব মিলিয়ে খরচ পড়ে ১ হাজার মার্কিন ডলার। ফলে যত কর্মী, তত মুনাফা।

নারী গৃহকর্মী পাঠাতে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে চুক্তি সই হয়। এরপর থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২ লাখ ৯৩ হাজার ৫৮৮ নারী সৌদি আরবে গেছেন। নারী কর্মী পাঠানোর পর থেকেই নির্যাতনের নানা অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতনসহ নানা কারণে গত তিন বছরে সাড়ে আট হাজার নারী কর্মী চুক্তি শেষ হওয়ার আগেই ফিরে এসেছে। ফিরে আসা নারীদের অনেকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ভয়াবহ বিবরণ দেন। এসব প্রকাশ হলে জাতীয় সংসদেও নারী কর্মী পাঠানো বন্ধে দাবি ওঠে।

ধর্মীয় পরিচয় গোপন করে লালমনিরহাটের আরতি রানীকে কয়েক মাস আগে সৌদি আরবে পাঠায় একটি এজেন্সি। যে বাসায় নারী গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছিলেন তিনি, সেখানে তাঁর ধর্মীয় পরিচয় গোপন করার বিষয়টি ধরা পড়ে। এরপর তাঁকে বাসা থেকে বের করে দেন সৌদি গৃহকর্তা। গত ২৬ নভেম্বর আরতি আশ্রয় নেন রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে (সেফ হোম)।

আরতিকে দেশে ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি ঘটনাটির তদন্ত শুরু করেছে সরকার। তবে কোন এজেন্সি আরতিকে সৌদি আরবে পাঠিয়েছে, তা এখন পর্যন্ত বের করতে পারেনি দূতাবাস। তাঁর সঙ্গে পাসপোর্ট না থাকায় বিস্তারিত তথ্য জানতে পারছে না প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ও।

 মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ধর্মীয় পরিচয় লুকানোর ঘটনা এটিই হয়তো প্রথম নয়। কম বয়সী মেয়েদের বয়স বাড়িয়ে এবং বেশি বয়সী নারীদের বয়স কমিয়ে পাঠানো হচ্ছে সৌদিতে। বয়স লুকানো, যথাযথ প্রশিক্ষণ না দেওয়া, স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করে সৌদি আরবে পাঠানোর ক্ষেত্রে বেশ কিছু এজেন্সির অনিয়ম খুঁজে পেয়েছেন তাঁরা।

এসব অনিয়মের জন্য রিক্রুটিং এজেন্সিকে দায়ী করছে মন্ত্রণালয়। আর এজেন্সি বলছে, বয়স, পরিচয় লুকিয়ে কেউ সৌদি আরবে গেলে তার দায় সরকারের। এর কারণ পাসপোর্ট, জাতীয় পরি
চয়পত্র যাচাইয়ের কাজটি এজেন্সি নয়, করে সরকার।

দালালের হাতেই সব কাজ

সৌদি আরবে নারী কর্মী পাঠানোর অনুমোদন রয়েছে প্রায় ৬৫০টি এজেন্সির। এদের প্রায় সবাই দালালের মাধ্যমে মাঠপর্যায় থেকে নারী কর্মী সংগ্রহ করে। পাসপোর্ট, পুলিশের ছাড়পত্র, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি—সবই করে দালাল। এর ফলে নারী কর্মীরা অনেক সময় এজেন্সির নামও পর্যন্ত জানেন না এবং দালালের বাইরে কাউকে চেনেন না। পদে পদে ঘুষ দিয়ে নানা অনিয়ম করে নারী কর্মীদের পার করে দিচ্ছেন দালালেরা।

সাতটি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের সঙ্গে কথা বলে নারী কর্মী পাঠানো নিয়ে আয়-ব্যয়ের একটি চিত্র পাওয়া গেছে। তাঁরা জানান, নারী কর্মীপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় দালালের সঙ্গে চুক্তি করে এজেন্সি। দালালকে দেওয়া খরচের বাইরে বিদেশে যাওয়ার আগে বিএমইটি থেকে ছাড়পত্র নেওয়ার সময় প্রতি কর্মীর জন্য সাড়ে ৩ হাজার টাকা ‘কল্যাণ ফি’ জমা দেয় এজেন্সি। আর ঢাকা থেকে সৌদি আরবের একমুখী টিকিটে এজেন্সির ব্যয় হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। সব মিলে একজন নারী কর্মী পাঠাতে এজেন্সি ব্যয় করে ৮০ থেকে ৮৫ হাজার টাকা।

১ হাজার ২০০ কোটি টাকার বাণিজ্য

>

কর্মী পাঠাতে নানা অনিয়মের জন্য ১৬৭টি এজেন্সির লাইসেন্স স্থগিত করেছে সরকার। এর ৭০ শতাংশই নারী কর্মী পাঠাতে অনিয়ম করেছিল।

বিএমইটি বলছে, ২০১৮ সালে সৌদি আরবে নারী কর্মী গেছেন ৭৩ হাজার ৭১৩ জন। ২০১৭ সালে ৮৩ হাজার ৩৫৪ জন। আর এ বছর নভেম্বর পর্যন্ত গেছেন ৫৮ হাজার ২৮৩ জন। গত তিন বছরে গড়ে প্রতিবছর ৭০ হাজারের বেশি নারী কর্মী গেছেন সৌদি আরবে। ফলে প্রতি কর্মীর জন্য ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা করে বছরে গড়ে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা পাচ্ছে এজেন্সিগুলো।

বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সহজে টাকার বাণিজ্য করতেই মানুষকে ‘দাস’ হিসেবে কেনাবেচার মানসিকতা দেখাচ্ছে এজেন্সিগুলো। আর দালালেরা যেভাবে পারছেন, যাকে পাচ্ছেন, তাকেই পাঠিয়ে দিচ্ছেন। পুরোটাই টাকার খেলা।

বেসরকারি খাতের জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রা বলছে, একজন নারী কর্মী সৌদি আরবে যাওয়ার তিন মাসের মধ্যে বাসা ছেড়ে পালিয়ে গেলে আরেকজন পাঠাতে হয়। সে ক্ষেত্রে তারা নতুন করে কোনো টাকা পায় না। এতে লোকসান হয়। যদিও সরকারি হিসাব বলছে, সৌদি আরবে যাওয়া প্রায় তিন লাখ নারীর মধ্যে চুক্তির আগে দেশে ফিরেছেন সাড়ে ৮ হাজার নারী। এঁদের সবাই তিন মাসের মধ্যে ফেরেননি বলে জানা গেছে। তবে সরকারি হিসাবের বাইরে আরও অনেকে ফিরে এসেছেন বলে দাবি করেছে বায়রা।

বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী দাবি করেন, একটি এজেন্সি একজন কর্মী পাঠিয়ে ২০০ ডলারের বেশি আয় করতে পারে না। আর ১০ জন নারী কর্মীর একজন ফেরত এলেই সেই আয়ও খরচ হয়ে যায়। এ অবস্থায় বাইরে থেকে মুনাফা হিসাব করা অনেক সহজ মনে হয়।

নারী কর্মী পাঠানো নিয়ে বিভিন্ন অনিয়ম দূর করতে সম্প্রতি প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই ১৫ ডিসেম্বর নারী কর্মী পাঠানো এজেন্সিগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে মন্ত্রণালয়। সভায় বায়রার ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম রেজা বলেন, ‘পুরো নিয়োগপ্রক্রিয়া দালালের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। যে নারীকে পাঠিয়েছেন, তাঁর চেহারাও দেখেননি। একটা মেয়েও এজেন্সির নাম জানে না। আপনাদের দায়িত্ব শুধু প্লেনে ওঠাবেন আর আমাদের অফিস অনুমোদন দেবে। এভাবে চলতে পারে না।’

বয়স বাড়ানো-কমানো

সৌদি আরবে নারী কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন বয়স ২৫ আর সর্বোচ্চ ৪৫। কিন্তু এটি মানা হচ্ছে না। সৌদি আরবে নারী কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে গত ২১ নভেম্বর রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়। এতে দেখা গেছে, বয়স বাড়িয়ে ছয়জন নারীকে সৌদি আরবে পাঠিয়েছে ছয়টি এজেন্সি। এগুলো হচ্ছে কনকর্ড অ্যাপেক্স, আল হাসিব ওভারসিজ, বার্সেলোনা ওভারসিজ, মডেল এভিয়েশন, ইস্ট ওয়েস্ট ট্রেড লিংকার্স ও আল মাস ইন্টারন্যাশনাল। এ ছাড়া নির্ধারিত বয়সের চেয়ে আট নারীর বয়স কমিয়ে পাঠানোর তথ্য পায় দূতাবাস। এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সাতটি এজেন্সি হচ্ছে তানিয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, এটিবি ওভারসিজ, ভেলি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, মাদার ওভারসিজ সিস্টেমস, রিফা ইন্টারন্যাশনাল, মারুফ ইন্টারন্যাশনাল ও উইন্টার ওভারসিজ।

চিঠি পাওয়ার পর এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে প্রবাসী মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এরপর ১৪টি এজেন্সির মধ্যে ১৩টির লাইসেন্স সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে বিএমইটি। এসব এজেন্সির বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।

এ বিষয়ে বিএমইটির মহাপরিচালক মো. শামছুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, অনিয়ম করে কোনো এজেন্সি যাতে ছাড় না পায়, তা নিশ্চিত করা হবে। তদন্ত শেষে সবার বিরুদ্ধেই আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই সৌদি আরবে

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো চিঠিতে দূতাবাস যথাযথ প্রশিক্ষণ ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করে সৌদি আরবে পাঠানো ৪১ জন নারী কর্মীর তথ্য উল্লেখ করেছে। এর মধ্যে প্রশিক্ষণ ও কোনো ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই ৯ জন নারী সৌদি আরবে গেছেন। আর শুধু স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়া গেছেন ১১ জন নারী। এসব অনিয়মে জড়িত এজেন্সিগুলো হচ্ছে মোহনা ওভারসিজ, কনকর্ড অ্যাপেক্স, মাদানি ট্রাভেলস, মাসুম ব্রাদার্স সিন্ডিকেট, ইস্ট ওয়েস্ট ট্রেড লিংকার্স, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এক্সপোর্ট লিমিটেড, তসলিম এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, আল আবেদীন ইন্টারন্যাশনাল, টপ টেন ওভারসিজ, দ্য গাজীপুর এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, নেইবার অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড, এ হালিম ইন্টারন্যাশনাল, দ্য কাজী রিচ ওভারসিজ, প্রবাসী ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, আল জুবাদী ইন্টারন্যাশনাল, আল মাহমুদ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, রোজ এভিয়েশন সিস্টেম ও আল মামুন ওভারসিজ।

অভিযুক্ত দ্য গাজীপুর এয়ার ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মো. ফেরদৌস আহমেদ ও টপ টেন ওভারসিজের মাহবুব হোসেন স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়া নারী কর্মী পাঠানোর অভিযোগ অস্বীকার করেন।

নিচ্ছে না যথাযথ প্রশিক্ষণ

 ২১ জন নারীকে যথাযথ প্রশিক্ষণ না দিয়ে পাঠানোর তথ্য পেয়েছে সৌদি দূতাবাস। এসব এজেন্সির মধ্যে আছে মাস ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, বার্সেলোনা ওভারসিজ, আল নাজাহ ওভারসিজ লিমিটেড, লিডস এইচ আর সলিউশন লিমিটেড, সন্ধানী ওভারসিজ লিমিটেড, মডেল এভিয়েশন সার্ভিসেস, এস এম ইন্টারন্যাশনাল, এম এইচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, আদীব এয়ার ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, রানওয়ে ইন্টারন্যাশনাল, অপরাজিতা ওভারসিজ ও নেমিরা ওভারসিজ।

অভিযুক্ত একাধিক এজেন্সির কর্মকর্তারা বলছেন, প্রশিক্ষণ হয় প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি)। সেখানে যদি যথাযথ প্রশিক্ষণ না হয়, তাহলে দায় এজেন্সির হয় কীভাবে।

তবে বিএমইটির কর্মকর্তারা বলছেন, এজেন্সি নিযুক্ত দালালেরা ঘুষ দিয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণ না নিয়ে টিটিসির কাছ থেকে সনদ সংগ্রহ করতেন। এখন বাধ্যতামূলক আবাসিক প্রশিক্ষণের নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

সৌদিতে নারীরা আত্মহত্যা করছেন

গত তিন বছরে নির্যাতন, দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন কারণে সৌদি আরব থেকে লাশ হয়ে ফেরা ৩১১ নারীর তথ্য পর্যালোচনা করেছে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। তাতে দেখা গেছে, ওই ৩১১ জনের মধ্যে আত্মহত্যা করেছেন ৫৩ নারী।

সৌদি আরবে আত্মহত্যা ও হত্যার শিকার হওয়া ১৬ জন নারীকে পাঠানোর সঙ্গে জড়িত ১৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স স্থগিত করা হয় গত ৩১ অক্টোবর। এগুলো হচ্ছে উম্মুল কুরা ওভারসিজ, রাবাহ ইন্টারন্যাশনাল, দ্য গাজীপুর এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, হাবিব অ্যাসোসিয়েটস, আল-জাবীন এস্টাবলিস্টমেন্ট লিমিটেড, সৌদিয়া রিক্রুটিং এজেন্সি, ইউনিভার্সাল ওভারসিজ, আল রাহাত এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, আল মোবারক ইন্টারন্যাশনাল, এইচ এ ইন্টারন্যাশনাল, টপ টেন ওভারসিজ, আমির এভিয়েশন লিমিটেড, এয়ারওয়ে ইন্টারন্যাশনাল, এনএমএসএস ইন্টারন্যাশনাল, আল শিকদার ইন্টারন্যাশনাল। একই সঙ্গে সম্প্রতি নির্যাতিত হয়ে ফিরে আসা সুমি আক্তারকে পাঠানোর সঙ্গে জড়িত দুটি এজেন্সি জ্যোতি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও রূপসী বাংলা ওভারসিজের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ১৭টি এজেন্সির বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।

অভিযুক্ত হাবিব অ্যাসোসিয়েটসের স্বত্বাধিকারী হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, লাইসেন্স স্থগিত করার কারণ তিনি জানেন না। আগেও তাঁর এজেন্সির লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছিল।

আর ইউনিভার্সেল ওভারসিজের স্বত্বাধিকারী এ কে এম বজলুর রহমান বলেন, তিন বছরে ১ হাজার ৪০০ নারী কর্মী তিনি সৌদি আরবে পাঠিয়েছেন। একজন আত্মহত্যা করেছেন।

১৬৭ এজেন্সির লাইসেন্স স্থগিত

নাম না প্রকাশের শর্তে বিএমইটির একজন কর্মকর্তা জানান, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে নানা অনিয়মের দায়ে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৬৭টি রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স স্থগিত করেছে সরকার। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ এজেন্সির বিরুদ্ধে নারী কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে নানা অনিয়মের অভিযোগ ছিল।

বিএমইটির কর্মকর্তারা বলছেন, কোনো এজেন্সির লাইসেন্স স্থগিত করার অর্থ হচ্ছে অভিযোগ যাচাই-বাছাই নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই এজেন্সি আর কোনো কর্মী পাঠাতে পারবে না।

সার্বিক বিষয়ে অভিবাসন খাতের গবেষণা প্রতিষ্ঠান রামরুর চেয়ারপারসন তাসনিম সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, নারী কর্মী নিয়ে অনিয়মের দায় কোনোভাবেই রিক্রুটিং এজেন্সি এড়াতে পারে না। এখন সরকার বিভিন্ন অনিয়ম খুঁজে বের করছে। প্রবাসী আয়ের ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতেই সরকারকে আরও শক্ত হাতে ব্যবস্থা নিতে হবে।