শিশু ধর্ষণের অভিযোগ, সালিসে মীমাংসার চেষ্টা

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ফুচকা খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে পাঁচ বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগের চার দিন পেরিয়ে গেলেও মামলা হয়নি। আবার গ্রামের একটি পক্ষ ঘটনাটি থানা পর্যন্ত না গড়ানোর অনুরোধ নিয়ে শিশুটির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। তবে শিশুটির পরিবারের চাওয়া, সামাজিক সালিসিতে নয়, অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি উদ্যোগ নেওয়া।

শিশুটিকে বর্তমানে কিশোরগঞ্জের ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ঘটনাটি ঘটে গত শুক্রবার রাতে উপজেলার কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নে।

শিশুটির পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য, শুক্রবার বাড়ির আঙিনায় ওয়াজ মাহফিল চলছিল। ওয়াজ মাহফিল ঘিরে বাড়ির সামনে খেলনা ও ফুচকার দোকান বসে। শিশুটি তখন ঘরের বাইরে খেলছিল। এ সময় লাগোয়া বাড়ির সাকিল মিয়া নামের এক তরুণ শিশুটিকে ফুচকা খাওয়াবেন বলে ডেকে নিয়ে যান। শাকিলের বাবার নাম আল আমিন। ডেকে নেওয়ার সময় শিশুটির বড় বোন পাশে ছিল। একপর্যায়ে সাকিল শিশুটিকে কৌশলে বাড়ির পাশের কলাবাগানে নিয়ে ধর্ষণ করে চলে যান। কিছুক্ষণ পর শিশুটি কান্নাকাটি করে বাড়ির দিকে এগিয়ে আসে। তখন বড় বোন দেখতে পেয়ে এগিয়ে যায়। মা দেখতে পান শিশুটির জামা রক্তে ভিজে আছে। শিশুটির কাছ থেকে বর্ণনা শুনে তাঁরা ধর্ষণের বিষয়ে নিশ্চিত হন। রাতেই শিশুটিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। খবর পেয়ে ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহিনও হাসপাতালে যান। সব শুনে শিশুটিকে রাতেই কিশোরগঞ্জে পাঠানো হয়। সেখানে তার ডাক্তারি পরীক্ষা হয়েছে। এখন পরিচর্যা চলছে।

শিশুটির পরিবারের অভিযোগ, ঘটনার রাত থেকে কয়েকজন প্রভাবশালী বিষয়টি সামাজিক সালিস বসিয়ে অর্থদণ্ড দিয়ে মীমাংসা করার চেষ্টায় আছেন। কয়েক মাসে এই ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ধর্ষণ হলেই একটি প্রভাবশালী পক্ষ সামাজিক সুরাহার বিষয়ে স্বেচ্ছায় উদ্যোগী হয়ে আসছেন। শেষ পর্যন্ত পক্ষটির জন্য এই ইউনিয়নের ধর্ষণের বেশির ভাগ ঘটনা থানা পর্যন্ত না গড়িয়ে হয় অর্থদণ্ড, না হয় জুতাপেটার মাধ্যমে মীমাংসা হয়ে আসছে। তবে তাঁরা কোনো চাপে নতি স্বীকার করতে চান না। চান না বলেই ঘটনার রাতেই সামাজিক চাপ উপেক্ষা করে থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

শিশুটির মামা বলেন, ‘টাকা নিয়ে মীমাংসা করে ফেলার প্রস্তাব আসছে। আমরা গ্রামের লোকজনকে উপেক্ষা করতে পারছি না। আবার আপস করতেও মন চাচ্ছে না।’ চাচা বলেন, ‘শুক্রবার রাতেই ওসি সাহেবের সঙ্গে দেখা করে সব জানিয়ে এসেছি। লিখিত অভিযোগও জমা দিয়ে দিয়েছি। চার দিন পার হয়ে গেল। অথচ কেন জানি মামলাটা এফআইআর হচ্ছে না। আসামিও আটক হচ্ছে না।’

শিশুটির মা বলেন, ঘটনার পরদিন সাকিলের পরিবারের লোকজন তাঁদের সঙ্গে ঝগড়া করেন। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার হুমকি দেন। তাঁরা পুলিশকে জানিয়েছেন। পুলিশ এসে ঘুরেও গেছে। কোনোভাবেই টাকা লেনদেনের মাধ্যমে বিষয়টি শেষ করতে চান না তাঁরা। ঘটনার পর থেকে সাকিল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা ঘরে তালা ঝুলিয়ে অন্যত্র অবস্থান নিয়েছেন। এ জন্য চেষ্টা করেও সাকিল বা তাঁদের পরিবারের অন্য কারোর সঙ্গে কথা বলা যায়নি। সাকিল পেশায় জুতা ব্যবসায়ী।

ওসি মোহাম্মদ শাহিন বলেন, আলামত সংরক্ষণ ও পরিচর্যার জন্য শিশুটিকে ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করানো হয়েছে। পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

অভিযোগ দেওয়ার পরও মামলা হিসেবে গ্রহণ না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমি শিশুটির পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পাইনি। পেলে অবশ্যই অভিযোগ মামলা হিসেবে গ্রহণ হতো।’