'বাবা আমারে নিলা না, কাল লাশ নিয়ো'

মেয়ের শোকে বিলাপ করছেন বাবা জালাল উদ্দিন ফকির। ছবিটি আজ মঙ্গলবার সকালে টঙ্গী পূর্ব থানার সামনে থেকে তোলা। ছবি: আল-আমিন
মেয়ের শোকে বিলাপ করছেন বাবা জালাল উদ্দিন ফকির। ছবিটি আজ মঙ্গলবার সকালে টঙ্গী পূর্ব থানার সামনে থেকে তোলা। ছবি: আল-আমিন

স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির নির্যাতনের কথা তুলে রাতে বাবাকে ফোনে বাড়ি ফিরিয়ে নিতে তাগাদা দিয়েছিলেন মেয়ে। বাবা আশ্বাস দিয়েছিলেন সকাল হলেই তিনি আসবেন। সকালে তিনি ঠিকই মেয়েকে বাড়ি ফিরিয়ে নিলেন, তবে জীবিত নয়, মৃত।

মেয়ে তানজিনা আক্তার ওরফে মেরিনের (১৯) সঙ্গে ফোনালাপের কথা তুলে ধরে আজ মঙ্গলবার থানায় বসে বুক চাপড়ে কাঁদছিলেন বাবা জালাল উদ্দিন ফকির। তাঁর দাবি, তাঁর মেয়েকে নির্যাতন করে মেরে ফেলেছেন স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
তানজিনার স্বামী মো. মিজানের দাবি, গতকাল সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টার দিকে তানজিনা ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

তানজিনার বাবা জানান, এ বছরের মার্চ মাসে মিজানের সঙ্গে বিয়ে হয় তানজিনার। তিনি স্বামীর সঙ্গে গাজীপুরের টঙ্গীর চেরাগ আলী এলাকায় থাকতেন। সেখানে মিজানের স্যানিটারির দোকান রয়েছে। বিয়ের পর থেকেই মিজান ও তাঁর ভাবি নানা বিষয় নিয়ে তানজিনাকে মারধর ও নির্যাতন করতেন বলে অভিযোগ করেন বাবা।

তানজিনার বাড়ি নেত্রকোনার পূর্ব ধলা উপজেলার যোগীর গুহা গ্রামে। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়।

মেয়ের সঙ্গে গতকাল রাত ১০ টার দিকে ফোনালাপের কথা তুলে ধরে আহাজারি করে বাবা জালালউদ্দিন বলেন, ‘মেয়ে বলছিল, বাবা তুমি আমারে আইসা নিয়া যাও। ওরা আমারে শান্তি দিতাছে না। আমারে মাইরা লাইবো।’ তিনি মেয়েকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলেন, ‘এখন রাত অনেক, গাড়ি-ঘোড়া চলে না। সকাল হওয়ার আগেই নিতে আসব।’

রাত সাড়ে ১১টার দিকে শেষ বাবারের মতো বাবাকে ফোন দিলেন তানজিনা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, ‘বাবা তুমি আমারে নিলা না, কাল সকালে লাশ নিয়ো।’ এই বলেই ফোনের সংযোগ কেটে দেন। এরপর থেকে তানজিনার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে ফোন দিয়েও পাননি বাবা। রাত একটার দিকে তাঁকে খবর দেওয়া হলো তানজিনা মারা গেছেন।

খবর পেয়ে সকালেই টঙ্গীতে ছুটে আসেন জালালউদ্দিন। টঙ্গীর পূর্ব থানায় মেয়ের লাশের পাশে বসে বুক চাপড়ে বলছিলেন, ‘রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্তও মেয়ের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমার কাছে কান্নাকাটি করেছে। আমি তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলছি, সকাল হওয়ার আগেই আমি নিতে আসব। কিন্তু ওরা সকাল হতে দিল না।’

তানজিনার মৃত্যুর ঘটনায় আটক করা হয়েছে স্বামী মো. মিজান ও তাঁর চাচাতো ভাই সালমানকে। হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে মিজান বলেন, ‘আমরা পাশের ঘরে টিভি দেখছিলাম। রাত সাড়ে ১২ টার দিকে রুমে গিয়ে দেখি সে (তানজিনা) ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছে, দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে সে মারা যায়।’

টঙ্গী পূর্ব থানার ডিউটি অফিসার আবদুস সালাম বলেন, খবর পেয়ে টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল থেকে তানজিনার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।