সরকারের প্রাধান্যের তালিকায় জনস্বার্থ নেই: সুলতানা কামাল

‘দলিত ও সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানবাধিকার পরিস্থিতি ২০১৯’-এর প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল। ছবি: প্রথম আলো
‘দলিত ও সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানবাধিকার পরিস্থিতি ২০১৯’-এর প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল। ছবি: প্রথম আলো

মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেছেন, সরকারের প্রাধান্যের তালিকায় এখন আর জনস্বার্থ নেই, আছে অন্য কিছু। সমতা, সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা—এগুলো এখন আর বিবেচিত হয় না।

‘দলিত ও সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানবাধিকার পরিস্থিতি ২০১৯’-এর প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে কথাগুলো বলেন সুলতানা কামাল। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর আয়োজন করে ন্যাশনাল অ্যাডভোকেসি প্ল্যাটফর্ম। সহযোগিতায় ছিল সেন্টার ফল সোশ্যাল অ্যাক্টিভিজম ও হেকস ইপার।

চলতি বছর দলিত ও সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের মানবাধিকার পরিস্থিতি আগের সময়ের চেয়ে খারাপ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি পরিমাণ হয়েছে জমি দখল। আবার জমির কারণে তারা সহিংসতারও শিকার হয়েছেন। বিষয়গুলো তুলে ধরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্য পৃথক ভূমি কমিশনের দাবি দীর্ঘদিন ধরে করা হচ্ছে। আবার বৈষম্যের হাত থেকে দলিতদের সুরক্ষা দিতে বৈষম্য বিলোপ আইনটি ছয় বছর ধরে ঝুলে আছে। কিন্তু কোনোটিতে সরকারের দৃষ্টি নেই।

সুলতানা কামাল বলেন, কোনো কোনো সময় পাঁচ মিনিটেই আইন পাস হয়। সেসব আইনে মুহূর্তের মধ্যে মানুষের অধিকার হরণ হয়। কিন্তু প্রান্তিক মানুষের প্রয়োজনীয় আইন ঝুলে থাকে। এসব প্রমাণ করে, অধিকারহীন মানুষের স্বার্থের বিষয়টি এখন আর সরকারের প্রাধান্যের তালিকায় নেই। তারা হয়তো মনে করে, এসব মানুষের কথা শুনে তাদের লাভ নেই। অথচ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বলে পরিচিত এই সরকারের কাছে সবার প্রত্যাশা বেশি। কিন্তু সরকার তার প্রত্যয় থেকে, প্রতিজ্ঞা থেকে সরে গেছে। এটা হতাশার কথা।

অনুষ্ঠানে মানবাধিকার প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং। তিনি বলেন, চলতি বছর সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও দলিত সম্প্রদায়ের মানুষদের বিরুদ্ধে ৪১টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মামলা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আবার অভিযুক্তদের ছেড়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

সঞ্জীব দ্রং বলেন, দলিত ও সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের সুরক্ষায় আইনি কাঠামো অত্যন্ত দুর্বল।

অনুষ্ঠানে মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির বলেন, দলিত সম্প্রদায়ের মানুষেরা প্রতিনিয়ত বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।

দলিত নেত্রী বনানী বিশ্বাস বলেন, সামন্য যে সম্পদ দলতি বা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর আছে, সেটুকুতেও অনেকের দৃষ্টি। আর একে গ্রাস করতে এসব সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর পীড়ন চলে।

অনুষ্ঠানে হেকস ইপারের কর্মকর্তা নুরুন নাহার বলেন, দলিত ও সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করতে হবে। এর জন্য গণমাধ্যমের দায়িত্ব অনেক।