সুনামগঞ্জে রাজাকারের তালিকা নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষোভ

সুনামগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা হুসেন বখত। তাঁর তিন ছেলে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় হুসেন বখতের ছেলে সুবাস বখতের নাম রয়েছে। অথচ তিনি মুক্তিযোদ্ধা।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় সুনামগঞ্জের ২১ জনের নাম পাওয়া গেছে। তবে অনেকের নাম–ঠিকানায় ভুল রয়েছে। আবার কারও কারও বাবার নাম–ঠিকানা উল্লেখ নেই। এই তালিকা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন সুনামগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধারা।

সুনামগঞ্জের প্রবীণ আইনজীবী ও মুক্তিযোদ্ধা আলী আমজাদ বলেছেন,‘সুবাস বখত আমার সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। তাঁর বাবা সুনামগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন। এই তালিকা প্রকাশের বিষয়টিতে কোনো ষড়যন্ত্র আছে কি না, দেখতে হবে।’

তালিকা পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, তালিকায় সুনামগঞ্জের একই নাম দুবার, তিনবার করে লেখা রয়েছে। তালিকায় নাম আসা সুনামগঞ্জের ব্যক্তিরা হলেন জেলার ধরমপাশা উপজেলার মাইজবাড়ী গ্রামের মিসবাহ উদ্দিন চৌধুরী। জামালগঞ্জ উপজেলার সুখদেবপুর গ্রামের জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন নেতা মৌলভী সিরাজুল ইসলাম। দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের ফয়জুন্নুর চৌধুরী, শাল্লা উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের আবদুল খালেক, জগন্নাথপুর উপজেলার আজিজুর রহমান চৌধুরী, সুনামগঞ্জ শহরের এম মনসুর আলী, আবদুস সালাম, আবু হানিফা আহমদ, মাহমুদ আলী, ফারুক চৌধুরী, তজম্মুল হোসাইন চৌধুরী; সদর উপজেলার জানিগাঁওয়ের কামরুল ইসলাম; জগন্নাথপুর উপজেলার জহিরপুরের এ বি এম মনির উদ্দিন, ছাতক উপজেলার করিদিরচরের আবদুল মতিন ও মাদমাবপুরের আবদুল হাই, জামালগঞ্জের বিছনা এলাকার সিদ্দিক আলী আফিন্দী।

সুনামগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আবু সুফিয়ান প্রথম আলোকে বলেছেন,‘রাজাকারের তালিকায় সুনামগঞ্জের যে কজনের নাম এসেছে, তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন পরিচিত, আবার কেউ কেউ আছেন যাঁদের আমরা চিনি না। আবার যাঁরা যুদ্ধদিনে কুখ্যাত রাজাকার হিসেবে সব মহলে পরিচিত ছিলেন, তাঁদের অনেকের নামই আসেনি। এই তালিকা প্রকাশ কোনো কাজের কাজ হয়নি, এটা একটা বিভ্রান্তিকর ব্যাপার হয়েছে।’

মুক্তিযোদ্ধারা বলেছেন, যুদ্ধদিনে যাঁরা সুনামগঞ্জে কুখ্যাত রাজাকার হিসেবে পরিচিত ছিলেন, যাঁদের এখনো মানুষ একনামে চিনে, তাঁদের অনেকের নামই তালিকায় নেই। এই তালিকাটি ‘হাস্যকর’।

মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান উদাহরণ দিয়ে বলেন, সুনামগঞ্জের ছাতকে ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যায় জড়িত একজন রাজাকার, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার কুখ্যাত আরেক রাজাকারে নাম তালিকাই নেই। এ রকম জেলার আরও কুখ্যাত রাজাকার আছেন, যাঁদের সবাই চিনে, কিন্তু তালিকায় তাঁদের নাম আসেনি। তিনি বলেন,‘এই তালিকা নিয়ে দেশজুড়ে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষজনের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এই বিভ্রান্তি সৃষ্টির পেছনে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’