দালাল আইনে মামলা থাকা ব্যক্তিদের নাম রাজাকারের তালিকায়: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ফাইল ছবি
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ফাইল ছবি

রাজাকারের তালিকা তৈরিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রাথমিকভাবে দালাল আইনে যাদের নামে মামলা হয়েছিল, সেই তালিকাটা পাঠিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তালিকার সঙ্গে কিছু মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু রাজাকারের তালিকা তৈরির সময় বিষয়টি নিবিড়ভাবে যাচাই-বাছাই করে দেখা হয়নি বলে মনে করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় রাজাকারের লিস্ট করবে। আমাদের কাছে তারা চিঠি পাঠিয়েছিল, আমাদের কাছে যে সমস্ত তথ্য আছে সেগুলো যেন পাঠানো হয়। রাজাকারের লিস্ট তৈরি করা দুরূহ ব্যাপার। আমরা প্রাথমিকভাবে দালাল আইনে যাদের নামে মামলা হয়েছিল, সেই দালাল আইনের লিস্টটা পাঠিয়েছি। সেই লিস্টে আমরা মন্তব্য করে দিয়েছি, অনেকের নামের মামলা উইথড্র করা হয়েছিল। সেটা তালিকায় যথাযথভাবে আসেনি। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের রাজাকারের তালিকা আরও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত হবে।’

আসাদুজ্জামান খান কামাল নিবিড়ভাবে যাচাই-বাছাই করে পূর্ণাঙ্গ রাজাকারদের তালিকা তৈরি করতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন।

মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন। ‘মহান বিজয় দিবস ২০১৯ উদ্‌যাপন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চলমান দুর্নীতি, মাদক ও মজুতদারের বিরুদ্ধে অভিযানে কৃষক লীগের একাত্মতা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় আয়োজন করে বাংলাদেশ কৃষক লীগ। এতে সভাপতিত্ব করেন কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ।

গত রোববার একাত্তরের রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও স্বাধীনতাবিরোধী ১০ হাজার ৭৮৯ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের নথি পর্যালোচনা করে প্রথম ধাপে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়।

কিন্তু তালিকায় রাজশাহী, বরগুনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও বগুড়ায় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার নাম এসেছে, যাঁরা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে পরিচিত। এসেছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার নামও। ফলে এই তালিকা নিয়ে ওই সব এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে এই তালিকা সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন।

তবে এরই মধ্যে রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম আসায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেছেন, ভুল–ভ্রান্তি বেশি বের হলে তালিকা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। আজ রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের কাছে মন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যে তালিকা পেয়েছি, হুবহু তা প্রকাশ করেছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও সে সময়ের সরকারি রেকর্ড দিয়েছে, নতুন তালিকা করেনি।’

সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য শুদ্ধি অভিযান চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন,‘শুদ্ধি অভিযান চলছে। অনেকেই মনে করছেন আমরা থেমে গেছি। আমরা আসলে থেমে নেই। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা এই অভিযান চলমান রাখব। আমরা তথ্যভিত্তিক অভিযান চালাব।’

সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি, কৃষক লীগ নেতা সাখাওয়াত হোসেন সুইট, বিশ্বনাথ সরকার বিটু প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সভায় কৃষক লীগ নেতাদের দুর্নীতি, মাদক ও মজুতের বিরুদ্ধে শপথবাক্য পাঠ করান আলোচনা সভার বিশেষ অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।