'ভালোবাসার দিন শেষ,এখন শুধু জরিমানা': মেয়র আতিকুল

জাতীয় প্রেসক্লাবে (ডুরা ) আয়োজিত‘ অনিয়ন্ত্রিত দূষণে ঢাকা : নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। ছবি: হাসান রাজা
জাতীয় প্রেসক্লাবে (ডুরা ) আয়োজিত‘ অনিয়ন্ত্রিত দূষণে ঢাকা : নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। ছবি: হাসান রাজা

ঢাকার সড়কে পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ভালোবাসার দিন শেষ, বক্তব্য দেওয়ার দিন শেষ। এখন শুধু ফাইন (জরিমানা), ফাইন এবং ফাইন যারা রাস্তা দখল করে কাজ করবেন।’

রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে আজ মঙ্গলবার দুপুরে এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। ‘অনিয়ন্ত্রিত দূষণে ঢাকা: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এই বৈঠকের আয়োজন করে ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডুরা)।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘যারা পরিবেশ নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে, ব্যবসার খাতিরে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ভুলে যাচ্ছে, যারা সামাজিক দায়বদ্ধতা ভুলে যাচ্ছে , তাদের বলতে চাই, যে ব্যবসাতে পরিবেশ হুমকির সম্মুখীন হতে পারে, সে ব্যবসা আমরা করতে দেব না।’

ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘রাস্তায় যারা বালি সিমেন্ট রাখছেন, খোয়া ভাঙছেন, তাদের শাস্তি দেওয়া হবে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, ‘গত সপ্তাহে আমরা করেছি। ইতিমধ্যেই আমরা কর্মসূচি নিয়েছি। ২০ ডিসেম্বরের পর থেকে এটি আরও বেগবান হবে। সরকারকে আমি বলেছি, ম্যাজিস্ট্রেট দিন। আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, আমরা পরিকল্পনা করে ফেলেছি।’

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে মেয়র বলেন, ‘আপনারা ব্যবসা যেমন করবেন, নগরও পরিষ্কার রাখতে হবে। রাস্তায় যদি কোনো পলিথিন পাই, চিপসের প্যাকেট পাই, তাহলে ওই কোম্পানির বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশন থেকে মামলা করে দিব। আপনারা যত্রতত্রভাবে ব্যবসা করবেন।’

মেয়র জানান, ‘যার যার দায়িত্ব তা পালন করা উচিত। রাজউক, ওয়াসা, গণপূর্ত, সিটি করপোরেশনের কন্ট্রাক্টরেরা যারা উন্নয়নকাজ করছেন, তাদের বলব, কমপ্লায়েন্সের মাধ্যমে উন্নয়নকাজ করুন। উন্নয়নকাজ না করতে পারলে, ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে আমরা জরিমানা করতে বাধ্য হব। না মানার প্রবণতা এ থেকে মানসিক পরিবর্তন আনতে হবে।’

বৈঠকে স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, নীতিনির্ধারকদের আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে জনগণের নিরাপত্তার কথা ভাবা উচিত। শব্দদূষণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালগুলো যখন পর্যুদস্ত তখন শুধু সচিবালয়ে শব্দদূষণ মুক্ত করানোর প্রয়াস—এর মধ্য দিয়ে বোঝা যায় জনগণ কার হাতে, কীভাবে সমর্পিত হয়েছে। শব্দদূষণ, বায়ুদূষণে মানুষের ধুকে ধুকে মৃত্যু হচ্ছে এবং মনোদৈহিকভাবে বিকলাঙ্গ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে। ধনী পোষণ নীতিমালা এবং মুনাফাভোগী মানসিকতা দিয়ে একটি দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব না।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সভাপতি আবু নাসের খান বলেন, রাজধানীর প্রথম ও বড় সমস্যা, অল্প একটু জায়গাতেই বিশাল জনসংখ্যা। এটাতে আমরা খুব বেশি হস্তক্ষেপ করতে পারব না। বিকেন্দ্রীকরণ না হওয়ার কারণে এখন সবাই ঢাকামুখী। ১৯৭৩ সালের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে ঢাকার আজ এই অবস্থা হতো না। ওই পরিকল্পনায়, জেলাগুলোতে উন্নয়নের কথা বলা ছিল। সেটি হলে তো রাজধানীর এই অবস্থা হতো না।

পরিষ্কার বাতাস ও পরিষ্কার পানি একটি নগরীর খুব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান উল্লেখ করে নগর পরিকল্পনাবিদ আকতার মাহমুদ বলেন, যে কোনো ধনী-গরিবের সমাজে এটি অত্যন্ত জরুরি বিষয়। এটি রাখা গেলে প্রত্যেক নগর বাসিন্দা উপকৃত হবে। এখন সংখ্যাতাত্ত্বিক উন্নয়ন হচ্ছে, তবে গুণগত উন্নয়ন প্রয়োজন। দেশে ‘ক্লিন এয়ার অ্যাক্ট’ নামে কোনো আইন নেই। ইউরোপে প্রায় ৭৫ বছর আগে থেকে তারা বাতাস পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করছে।

ডুরা-এর সভাপতি মশিউর রহমান খান এই গোলটেবিলে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেলিন চৌধুরী, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক আদিল মাহমুদ খান প্রমুখ।