সম্রাটের সহযোগী জাকিরের স্ত্রীর সাড়ে ৪ কোটি টাকার সম্পদ

যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাবেক সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও যুবলীগের সাবেক নেতা জাকির হোসেনের স্ত্রীর সাড়ে চার কোটি টাকারও বেশি সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর ওপর ভিত্তি করে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছে সংস্থাটি।

দুদকের মুখপাত্র প্রণব কুমার ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, সংস্থার সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম আজ মঙ্গলবার দুদকের ঢাকা-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি করেন। জাকিরের স্ত্রীর নাম আয়েশা আক্তার সুমা ওরফে মোসা. সোমা।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আয়েশা একজন গৃহিণী। তিনি বিভিন্ন অবৈধ উপায়ে চার কোটি ৬৩ লাখ ১৩ হাজার ৩০০ টাকার সম্পদ জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণভাবে অর্জন করে তা নিজ ভোগ দখলে রেখেছেন।

দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১৮-১৯ করবর্ষ পর্যন্ত আয়েশা আক্তারের নামে এক কোটি ৪৮ লাখ ৩০ হাজার ৭৮৮ টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। এ ছাড়া অনুসন্ধানে আয়েশার নামে সূত্রাপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিসের একটি সাব-কবলা দলিলের মাধ্যমে ২৯৩ দশমিক ৫০ অজুতাংশ জমি কেনার তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়। জমিটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের পুরানা পল্টন লাইনে অবস্থিত। সরেজমিনে পরিদর্শনে দুদক দেখেছে ওই জমিতে একটি সাততলা বাড়ি আছে যার আনুমানিক নির্মাণ ব্যয় প্রায় এক কোটি টাকা। জমি এবং জমিতে নির্মাণ করা ভবনের তথ্য তিনি আয়কর নথিতে প্রদর্শন না করে গোপন করেছেন। অনুসন্ধানে আয়েশার স্থাবর সম্পদের দলিলমূল্য ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৬২ হাজার ৭৮৮ টাকা পাওয়া গেলেও প্রকৃতপক্ষে ওই সম্পদের দাম আরও বেশি হবে বলে মনে করছে দুদক। ওই সব সম্পদ অর্জনের কোনো বৈধ উৎস পায়নি দুদক। স্থাবর অস্থাবর মিলিয়ে আয়েশার ৪ কোটি ৬৩ লাখ ১৩ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ পেয়েছে সংস্থাটি।

এজাহারে দুদক আরও বলেছে, আয়েশা আক্তার একজন গৃহিণী হয়েও বিভিন্ন অবৈধ পন্থায় নামে-বেনামে দেশে এবং দেশের বাইরে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন। এসব সম্পদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়া জটিল ও সময় সাপেক্ষ বিধায় তদন্তকালে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আওতায় তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এর আগে গত ১৩ নভেম্বর আয়েশার স্বামী জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম। অনুসন্ধানে তাঁর সর্বমোট ৫ কোটি ৪৯ লাখ ৩ হাজার টাকা অর্জনের সুনির্দিষ্ট কোনো উৎস না পেয়ে এই মামলা করা হয়। ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান শুরুর পর ৩০ অক্টোবর ভোলা থেকে জাকিরকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

যুবলীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জাকির হোসেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। জাকির এক সময় কাকরাইলের পায়েল হোটেল ও ম্যাডোনা হোটেলের গ্লাস বয় ছিলেন। সেই চাকরি ছেড়ে তিনি একটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানে পিয়নের চাকরি নেন। সেখান থেকেই ঘনিষ্ঠতা বাড়ে সম্রাটের সঙ্গে। সূত্র আরও জানিয়েছে, জাকির সম্রাটের খুবই বিশ্বস্ত। সম্রাট যাদের দিয়ে ক্যাসিনো ব্যবসা চালাতেন তাঁদের মধ্যে জাকির অন্যতম। সূত্র বলছে, সম্রাটের ক্যাসিনো বাণিজ্যের অঢেল টাকার একটি বড় অংশ গচ্ছিত আছে জাকিরের কাছে।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জাকিরের নামে কেনা সম্পদের তথ্য দুদকের হাতে থাকলেও এখন পর্যন্ত সে সংক্রান্ত নথি হাতে পায়নি সংস্থাটি। মামলার তদন্তের সময় বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়ে ওই সব সম্পদের মালিকানা বিষয়ে নিশ্চিত হবে সংস্থাটি। সূত্রটি বলছে, রাজধানীর পুরানা পল্টন ও বিজয়নগরে তার তিনটি বাড়ি আছে। রাজধানীর শান্তিনগর, সেগুনবাগিচা, বিজয়নগর ও সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় ফ্ল্যাট আছে ২৮টি। গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে আছে ১০০ কাঠা জমি। কাকরাইলের ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারের যে ভবনটিকে ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট তাঁর কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করতেন ওই ভবনের চতুর্থ তলাও জাকিরের কেনা। সেখানেই প্রথম সম্রাট তাঁর অফিস করতেন। পরে ওই ভবনের অন্য তলাগুলোও দখলে নেওয়া হয়।

সেপ্টেম্বরে শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এ নিয়ে ১৭ টি মামলা করল দুদক। এর আগে ঠিকাদার জি কে শামীম, বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক এনু ও তাঁর ভাই রুপন ভূঁইয়া, অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান, বিসিবি পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, কলাবাগান ক্লাবের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ ও এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ এবং যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক আনিসুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী সুমি রহমান এবং কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান, তারেকুজ্জামান রাজীব, ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, এনামুল হক আরমান ও জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে আলাদা মামলা করেছে দুদক।