৬ অভিন্ন নদী নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত বৈঠক পেছাল

বাংলাদেশ ও ভারত ছয়টি অভিন্ন নদীর রূপরেখা চুক্তি সইয়ের জন্য প্রাথমিক কাজ শেষ করেছে। পানিবণ্টন চুক্তি সইয়ের লক্ষ্যে দুই দেশ এসব নদীর তথ্য–উপাত্ত ২৪ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো হালনাগাদ করেছে। এ নিয়ে আলোচনার জন্য আগামীকাল বুধবার থেকে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বৈঠক শুরুর কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তা পিছিয়ে গেছে।

এই অভিন্ন ছয়টি নদী হলো মনু, ধরলা, খোয়াই, গোমতী, মুহুরী ও দুধকুমার।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র আজ মঙ্গলবার যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) দুই দিনের আলোচনা পিছিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সূত্রটি ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ওই বৈঠক হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে।

ঢাকায় যৌথ নদী কমিশন সূত্রে জানা গেছে, জেআরসির প্রস্তাবিত বৈঠকের প্রথম দিনে যৌথ কমিটির ও দ্বিতীয় দিন কারিগরি কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা ছিল।

জানতে চাইলে জেআরসির সদস্য কে এম আনোয়ার হোসেন আজ প্রথম আলোকে বলেন, দিল্লির প্রস্তাবিত বৈঠকে মনু, ধরলা, খোয়াই, গোমতী, মুহুরী ও দুধকুমার—এই ছয়টি নদীর হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত বিনিময়ের কথা ছিল। দ্রুত ওই ছয়টি নদীর রূপরেখা চুক্তি চূড়ান্ত করতে ওই তথ্যগুলো বিনিময়ের পরিকল্পনা রয়েছে। গত আগস্টে ঢাকায় অনুষ্ঠিত পানিসম্পদসচিবদের বৈঠকে তিস্তা ও ফেনীর পাশাপাশি ওই ছয়টি নদীর তথ্য-উপাত্ত হালনাগাদ করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

প্রায় ৯ বছর পর এ বছরের আগস্টে অনুষ্ঠিত দুই নিকট প্রতিবেশীর পানিসম্পদসচিবদের বৈঠকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আটটি অভিন্ন নদীর পানির তথ্য-উপাত্ত হালনাগাদ করে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের আগে তিস্তা ও ফেনীর পানিবণ্টনের জন্য অন্তর্বর্তী চুক্তির খসড়া হয়েছিল। এ নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কে এম আনোয়ার হোসেন বলেন, ওই দুই নদীর খসড়া ২০১১ সালে চূড়ান্ত হয়েছিল। তাই অন্য ছয়টির ওপর এখন জোর দেওয়া হচ্ছে।

যৌথ নদী কমিশন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ও ভারত ১৯৮৫ সালে প্রথমবারের মতো মনু, ধরলা, খোয়াই, গোমতী, মুহুরী ও দুধকুমার নদীর প্রবাহ একে অন্যের সঙ্গে বিনিময় করেছিল। তখন থেকেই দক্ষিণ এশিয়ার দুই নিকট প্রতিবেশী এসব নদীর পানি ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা করে যাচ্ছে। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। ১৯৯৫ সালে শেষবারের মতো দুই দেশ নদীর পানিপ্রবাহের সর্বশেষ তথ্য বিনিময় করেছিল।

জানা গেছে, আগস্টের বৈঠকের পর ২০১৮ সাল পর্যন্ত নদীর পানির বিভিন্ন তথ্য–উপাত্ত বিনিময়ের জন্য চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ। ভারতও একই ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বাংলাদেশকে জানিয়েছে।

প্রসঙ্গত, শুকনো মৌসুমে উজানে অর্থাৎ ভারত পানি প্রত্যাহার করে বলে দুই দেশের অভিন্ন নদীগুলোর বাংলাদেশ অংশে পানি যথেষ্ট কমে যায়। বর্ষায় পরিস্থিতি হয় উল্টো। বাংলাদেশের নদীগুলোতে অতিরিক্ত পানি থাকে। তখন উজান থেকে পানি ছাড়ার পরিণতিতে বাংলাদেশে বন্যা দেখা দেয়।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে। এর মধ্যে শুধু গঙ্গার পানি বণ্টনের জন্য ১৯৯৬ সালে ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তি সই হয়। জানা গেছে, এ বছরের শুকনো মৌসুমের প্রথম দুই মাস অর্থাৎ জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির চেয়ে ৬৮ হাজার কিউসেক পানি কম পেয়েছে। যদিও এপ্রিল ও মে মাসে বাংলাদেশ চুক্তিতে নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেশি পানি পেয়েছে।