বাঁধার মুখে জাবিতে শিক্ষক নিয়োগের সিলেকশন বোর্ড স্থগিত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের একাংশের বাঁধার মুখে একটি ইনস্টিটিউটের শিক্ষক নিয়োগের সিলেকশন বোর্ড স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোনো প্রশাসনিক ভবনের উপাচার্যের কার্যালয়ে এ বোর্ড বসার কথা ছিল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ শিক্ষক নিয়োগের সিলেকশন বোর্ড স্থগিতের বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোনো প্রশাসনিক ভবনের উপাচার্যের কার্যালয়ে মার্কেটিং বিভাগের দুজন শিক্ষককে স্থায়ী করার সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপাচার্যবিরোধী হিসেবে পরিচিত শিক্ষকদের সংগঠন ‘সম্মিলিত শিক্ষক সমাজের’ একদল শিক্ষক সে সময় উপাচার্যের কার্যালয়ে যান। তাঁরা উপাচার্যের সঙ্গে নতুন শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে কথা বলেন। আন্দোলনকারীরা শিক্ষকদের স্থায়ীকরণের সভা হতে পারে বলে জানান। তবে নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন। তখন উপাচার্য নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে না বলে আশ্বাস দেন। পরে আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা ফিরে যান।

এরপরও বিকেলে ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেন্সিংয়ে নতুন শিক্ষক নিয়োগের সিলেকশন বোর্ড বসানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়। পরে বিকেল তিনটার দিকে উপাচার্যবিরোধী শিক্ষকেরা আবার সেখানে যান। তাঁরা নিয়োগের এই বোর্ড অবৈধ দাবি করে তা বাতিলের দাবি জানান এবং উপাচার্যের অফিসে অবস্থান নেন। পরে বিকেল সাড়ে চারটায় উপাচার্যবিরোধী শিক্ষকদের পাঁচজন প্রতিনিধির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আলোচনায় বসে। এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন ও খবির উদ্দিন, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক তারেক রেজা ও শামীমা সুলতানা, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক খন্দকার হাসান মাহমুদ। প্রশাসনের পক্ষে উপাচার্য ফারজানা ইসলাম, সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) নুরুল আলম ও কোষাধ্যক্ষ শেখ মো. মনজুরুল হক উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে দুই পক্ষ থেকে জানানো হয়, আপাতত নতুন শিক্ষক নিয়োগের সিলেকশন বোর্ড বসবে না।

এ বিষয়ে সম্মিলিত শিক্ষক সমাজের সদস্যসচিব অধ্যাপক জামাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপাচার্য ফারজানা ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগ আছে। তথ্য-উপাত্তসহ তাঁর বিরুদ্ধে আনা ‘দুর্নীতির’ অভিযোগ লিখিতভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় উপাচার্যের সভাপতিত্বে নতুন করে কোনো শিক্ষক নিয়োগের বোর্ড হতে পারে না। আমাদের কথা শুনে উপাচার্য সিলেকশন বোর্ড বাতিল করেছেন।’

এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলাম, সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) নুরুল আলম ও কোষাধ্যক্ষ শেখ মো. মনজুরুল হকের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁরা ফোন ধরেননি।

উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে উপাচার্যের ‘মধ্যস্থতায়’ ছাত্রলীগকে বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা দেওয়ার অভিযোগের তদন্তের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ২৩ আগস্ট শুরু হওয়া এ আন্দোলন ১৮ সেপ্টেম্বর উপাচার্যের পদত্যাগ দাবির আন্দোলনে রূপ নেয়। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে পদত্যাগ না করায় ২ অক্টোবর থেকে আন্দোলন মোড় নেয় উপাচার্যের অপসারণ দাবির আন্দোলনে। ১০ দিন উপাচার্যের কার্যালয় অবরুদ্ধ রাখার পর ৪ নভেম্বর সন্ধ্যা সাতটা থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। পরের দিন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের মারধর করে সরিয়ে দেন। ওই দিনই জরুরি সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর গত ৮ নভেম্বর উপাচার্যের ‘দুর্নীতির’ তথ্য-উপাত্তসহ লিখিত অভিযোগ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় আন্দোলনকারীরা। হল বন্ধের দীর্ঘ এক মাস পর গত ৫ নভেম্বর থেকে আবার ক্যাম্পাস সচল করা হয়।