মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষুব্ধ, হতভম্ব

রাজাকারের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়া মুক্তিযোদ্ধা তপন কুমার চক্রবর্তী প্রতিবাদ সমাবেশে দাঁড়িয়ে মুষড়ে পড়েন। পাশে মেয়ে ডা. মনীষা। গতকাল বরিশালের সদর রোডে।  ছবি: সাইয়ান
রাজাকারের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়া মুক্তিযোদ্ধা তপন কুমার চক্রবর্তী প্রতিবাদ সমাবেশে দাঁড়িয়ে মুষড়ে পড়েন। পাশে মেয়ে ডা. মনীষা। গতকাল বরিশালের সদর রোডে। ছবি: সাইয়ান

স্বাধীনতার ৪৯তম বছরে এসে রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। জীবন বাজি রেখে যাঁরা যুদ্ধে গিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই এখন রাজাকারের তালিকায় নিজেদের নাম দেখে ক্ষুব্ধ। আবার কুখ্যাত অনেক রাজাকারের নাম তালিকায় না থাকায় সারা দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

কোনো যাচাই–বাছাই না করেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি পুরোনো নথি রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও স্বাধীনতাবিরোধী ১০ হাজার ৭৮৯ জনের তালিকা হিসেবে প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রথম ধাপের এ তালিকায় যুদ্ধাপরাধী হিসেবে সাজাপ্রাপ্ত মতিউর রহমান নিজামী, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, কাদের মোল্লা, মীর কাসেম আলী, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীদের নাম নেই।

অথচ এখন পর্যন্ত অন্তত ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধার নাম পাওয়া গেছে, যাঁরা রাজাকারের তালিকাভুক্ত হয়েছেন। এর বাইরে আছে আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতার নাম, যাঁদের অনেকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে পরিচিত। নারী রাজাকার হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন ৩৮ জন। হিন্দুধর্মাবলম্বীর ৯২ জনের নামও এসেছে তালিকায়। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার, বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই–বাছাই কমিটির সদস্যের নামও যুক্ত হয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে।

কোন প্রক্রিয়ায়, কেন এই তালিকা প্রকাশ করা হলো, সে প্রশ্নও সামনে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ নানা মহলে চলছে সমলোচনার ঝড়। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা। গতকাল কোথাও কোথাও বিক্ষোভও হয়েছে।

তালিকা প্রকাশের তিন দিনের মাথায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ভুলভ্রান্তি বেশি বের হলে তালিকা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম আসায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

একাত্তরের রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা বলা হলেও তালিকায় কারা রাজাকার, কারা আলবদর বা আলশামস বাহিনীর সদস্য, তা সুনির্দিষ্ট করা নেই। আবার ৫৪টি জায়গায় অভিযোগকারীর নাম থাকলেও নেই অভিযুক্তের নাম। ৫৩৮টি নামের ক্ষেত্রে মন্তব৵ আছে—অভিযোগের প্রমাণ হয়নি। অনেকের নামের ক্ষেত্রে মন্তব্য করা হয়েছে, মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, মামলা প্রত্যাহারের কথা উল্লেখ আছে ৪৫ জনের ক্ষেত্রে।

>

সারা দেশে সমালোচনার ঝড়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর দুঃখ প্রকাশ।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির প্রথম আলোকে বলেন, যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তা ত্রুটিপূর্ণ। একজন মুক্তিযোদ্ধার নামও তালিকায় এসে থাকলে তা সাধারণ কোনো অপরাধ নয়। এটা ইচ্ছাপূর্বক করা হয়েছে কি না, কে করেছে, কীভাবে করেছে—এসব বিষয় তদন্ত করতে হবে। শত্রুতা করে কারও নাম ঢোকানো হয়েছে, নাকি আমলাতান্ত্রিক ভুল, তা তদন্ত করে দেখতে হবে। কোনোভাবেই এই তালিকা গ্রহণযোগ্য নয়।

রাজাকার তালিকায় মুক্তিযোদ্ধারা

রাজাকারের তালিকায় নিজের নাম দেখে হতবাক, মার্মাহত ও অপমানিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু। গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে অত্যন্ত অবহেলার সঙ্গে তালিকাটি প্রচার ও প্রকাশ করেছে। এ ঘটনায় কারা দায়ী তা খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নিতে বলেছেন তিনি।

সুনামগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা হুসেন বখত। তাঁর তিন ছেলে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। রাজাকারের তালিকায় হুসেন বখতের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা সুবাস বখতের নাম রয়েছে। সুনামগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা আলী আমজাদ বলেন, ‘সুবাস বখত আমার সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। তাঁর বাবা সুনামগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন। এই তালিকা প্রকাশের বিষয়টিতে কোনো ষড়যন্ত্র আছে কি না, দেখতে হবে।’

সুনামগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আবু সুফিয়ান প্রথম আলোকে বলেন, যারা কুখ্যাত রাজাকার হিসেবে সব মহলে পরিচিত ছিল, তাদের অনেকের নামই আসেনি। এই বিভ্রান্তি তৈরির পেছনে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

রাজাকারের নামের তালিকায় চাঁদপুরের ১১ জনের নাম প্রকাশ করা হয়। এঁদের একজন মতলবের নাগদা গ্রামের সিরাজ আলী মজুমদারের ছেলে হুমায়ুন। তিনি মতলব দক্ষিণ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সিরাজগঞ্জে বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা পলাশডাঙ্গা যুবশিবিরের পরিচালক ছিলেন মরহুম মির্জা আবদুল লতিফ। তাঁর নাম রাজাকারের তালিকায় আসায় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

পলাশডাঙ্গা যুবশিবিরের সহ-অধিনায়ক সাবেক সাংসদ গাজী ম ম আমজাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মির্জা লতিফের নাম রাজাকারের তালিকায় শুনে মনে হচ্ছে, আল্লাহ জমিনের মাটি দুভাগ করে দিক, আর আমি সে মাটির মধ্যে ঢুকে যাই। পলাশডাঙ্গা যুবশিবিরের পরিচালক যদি রাজাকার হন, তাহলে আমরা কী?’

যুদ্ধ–পরবর্তী জিয়াউর রহমান সরকারের সময় এবং ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন মির্জা লতিফ। ২০০৭ সালে তিনি মারা যান। তাঁর মেয়ে আওয়ামী লীগ নেত্রী সেলিনা মির্জা বলেন, ‘আমরা পরিবারের সবাই বাক্‌রুদ্ধ। আমরা হতবাক।’ তাঁদের পরিবারকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য এটি চক্রান্ত বলে মনে করেন তিনি।

রাজাকারের তালিকায় ঝালকাঠির প্রয়াত জেলা কমান্ডার সৈয়দ শামসুল আলমসহ একাধিক মুক্তিযোদ্ধার নাম রয়েছে। ঝালকাঠি সদরের মুক্তিযোদ্ধা যাচাই–বাছাই কমিটির সদস্য শহীদ ইমাম পাশা বলেন, শামসুল আলমের নাম রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে, তা ভাবা যায় না। এই তালিকায় অনেক স্বীকৃত রাজাকারের নাম আসেনি।

রাজাপুর উপজেলার সাবেক কমান্ডার ও যাচাই–বাছাই কমিটির সদস্য এনায়েত হোসেনের নাম উঠেছে এ তালিকায়। এনায়েত বলেন, স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে রাজাকারের তালিকায় নাম দেখতে হবে, এটা কষ্টের।

ঝালকাঠির তালিকায় নাম আছে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা এনামুল হক মৃধার। তাঁর ভাই মিলন মাহমুদ মৃধা বলেন, ‘আমার তিন ভাই একাত্তরে যুদ্ধে গিয়েছিল। এই অপরাধে পাকিস্তানি বাহিনী আমার বাবাকে ধরে নিয়ে থানায় আটকে রেখেছিল। পাকিস্তানি বাহিনী রাজাপুরে আমাদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। রাজাকারের তালিকায় আমার মুক্তিযোদ্ধা ভাইয়ের নাম সত্যিই হাস্যকর।’

রাজাকারের তালিকায় পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার দুজন ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার নাম রয়েছে। তাঁদের একজন এ বি এম আবদুল খালেক। তাঁর নাম লাল মুক্তিবার্তা, মুক্তিযোদ্ধা গেজেটে আছে। তাঁর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাময়িক সনদও আছে। ১৯৯৯ সালের ৬ জুন তিনি মারা যান।

যুদ্ধকালীন কমান্ডার ও সাবেক মুক্তিযোদ্ধা জেলা কমান্ডার আবদুল বারেক হাওলাদার বলেন, আবদুল খালেক মুক্তিযুদ্ধকালে সরকারি চাকরি করতেন। তাঁর কার্যালয়ের সাইক্লোস্টাইল মেশিন চুরি হওয়ার নাটক করে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছে দেন। ওই মেশিন দিয়ে প্রচারপত্র তৈরি করে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে তথ্য পৌঁছে দেওয়া হতো। খালেক পরে তাঁর (বারেক হাওলাদার) অধীনে ধুলিয়া ইউনিয়নের চাঁদকাঠি ও সূর্যতমনি ইউনিয়নের ফরাজি বাড়ির এলাকায় সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন।

কনকদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সরকারি তালিকাভুক্ত ও ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হক হাওলাদারের নামও রয়েছে রাজাকারের তালিকায়। কনকদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এই সাবেক সভাপতি মারা যান ২০০৯ সালের ৬ ডিসেম্বর।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ইউসুফ আলী হাওলাদার বলেন, আবদুল হকের নাম তালিকায় আসাটা লজ্জার।

রাজাকার না মুক্তিযোদ্ধা

বোয়ালমারীতে রাজাকার তালিকায় সিরাজুল ইসলামের নাম রয়েছে। তিনি গোষপুর ইউনিয়নের গোহাইলবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন, তিনি আসলেই রাজাকার ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তাঁর নাম আছে।

বোয়ালমারী মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার অধ্যাপক আবদুর রশিদ বলেন, মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে সিরাজুল ইসলামের নাম বাদ দেওয়া এবং ভাতা বন্ধ করার জন্য উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার কাছে আবেদন করা হলেও কাজ হয়নি।

সেরনিয়াবাত পরিবারের নামও তালিকায়

প্রকাশিত রাজাকারের তালিকা ঘেঁটে দেখা যায়, বরিশাল অংশে সিরিয়াল নম্বর ৫৮–তে নাম আছে আবদুল হাই সেরনিয়াবাতের। তাঁর বাবা আবদুল খালেক সেরনিয়াবাত। আবদুল হাই সেরনিয়াবাত বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি প্রয়াত কৃষিমন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বড় ভাই।

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এ এম জি কবির প্রথম আলোকে বলেন, আবদুল হাই সেরনিয়াবাত কোনোভাবেই মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কাজে জড়িত ছিলেন না। স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবার এবং সাধারণ মানুষের নাম রাজাকারের তালিকায় এনে যেভাবে তাঁদের অপমান করা হয়েছে, সেটা খুবই দুঃখজনক।

কুখ্যাত রাজাকার

তালিকায় কুখ্যাত স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে ৫৮ জনের নাম আছে। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, যাঁরা তখন পলাতক ছিলেন, এমন ৩২ জনের নাম আছে। যাঁদের নাম আছে, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য জামায়াতে ইসলামীর প্রয়াত আমির যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত গোলাম আযম, রাজা ত্রিদিব রায়, ফজলুল কাদের চৌধুরী, খাজা খয়ের উদ্দীন, নুরুল আমিন, হামিদুল হক চৌধুরী, শাহ আজিজুর রহমান, আতাউর রহমান খান, খান এ সবুর, ইউসুফ আলী, খয়রাত হোসেন প্রমুখ।

ক্ষোভ-বিক্ষোভ

বরগুনার পাথরঘাটার মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মজিবুল হকসহ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম আসার প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার বরগুনার পাথরঘাটায় সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। দুপুরে শহরের শেখ রাসেল স্কয়ারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তাঁরা। এতে রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, সাংবাদিক, আইনজীবী, ব্যবসায়ীসহ পাথরঘাটার সর্বস্তরের জনসাধারণ অংশ নেন। মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে পাথরঘাটার ইউএনওর মাধমে ৩৪ জন মুক্তিযোদ্ধার স্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হয়।

এ ঘটনার প্রতিবাদে পাথরঘাটা উপজেলা বণিক সমিতি বেলা দুইটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত পাথরঘাটা পৌর শহরের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখে। শহরের শেখ রাসেল স্কয়ারে বিকেল চারটায় প্রতিবাদ সভা করে উপজেলা আওয়ামী লীগ।

মজিবুল হক ছাড়াও আমির হামজা ওরফে রুস্তম খাঁ ও খলিলুর রহমান ওরফে মানিকের নাম এসেছে তালিকায়। অথচ তাঁরা দুজনেই গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা। প্রয়াত এই দুই মুক্তিযোদ্ধার পরিবার নিয়মিত ভাতাও পাচ্ছেন।

বরিশালে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সুধীর কুমার চক্রবর্তীর স্ত্রী প্রয়াত ঊষা রানী চক্রবর্তী ও তাঁর ছেলে মুক্তিযোদ্ধা তপন কুমার চক্রবর্তীর নাম এসেছে তালিকায়। এর প্রতিবাদে গতকাল বরিশালে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং মিছিল করেছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)।

বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক গভর্নর কছিম উদ্দীন আহম্মেদসহ প্রায় ৩০ জন আওয়ামী লীগ নেতার নাম এসেছে তালিকায়। এর প্রতিবাদে গতকাল বগুড়ার সান্তাহার স্বাধীনতা মঞ্চে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতাবিরোধী মানুষের সংখ্যা কত ছিল, তার সুনির্দিষ্ট হিসাব নেই। তবে মুক্তিযুদ্ধ গবেষকেরা বলছেন, পাকিস্তানি বাহিনী প্রায় ৩০ হাজার রাজাকার নিয়োগ করেছিল। এর বাইরে ছিল আলবদর, আলশামস, শান্তি কমিটি। স্বাধীনতার পরপর বঙ্গবন্ধুর আমলে প্রায় ৩৭ হাজার স্বাধীনতাবিরোধী গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। সাধারণ ক্ষমার পর প্রায় ১১ হাজারের বিচার চলমান ছিল। এঁদের মধ্যে ৭৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ডসহ বিভিন্ন দণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন প্রথম আলোকে বলেন, এর আগে তিনটি তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছিল। সেগুলো প্রকাশ করলেই হতো। বলা হচ্ছে, পাকিস্তান আমলের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কৌঁসুলিরা অনেকবার গেজেট, তালিকা চেয়েছিলেন। কিন্তু তখন দেওয়া হয়নি। এখন কেন, কোথা থেকে এ তালিকা প্রকাশ করা হলো? তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়, তারা কেন এ ধরনের তালিকা দিল। আর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় কেন এটা যাচাই না করে এভাবে প্রকাশ করল? যে মন্ত্রণালয়ের সচিব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদধারী, যে মন্ত্রণালয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননার ক্রেস্টের সোনা চুরি হয়, কিন্তু শাস্তি হয় না, সেই মন্ত্রণালয়ের আমলাতন্ত্রের ওপর নির্ভর করলে এমনই হবে।

অবিলম্বে এই তালিকা প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়ে মুনতাসীর মামুন বলেন, তাঁরা স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা প্রকাশের দাবি জানিয়েছিলেন। এটি প্রকাশ করা ইতিবাচক। কিন্তু যেভাবে করা হয়েছে, তাঁরা সেভাবে চাননি।

(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা)