বালু তুলতে নদী ভরাট করছেন আ.লীগ নেতা

ট্রাক চলাচলের জন্য বালুভর্তি বস্তা ও মাটি ফেলে ভরাট করা হচ্ছে নদীর একটি অংশ। গতকাল রাজশাহী নগরীর তালাইমারী বালুঘাট এলাকার পদ্মা নদীতে।  ছবি: প্রথম আলো
ট্রাক চলাচলের জন্য বালুভর্তি বস্তা ও মাটি ফেলে ভরাট করা হচ্ছে নদীর একটি অংশ। গতকাল রাজশাহী নগরীর তালাইমারী বালুঘাট এলাকার পদ্মা নদীতে। ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীতে বালু উত্তোলনের জন্য পদ্মা নদীর একটি অংশ ভরাট করছেন রাজশাহীর আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুল আলম। ট্রাক চলাচলের রাস্তা তৈরি করতে এরই মধ্যে নদীর দুই তীর থেকে ২০০ গজের মতো ভরাট করা হয়েছে। আজিজুল মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।

নগরীর তালাইমারী এলাকায় আজিজুলের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স আমিন ট্রেডার্স’–এর নামে পবা উপজেলার চরশ্যামপুর ও চরখিদিরপুর মৌজার একটি বালুমহালের ইজারা আছে। আজিজুলের দাবি, ওই দুই জায়গায় বালুর ট্রাক নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি নদী ভরাটের কাজ করছেন। তবে নদীতে পানির প্রবাহ যাতে ব্যাহত না হয়, সে জন্য পথ রাখা হবে।

তবে আজিজুল আলমের বিরুদ্ধে ইজারাবহির্ভূত এলাকা থেকে বালু তোলার অভিযোগ আছে। চরশ্যামপুর ও চরখিদিরপুর মৌজার ইজারাকৃত বালুমহালের বাইরে কাজলা এলাকা থেকে বালু তোলায় হাইকোর্টের নির্দেশে গত ২৪ জুলাই বালুঘাটটি বন্ধ করে দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানের পর কিছুদিন বালু তোলা বন্ধ থাকে। এরপর আবার বালু তোলা শুরু করেন আজিজুল আলম। পদ্মায় পানি থাকায় এত দিন ড্রেজারে করে বালু তোলা হচ্ছিল। তবে সম্প্রতি পানি কমে যাওয়ায় পদ্মায় চর পড়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার পদ্মা নদীর তালাইমারী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তা তৈরিতে ১০–১২ জন শ্রমিক কাজ করছেন। প্রথমে পানির নিচে বালুভর্তি বস্তা ফেলা হচ্ছে; পরে বস্তার ওপর ইট, খোয়া ও ইটভাটার পোড়া মাটি ফেলা হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন জানান, প্রায় ১৫ দিন ধরে এভাবে নদী ভরাটের কাজ চলছে। আজিজুল আলম আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় স্থানীয় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না।

রাজশাহীর নদী ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক এনামুল হক বলেন, এ বছর নদী ভরাট করে রাস্তা তৈরি করা হলে তা আগামী ভরা মৌসুমে পানির স্বাভাবিক প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করবে। তখন নদীর একটা বড় অংশ পলি জমে ভরাট হয়ে যাবে।

গতকাল বিকেলে ভরাট হওয়া অংশের ছবি তুলতে গেলেও প্রথম আলোর আলোকচিত্রীকে বাধা দেন সেখানে উপস্থিত থাকা আবু নামের এক ব্যক্তি। আবু নিজেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা বলে পরিচয় দেন।

নদী ভরাটের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল আলম বলেন, ভরাট করা অংশ মূল নদী নয়। পদ্মা নদীর শুকিয়ে যাওয়া একটি ধারা। তবে এখন যেহেতু নদীর প্রবাহ আছে, তাই সেটি যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, এ জন্য সিমেন্টের রিং তৈরি করে পাঁচ ফুট পরপর বসানো হচ্ছে; যার ভেতর দিয়ে পানি প্রবাহিত হবে।

নদী ভরাটের বিষয়ে জানে না জেলা প্রশাসন। গতকাল মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে জেলা প্রশাসক হামিদুল হক বলেন, ‘একটা অনুষ্ঠানে আছি। পরে খোঁজ নিয়ে জানাব।’