কমিউনিটি সেন্টার দখল

খিলগাঁওয়ে নির্মাণাধীন কমিউনিটি সেন্টারের দোতলা দখল করে চলছে আসবাব ব্যবসা। রীতিমতো কারখানা করে আসবাব তৈরির কাজ চলছে। গতকাল দুপুরে।  ছবি: আবদুস সালাম
খিলগাঁওয়ে নির্মাণাধীন কমিউনিটি সেন্টারের দোতলা দখল করে চলছে আসবাব ব্যবসা। রীতিমতো কারখানা করে আসবাব তৈরির কাজ চলছে। গতকাল দুপুরে। ছবি: আবদুস সালাম

এক যুগের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে; এখনো খিলগাঁও কমিউনিটি সেন্টারের নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। সেটি চালু করার কোনো উদ্যোগও নেই গণপূর্ত বিভাগের। এর মধ্যে নির্মাণাধীন ভবনটি দখল করে ভাড়া দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা। এখানে প্রতি মাসে দোকান ভাড়া বাবদ প্রায় দেড় লাখ টাকা আদায় করছেন তাঁরা।

কমিউনিটি সেন্টারটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১ নম্বর ওয়ার্ডের খিলগাঁও এ ব্লকের মডেল স্কুলের পাশে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে (২০০১-০৬) এই ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল। গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড এটি নির্মাণের দায়িত্ব পায়।

এলাকাবাসী বলছেন, তাঁদের এলাকায় কোনো কমিউনিটি সেন্টার নেই। এটি চালু হলে কম খরচে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করা যাবে। এখন তাঁদের মৌচাক, নয়াপল্টন ও রমনা এলাকার বিভিন্ন বেসরকারি কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে অনুষ্ঠান করতে হচ্ছে। তাতে খরচও বেশি হচ্ছে। খিলগাঁওয়ের নির্মিতব্য এই কমিউনিটি সেন্টারে রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে সেখানে দোকানপাট বসানো হয়েছে। রাতে সেখানে বসে মাদকের আসর। এসব বন্ধ করে এটি দ্রুত চালু করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

খিলগাঁওয়ের কয়েকজন বাসিন্দা, ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং গণপূর্ত বিভাগের অঞ্চল-৪ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালের দিকে ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। তিনতলা মূল অবকাঠামোর কাজ প্রায় শেষ হয়েছিল। বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতা ছাড়ার পর ভবনটির বাকি কাজ আর হয়নি। দীর্ঘদিন ভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। এই সুযোগে তমা কনস্ট্রাকশনের পক্ষ থেকে ভবনটি দেখভালকারী মোহাম্মদ আলী সেখানে দোকান বসানোর প্রক্রিয়া শুরু করেন। বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা ক্যাসিনোর ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত খালিদ মাহমুদ ভূঁইয়া একপর্যায়ে মোহাম্মদ আলীকে তাঁর নিজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দেন। মোহাম্মদ আলীর সহায়তায় খালিদের লোকজনই ওই সব দোকান থেকে ভাড়া তুলতেন। তবে বছরখানেক আগে ওই দোকানের ভাড়ায় ভাগ বসিয়েছেন খিলগাঁও থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম। খালিদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে আটকের পর নিচতলায় থাকা সব দোকান থেকে মাহবুব ভাড়া নিচ্ছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে খিলগাঁও থানা এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, ফরহাদ, মিতুলসহ কয়েকজনের সহায়তায় মাহবুব সেখান থেকে ভাড়া তুলছেন।

খিলগাঁও থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম অবশ্য ভাড়া তোলার বিষয়ে তাঁর জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলের কয়েকজন নেতা আমার বিরুদ্ধে দুরভিসন্ধিমূলক এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে।’

কমিউনিটি সেন্টারের সামনে বসানো হয়েছে দোকানপাট।  ছবি: প্রথম আলো
কমিউনিটি সেন্টারের সামনে বসানো হয়েছে দোকানপাট। ছবি: প্রথম আলো

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, মূল অবকাঠামোর কাজ শেষ হওয়া তিনতলা ভবনটির নিচতলায় বেশ কয়েকটি আসবাবের দোকান রয়েছে। দোতলায় রীতিমতো কারখানা করে আসবাব তৈরির কাজ চলছে। পাশাপাশি দোতলায় টিন দিয়ে কয়েকটি কক্ষ তৈরি করা হয়েছে। কয়েকজন যুবক সেখানে প্রকাশ্যে মাদক সেবন করছেন। আর ভবনটির সামনের ফুটপাতে ১০টি দোকান বসানো হয়েছে। এর কোনোটিতে বিক্রি হচ্ছে চা, কোনোটিতে খাবার, রয়েছে গাড়ি মেরামত করার গ্যারেজও। তবে সেখানে থাকা দোকানপাটের মালিক ও কর্মচারীরা যাঁদের সহায়তায় সেখানে বসেছেন, তাঁদের নাম বলতে রাজি হননি।

স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্মিতব্য এই কমিউনিটি সেন্টারে ২০১৫ সালে একবার এবং গত বছর দ্বিতীয়বার আগুন লেগেছিল। এতে সেখানে থাকা দোকানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শেষবার আগুন লাগার ঘটনায় খিলগাঁও থানায় একটি মামলাও হয়েছিল।

স্থানীয় সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, গতবার আগুন লাগার ঘটনার পরে তিনি খিলগাঁও থানাকে এসব অবৈধ দোকান সরানোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। অবৈধ এসব দোকানপাটের বিষয়ে তাঁর অবস্থান এখনো স্পষ্ট। তিনি খিলগাঁও থানা কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাইবেন, কেন অবৈধ দোকানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’ সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ভবনটির বাকি কাজ শেষ করতে একাধিকবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগের পর এবার বরাদ্দ নিশ্চিত হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন।

সরকারের গণপূর্ত বিভাগের অঞ্চল-৪ একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ওই কমিউনিটি সেন্টারে দোকানপাট করার জন্য তাঁরা কাউকে অনুমোদন দেননি। কমিউনিটি সেন্টারটির বাকি কাজ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত বছর গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। তাঁরা পাঠিয়েছেন। পরে মন্ত্রণালয় থেকে কিছু সংশোধনী চাওয়া হয়েছে। সংশোধনীটি তাঁরা কয়েক দিনের মধ্যে পাঠিয়ে দেবেন।