ময়মনসিংহ নগরে ইজিবাইকে বাড়ছে যানজট

যানজটে বিপর্যস্ত ময়মনসিংহ নগর। প্রায় প্রতিটি সড়কেরই এমন চিত্র। সম্প্রতি নগরের নতুন বাজার এলাকায়।  ছবি: আনোয়ার হোসেন
যানজটে বিপর্যস্ত ময়মনসিংহ নগর। প্রায় প্রতিটি সড়কেরই এমন চিত্র। সম্প্রতি নগরের নতুন বাজার এলাকায়। ছবি: আনোয়ার হোসেন

১০ ডিসেম্বর। বেলা একটা। ময়মনসিংহ নগরের বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে থেকে বাতিলকল মোড় পর্যন্ত সড়কে তীব্র যানজট। সাধারণত এ সড়কটি ময়মনসিংহের অন্যান্য সড়কের চেয়ে একটু বেশি প্রশস্ত হওয়ায় আগে যানজট হতো না। তবে সম্প্রতি এ সড়কটিতেও দিনের বেলায় যানজট হচ্ছে।

১৫ মিনিট বাদে দেখা যায়, নতুন বাজার মোড় এলাকায় চারদিকের সড়কেই অসংখ্য ইজিবাইক আর রিকশা আটকে আছে। তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে সেখানে। এ রকম দৃশ্য এখন প্রতিনিয়তই দেখা যায় নগরের চরপাড়া, গাঙ্গিনারপাড়, নতুন বাজার, জিলা স্কুল মোড়, ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড এলাকা ও স্টেশন রোডে।

যানজটের এ সমস্যা বেশ পুরোনো হলেও গত ছয় মাসে তা প্রকট আকার ধারণ করেছে। নগরবাসীর ভাষ্য, ছয় মাস ধরেই যানজট অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। সকালে টাউন হল মোড় থেকে স্টেশন রোড পর্যন্ত সড়ক আর ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড থেকে চরপাড়া মোড় পর্যন্ত সড়ক দুটি প্রায় স্থবির হয়ে থাকে।

নগরে যানজট বাড়ার কারণ হিসেবে সিটি করপোরেশন বলছে, ময়মনসিংহ একটি পুরোনো শহর। সড়কগুলো খুব সরু। গত ১০ বছরে এ নগরে মানুষ বেড়েছে কয়েক গুণ। নগরের ভেতর দিয়ে অন্তত ছয়টি রেলক্রসিংয়ে আটকা পড়তে হচ্ছে যানবাহন। তা ছাড়া নগরে নিয়ম না মেনে প্রতিদিন চলছে অসংখ্য ইজিবাইক ও রিকশা। এসব কারণে অনেক চেষ্টা থাকার পরও যানজট সমস্যার কোনো সমাধান হচ্ছে না। তবে খুব দ্রুত, পরিবহনমালিক, শ্রমিক, ট্রাফিক বিভাগ, রেলওয়েসহ বিভিন্ন বিভাগের মানুষদের নিয়ে সিটি করপোরেশন একটি সভা করে যানজট থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে আলোচনা করবে।

যাত্রীরা বলেন, যানজটের আরও কারণ থাকলেও মূলত সড়কে ইজিবাইক ও রিকশার কারণে তা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রায় এক বছর ধরে নগরের বিভিন্ন সড়কে দেখা যাচ্ছে ইজিবাইক প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি। অনেক ইজিবাইক একজন কি দুজনের বেশি যাত্রীও পাচ্ছে না। অথচ একটি ইজিবাইকে সাত থেকে আটজন যাত্রী বসতে পারে। সিটি করপোরেশনের উচিত, এসব ইজিবাইক চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের হিসাবে, বর্তমানে বৈধ ইজিবাইকের সংখ্যা ছয় হাজার। আর রিকশার সংখ্যা ১০ হাজার।

কয়েকজন চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিটি করপোরেশন নির্বাচন হওয়ার পর থেকে ময়মনসিংহ নগরে বেড়েছে ইজিবাইক। শহরতলিতে থাকা কয়েকটি ইউনিয়নের ইজিবাইক ও রিকশা শহরে আসত না আগে। নির্বাচনের পর থেকে এসব ইজিবাইক নিয়মিতভাবে ময়মনসিংহ নগরে চলাচল করছে। তা ছাড়া ময়মনসিংহ পৌরসভা থেকে অনুমতি পাওয়া ইজিবাইকগুলো জোড় ও বিজোড় সংখ্যায় ভাগ হয়ে এক দিন পরপর পালাক্রমে চলাচল করার নিয়ম। জোড় ও বিজোড় সংখ্যায় ভাগ করা ইজিবাইকগুলো লাল ও সবুজ রঙে চিহ্নিত। তবে এ ক্ষেত্রেও অনেক চালক নিয়ম না মেনে প্রতিদিন চালাচ্ছেন। আবার অনেকেই রাতারাতি ইজিবাইকের রং বদলে ভুয়া নম্বর ব্যবহার করে প্রতিদিন চলছে। এ কারণে নগরের বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।

যানজন নিয়ন্ত্রণের জন্য নাগরিক আন্দোলন কমিটিসহ একাধিক নাগরিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে সিটি করপোরেশনের কাছে বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগের যুগ্ম আহ্বায়ক আইনজীবী শিব্বির আহমেদ বলেন, যানজটের কারণে বর্তমানে ময়মনসিংহ নগরী বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এ সমস্যা নিরসন না করা হলে দিনে দিনে মানুষ এই নগর ছেড়ে চলে যাবে।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, যানজটের বিষয়টি মেয়র জানেন। তিনি এ নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের সঙ্গে সভা করে সমাধানের উদ্যোগ নেবেন।

আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালাব। তবে যানজট সহনীয় পর্যায়ে নেওয়ার জন্য আইন প্রয়োগের চেয়ে সবার সহযোগিতা বেশি প্রয়োজন।’