প্রত্যেক চাকরি প্রার্থীর কাছ থেকে নেওয়া হতো ১২ থেকে ১৩ লাখ টাকা

প্রতারণা  চক্রের তিন সদস্য (সামনে বা থেকে দুজন, পেছনে একজন)। ছবি: সংগৃহীত
প্রতারণা চক্রের তিন সদস্য (সামনে বা থেকে দুজন, পেছনে একজন)। ছবি: সংগৃহীত

নিয়োগ পরীক্ষা, প্রবেশপত্র, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ও নিয়োগপত্র সবই দেওয়া হতো চাকরি প্রার্থীদের। সবই ছিল সাজানো। এর জন্য প্রত্যেক প্রার্থীর কাছ থেকে ১২ থেকে ১৩ লাখ টাকা নেওয়া হতো। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস, চট্টগ্রাম বন্দর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার নামে এভাবে প্রতারণা করে আসছিল একটি চক্র। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে।

গ্রেপ্তার তিনজন হলেন ঝালকাঠির রিপন সিকদার, ফেনীর আনোয়ারুল হোসেন ও নারায়ণগঞ্জের তোফাজ্জল হোসেন। পিবিআই ঢাকা থেকে রিপনকে এবং বাকি দুজনকে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ থেকে গতকাল মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে ভুয়া নিয়োগপত্র, প্রবেশপত্র, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র, পেনড্রাইভসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম পাওয়া যায়।

পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মঈন উদ্দিন আজ বুধবার তাঁর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, চলতি বছরের ৮ সেপ্টেম্বর প্রতারকদের প্রায় ৪০ লাখ টাকা দিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে অফিস সহায়কের নিয়োগপত্র নিয়েছিলেন সাইফুল ইসলাম, আবদুল গফুর ও মিলন চক্রবর্তী। তাঁরা চাকরি যোগদান করতে গিয়ে জানতে পারেন তাঁদের নিয়োগপত্রটি ভুয়া। পরে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করতে পিবিআই মহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) বনজ কুমার মজুমদার নির্দেশ দেন। এরপর পিবিআই মাঠে নামে। গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে একজনকে এবং মঙ্গলবার পাঠানটুলি এলাকার একটি হোটেল থেকে এই চক্রের অপর ২ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা ২০১৫ সাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে চাকরি প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। বিশেষ করে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগের কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তাদের নিজস্ব লোক দিয়ে টাকা সংগ্রহ করে থাকে। চাকরি প্রার্থীদের যাতে সন্দেহ না হয় সে জন্য পরীক্ষা, প্রশ্নপত্র, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, নিয়োগপত্র সবই দেয় চক্রটি। নিয়োগপত্র হাতে না আসার আগে তাদের বিষয়টি গোপন রাখতে বলা হয়।

পিবিআই চট্টগ্রামের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, চক্রটি স্বীকার করেছে তারা এই পর্যন্ত ২৩ জনকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নিয়োগপত্র, ২০ জনকে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পত্র, ২১ জনকে নিয়োগপত্র, চট্টগ্রাম বন্দরে ১ জনের নামে নিয়োগপত্র ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ৪ জনের নামে নিয়োগপত্র ও এনবিআরে ২৭ জনের নামে নিয়োগপত্র দিয়েছে।

এ দিকে গ্রেপ্তার আসামিদের আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আজ ডবলমুরিং থানায় পিবিআইয়ের করা মামলায় আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হয়। নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, মহানগর হাকিম মেহনাজ রহমান শুনানি শেষে তিন আসামির দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

চাকরি প্রার্থীদের প্রতারকদের সঙ্গে কোনো ধরনের লেনদেন না করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মঈন উদ্দিন। তিনি বলেন, এই বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।