নামের ভুলে ৮ দিন কারাভোগ

দুজনের নাম প্রায় এক। একজনের নাম আজিজুর রহমান। অপরজনের আবদুল আজিজ। দুজনের বাবার নামও একই। আজিজুর রহমানের বাবার নাম মো. আহাদ আলী ও আবদুল আজিজের বাবার নাম মৃত আহাদ আলী। দুজনের বাড়ি যশোরের চৌগাছা উপজেলার সিংহঝুলী গ্রামে। পার্থক্য শুধু বয়সে। আজিজুর রহমানের বয়স ৪৭ বছর আর আবদুল আজিজের ৬১।

নামের এই মিলের কারণে একটি মামলায় আজিজুর রহমানের বদলে ভুল করে আবদুল আজিজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৯ ডিসেম্বর রাতে চৌগাছা থানার সহকারী উপপরিদর্শক আজাদুল ইসলামের নেতৃত্বে পু‌লিশ আবদুল আজিজকে তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন ১০ ডিসেম্বর তাঁকে আদালতে নেওয়া হয়। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

আট দিন কারাভোগের পর গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন আবদুল আজিজ। এর আগে ১৪ ডিসেম্বর প্রথম আলোতে ‘নামের ভুলে আজিজ কারাগারে’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

এরপর গত রোববার চৌগাছা থানার পুলিশ আদালতে একটি প্রতিবেদন দেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, মামলার প্রকৃত আসামি আজিজুর রহমান বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন। নিজের নাম ও বাবার নামের মিল থাকায় ভুল করে আজিজুর রহমানের পরিবর্তে আবদুল আজিজকে গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রতিবেদনে প্রকৃত আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য ওয়ারেন্ট ফেরত পেতে আবেদন জানানো হয়। চৌগাছা উপজেলার সিংহঝুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলও এ ব্যাপারে একটি প্রত্যয়নপত্র দেন।

এরপর মঙ্গলবার যশোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সাইফুদ্দিন হুসাইন আবদুল আজিজকে মু‌ক্তির আদেশ দেন। আদালতের আদেশ কারাগারে পৌঁছানোর পর ওই দিন সন্ধ্যায় যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান আবদুল আজিজ।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর রাতে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার না‌রিকেলবা‌ড়িয়া গ্রামে নবকুমার সাহার বা‌ড়িতে ডাকা‌তির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরদিন নবকুমার সাহা অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের নামে বাঘারপাড়া থানায় একটি মামলা করেন। ২০১১ সালের ৩০ মার্চ বাঘারপাড়া থানার উপপরিদর্শক গাজী আবদুল কাইয়ুম লুটতরাজ ও বি‌স্ফোরক দ্রব্যা‌দি আইনে নয়জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।

অভিযোগপত্রে ৭ নম্বর আসামি করা হয় চৌগাছা উপজেলার সিংহঝু‌লী গ্রামের মো. আহাদ আলীর ছেলে আজিজুর রহমানকে। অভিযোগপত্রে তাঁর বয়স উল্লেখ করা হয় ৩০ বছর। আদালত পলাতক আসামি আজিজুর রহমানসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জা‌রি করেন। ২০১২ সালের ১ মার্চ পুলিশ আজিজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়। আদালত আজিজুর রহমানকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ২০১২ সালের ৫ মার্চ জামিনে মুক্তি পান আজিজুর রহমান। তিন বছর আগে আজিজুর রহমান কাতার চলে যান। আদালতে হাজির না হওয়ায় যশোরের অতি‌রিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-৪ ৭ ডিসেম্বর তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জা‌রি করেন।

চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রিফাত খান বলেন, প্রকৃত আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য ওয়ারেন্ট ফেরত পেতে আবেদন জানানো হয়েছে। এরপর আদালত আবদুল আজিজকে মুক্তি দিয়েছেন।