ছাত্রলীগের বিতর্কিতরা প্রকাশ্যে

সিলেটে এমসি কলেজে গত বছরের ১৯ মে ছাত্রলীগের দুপক্ষে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে একপক্ষে অস্ত্রধারীর সঙ্গেই ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম।
গণমাধ্যমে এ ছবি প্রকাশের পর অনেকটা আড়ালে ছিলেন তিনি। সেই জাহাঙ্গীরকে গত বুধবার রাতে নগরের টিলাগড়ে আয়োজিত একটি ক্রীড়া অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে দেখা গেছে। অনুষ্ঠানমঞ্চে প্রধান অতিথি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের পাশেই দাঁড়িয়ে জাহাঙ্গীর ‘বিজয়সূচক’ চিহ্ন দেখান। ওই অনুষ্ঠানে শুধু জাহাঙ্গীর নন, গত ১৫ সেপ্টেম্বর সিলেটে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সমাবেশ মঞ্চে সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের ওপর হামলার ঘটনায় বিলুপ্ত জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিরন মাহমুদও ছিলেন।
ক্রীড়া অনুষ্ঠানের আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, সিলেট সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আজাদুর রহমানের নামে ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হয় গত বুধবার রাতে। টিলাগড় পয়েন্টসংলগ্ন ফুটসাল মাঠে টুর্নামেন্টের চূড়ান্ত খেলা দেখেন অর্থমন্ত্রী। পরে তিনি চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স আপ দলের খেলোয়াড়দের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, অর্থমন্ত্রী উচ্ছ্বসিত হওয়ার সুযোগে অনুষ্ঠানমঞ্চে অর্থমন্ত্রীর ডানে ও বাঁয়ে অবস্থান নেন ছাত্রলীগের হিরন মাহমুদ ও জাহাঙ্গীর আলম। একপর্যায়ে পুরস্কার গ্রহণকারীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে তাঁরা অতিথির হাত থেকে পুরস্কার নেন। জানা যায়, এমসি কলেজে ১৯ মে সংঘর্ষের সময় অস্ত্রধারীদের পথ দেখানোর ঘটনায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। তবুও তিনি অনেকটা আড়ালেই ছিলেন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে তিনি দলীয় অনুষ্ঠান ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। অর্থমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে বুধবার রাতেই তাঁকে প্রথম দেখা যায়। একইভাবে ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পর প্রায় এক মাস আত্মগোপনে ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হিরন মাহমুদ। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে তাঁকে দলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা গেলেও অর্থমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে একেবারে মঞ্চে এবারই প্রথম দেখা গেল বলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জানান।
দীর্ঘদিন আড়ালে থেকে এখন প্রকাশ্যে আসার কারণ সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করেও জাহাঙ্গীরের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। ছাত্রলীগে নিজের অবস্থান ‘স্বচ্ছ’ দাবি করে হিরন মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বিতর্কিত নই। তবে যে ঘটনার জন্য (সিপিবির সভাপতির ওপর হামলা) বিতর্কিত বলার চেষ্টা হয়, সেটি ষড়যন্ত্রমূলক। যা হয়নি, তাই রটানো হয়েছে।’
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে গতকাল রাতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও অর্থমন্ত্রীকে পাওয়া যায়নি। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে থাকা তাঁর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) তানভীর বাশার এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। পরে তানভীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী আমাকে যেটা বললেন, অনুষ্ঠানমঞ্চে সেদিন যাঁরা উঠেছিলেন, তাঁদের সবাইকে তিনি চেনেনও না। উচ্ছ্বসিত মুহূর্তে কোন ফাঁকে, কে মঞ্চে উঠে ছবি তুলেছেন, সেটা তাঁর পক্ষে বোঝা মুশকিল।’