উত্তরে জেঁকে বসেছে শীত

খড়কুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা। গতকাল কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাথরডুবি এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
খড়কুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা। গতকাল কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাথরডুবি এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

কুড়িগ্রাম ও পঞ্চগড়ে শীতের তীব্রতা আরও বেড়েছে। সৈয়দপুরে হঠাৎ চলে আসা ঠান্ডার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে, বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা।

সৈয়দপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হাকিম জানান,আজ সৈয়দপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি জানান, ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ মাঝারি (৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা) ধরনের শৈত্যপ্রবাহের মধ্য দিয়ে যেতে হতে পারে বলে জানান তিনি।

 কুড়িগ্রামে গতকাল বুধবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এতে বিপাকে পড়েছে শ্রমজীবী ও ছিন্নমূল মানুষ।

ধরলা নদীর তীরবর্তী কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মোগলবাসা, উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ ঘন কুয়াশা ও শীতের কারণে সকালে কাজে বেরোতে পারছেন না। মোগলবাসা ইউনিয়নের চর সিতাইঝারের মোকসেদ আলী বলেন, শীত আর বাতাসে বাড়ির বাইরে যাওয়া যায় না। বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মশালের চরের দিনমজুর সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘চরে কোনো কাম নাই। কালাই বুনছি। তোলার সময় হইছে। শীতে পারতাছি না।’

এসব চরের মানুষ ও জনপ্রতিনিধিরা জানান, গত বন্যায় এলাকার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপর তীব্র ঠান্ডায় মানুষের অবস্থা কাহিল। গরম কাপড়ের অভাব। এখন পর্যন্ত কোনো কম্বল পাননি। জেলার চরাঞ্চলসহ ৯ উপজেলার গ্রামগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানকার অধিবাসীরা আগুন জ্বালিয়ে ঠান্ডা নিবারণের চেষ্টা করছে। নদ-নদীর অববাহিকায় ঘন কুয়াশাসহ শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে।

এদিকে শীতের কারণে ডায়রিয়া বাড়ছে। বিশেষ করে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ২৭টি শিশুসহ ৩১ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। গতকাল বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৬ জন ডায়রিয়া ও ৩ জন নিউমোনিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে। অনেকে মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছে।

কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জাকিরুল ইসলাম জানান, শীতজনিত রোগ ব্যাপক আকারে দেখা দেয়নি। ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত রোগের সুচিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, গত মঙ্গলবার জেলায় তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল বুধবার ছিল ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দু-এক দিনের মধ্যে তাপমাত্রা আরও কমে জেলায় শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। ২৪ কিংবা ২৫ ডিসেম্বর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কাও রয়েছে।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন শীতের তীব্রতা বাড়ার কথা জানিয়ে বলেন, শীতার্ত মানুষের গরম কাপড়ের জন্য ঊর্ধ্বতন মহলে জানানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত জেলায় ৫১ হাজার ৫০০টি কম্বল পাওয়া গেছে। সেগুলো ইতিমধ্যে ৯ উপজেলা ও ৩ পৌরসভায় পাঠানো হয়েছে।

এদিকে বুধবার সকাল নয়টায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া বেলা ১১টা ২০ মিনিটে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ১৫ ডিসেম্বর সকালে তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় এবং ওই দিন বিকেলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এরপর থেকে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে থাকে। ১৬ ডিসেম্বর সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বিকেলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

১৭ ডিসেম্বর সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বিকেলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক দিন ধরেই পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা অনেক ওঠানামা করছে। দিন দিন বাড়ছে কুয়াশার পরিমাণ। দুই দিন ধরে দেখা যাচ্ছে ঘন কুয়াশা। তবে আকাশে আট ভাগের মধ্যে ছয় ভাগ মেঘ থাকায় বায়ুমণ্ডল কিছুটা উষ্ণ। এ জন্য তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে বিরাজ করছে।

রহিদুল ইসলাম বলেন, দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড় হিমালয়ের কাছাকাছি হওয়ায় সেদিক থেকেই হিমেল বাতাস আসে। এ জন্য অন্য জেলার চেয়ে অনেক আগেই শীত নামে পঞ্চগড়ে। এ ছাড়া অন্যান্য জেলার তুলনায় শীতের তীব্রতা ও স্থায়িত্ব থাকে বেশি।

আবহাওয়া অধিদপ্তর ও পূর্বাভাস কেন্দ্রের উদ্ধৃতি দিয়ে রহিদুল ইসলাম বলেন, এ মাসে (ডিসেম্বর) ক্রমান্বয়ে রাতের তাপমাত্রা কমবে এবং মাসের শেষের দিকে দুই থেকে তিনটি মৃদু ও মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, শীতার্ত মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসন থেকে পাঁচ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) মাধ্যমে ২৮ হাজার কম্বল বিতরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন এলাকায় শীতার্ত মানুষের মধ্যে কম্বল ও শীতবস্ত্র বিতরণ করছেন বলেও তিনি জানান।