হিহি শীতে কষ্ট আর কষ্ট

পঞ্চগড়ে ঘন কুয়াশায় ঢেকে গেছে চারদিক। দিনের বেলাও হেডলাইট জ্বেলে মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন এক ব্যক্তি। ডুডুমারী এলাকা, সদর উপজেলা, ১৯ ডিসেম্বর। ছবি: রাজিউর রহমান
পঞ্চগড়ে ঘন কুয়াশায় ঢেকে গেছে চারদিক। দিনের বেলাও হেডলাইট জ্বেলে মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন এক ব্যক্তি। ডুডুমারী এলাকা, সদর উপজেলা, ১৯ ডিসেম্বর। ছবি: রাজিউর রহমান

দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল প্রচণ্ড শীতে কাবু হয়ে পড়েছে। রাতে কুয়াশা বৃষ্টি পড়ে। ঘন কুয়াশা আর মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষ। বিভিন্ন এলাকার মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। প্রয়োজন ছাড়া লোকজন বাড়ির বাইরে বের হচ্ছে না।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পঞ্চগড়ে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি।

পৌষের শুরু থেকেই শীতের এমন দাপটে কাবু হয়ে পড়েছে দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের মানুষ। বিশেষ করে হিমালয়ের খুব কাছাকাছি হওয়ায় জেলার সর্ব উত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়ায় অনুভূত হচ্ছে হাড়কাঁপানো শীত। সেখানে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। তিন দিন ধরে ভালোভাবে দেখা মিলছে না সূর্যের। দিনে বেশির ভাগ সময়ই হেডলাইট জ্বেলে সড়কে চলাচল করছে যানবাহন।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল ৯টায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে গতকাল বুধবার সকালে তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৩.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কারণে মানুষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। এতে রিকশা-ভ্যানের চালকদের আয় কমে গেছে। শীতের মধ্যে কাজ করতে কষ্ট হচ্ছে দিনমজুরদের।

ভ্যানচালক সফিয়ার রহমান জানান, সকাল সকাল বের হয়েছেন ভ্যান নিয়ে। কিন্তু পথে লোকজন কম। যাত্রী খুব একটা পাচ্ছেন না। ঠান্ডায় বেশিক্ষণ বাইরে থাকা যাচ্ছে না।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া এলাকার নির্মাণশ্রমিক জামান আলী বলেন, তাঁদের সারা দিন কাজ করতে হয় ইট, পাথর, বালু, সিমেন্ট আর পানি দিয়ে। প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে এখন কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছে। হাত-পা ঠান্ডায় জমে যাচ্ছে।

তেঁতুলিয়া উপজেলা সদরের বাসিন্দা মকলেছার রহমান বলেন, তেঁতুলিয়ায় রাত থেকে হিমেল বাতাস বইছে। একই সঙ্গে কুয়াশাও পড়ছে।

কুড়িগ্রামে খড়কুটো জ্বেলে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে একটি পরিবার। ছবি: প্রথম আলো
কুড়িগ্রামে খড়কুটো জ্বেলে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে একটি পরিবার। ছবি: প্রথম আলো

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েক দিন ধরেই পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা অনেকটা ওঠানামা করছে। গতকাল রাত থেকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আসা এই হিমেল বাতাসেই মানুষ শীতে কাবু হয়ে পড়েছে।

কুড়িগ্রামেও মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে চলেছে। সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৮ ডি‌গ্রি সেল‌সিয়াস, যা গতকালের চেয়ে ১ ডিগ্রি সেল‌সিয়াস কম। কনকনে ঠান্ডা হাওয়ায় জনজীবন কাহিল হয়ে পড়েছে।

জেলার চরাঞ্চলসহ ৯ উপজেলার গ্রামগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানের বাসিন্দারা আগুন জ্বেলে ঠান্ডা নিবারণের চেষ্টা করছে। নদ-নদীর অববাহিকায় ঘন কুয়াশাসহ শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। সারা রাত কুয়াশাকণা পড়ে।

রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, শৈত্যপ্রবাহ আগামী শনিবার পর্যন্ত থাকতে পা‌রে। ২৪ বা ২৫ ডিসেম্বর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

শীতের কারণে জেলায় ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে শিশুরা অতি ঠান্ডার কারণে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ২৭ শিশুসহ ৩১ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৬ জন ডায়রিয়া ও ৩ জন নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় অনেক রোগীকে মেঝেতে স্থান নিতে হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাকিরুল ইসলাম জানান, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত রোগের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ধরলা নদীর তীরবর্তী সদর উপজেলার মোগলবাসা, উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘন কুয়াশা ও শীতের কারণে অধিকাংশ মানুষ কাজে বের হতে পারছেন না।

মোগলবাসা ইউনিয়নের চর সিতাইঝারের মোকসেদ আলী জানান, এত শীত যে বাড়ির বাইরে যাওয়া যায় না।
বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মশালের চরের দিনমজুর সহিদুল ইসলাম বলেন, জমিতে তিনি কালাই বুনেছেন। তোলার সময় হলেও শীতের কারণে তুলতে পারছেন না। চরাঞ্চলের দরিদ্র মানুষ গরম কাপড়ের অভাবে শীতে কষ্ট পাচ্ছে।