বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কে ৯০ কিলোমিটার যানজট

বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের ৯০ কিলোমিটার সড়কজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ছবিটি নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার হাজিরহাট এলাকা থেকে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তোলা। ছবি: আনিসুর রহমান
বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের ৯০ কিলোমিটার সড়কজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ছবিটি নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার হাজিরহাট এলাকা থেকে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তোলা। ছবি: আনিসুর রহমান

উত্তরের বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কে ৯০ কিলোমিটার সড়কজুড়ে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যানজটে শত শত যাত্রীবাহী বাস, মালবোঝাই ট্রাক ও মাইক্রোবাস আটকা পড়েছে।

গত মঙ্গলবার রাত থেকে যানজট শুরু হলেও গতকাল বুধবার গভীর রাত থেকে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১টা পর্যন্ত পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। হাইওয়ে, ট্রাফিক ও পুলিশ প্রশাসন পরিস্থিতি নিরসনের চেষ্টা চালাচ্ছে।

এদিকে যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা, অন্য দিকে তীব্র শীত। সব মিলিয়ে যাত্রীরা বিপাকে পড়েছেন। যাত্রীবাহী কোচের চালক, যাত্রী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার হামকুড়িয়া ও মান্নাননগর এলাকায় সংস্কার কাজ ধীর গতিতে চলছে। আবার বগুড়া-ঢাকা মহাসড়কের রায়গঞ্জ উপজেলার ভুইয়াতিতে একটি ব্রিজ দেবে যাওয়ায় যানজন পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

মহাসড়কে তীব্র যানজটের কারণ সম্পর্কে দায়িত্বরত নাটোর জেলা ট্রাফিক পুলিশের সার্জন মো. মশিউর রহমান বলেন, বনপাড়া-হাটিকুমরুল সড়ক দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৬ জেলার পরিবহন চলাচল করে থাকে। সংস্কার কাজের জন্য বেশ কিছু দিন ধরে যানজট সয়ে এসব পরিবহন চলাচল করত। কিন্তু বগুড়া-ঢাকা মহাসড়কের ভুইয়াগাতিতে ব্রিজ দেবে যাওয়ার কারণে রংপুর, পঞ্চগড়, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁওসহ উত্তরের ১৬ জেলার সব পরিবহন নাটোর ঘুরে এই মহাসড়কে চলাচল শুরু করেছে। এ কারণে যানজট পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি নিরসনে পুলিশকে বেগ পেতে হচ্ছে।

পরিবহনের চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘ যানজটের কারণে বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের বনপাড়া গোলচত্বর থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত যানজট দেখা দিয়েছে। পুলিশি কার্যক্রম সন্তোষজনক নয় বলেও অভিযোগ করেন তাঁরা। যানজটের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

আজ দুপুরে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার হাজিরহাটে আটকে থাকা শ্যামলী পরিবহনের যাত্রী মো. নজরুল ইসলাম, আবিদুর রহমানসহ অন্তত পাঁচজন যাত্রী বলেন, তাঁরা বুধবার রাত ১০টায় পঞ্চগড় থেকে গাড়িতে ওঠেন। মাঝ রাতে বগুড়া ছেড়ে ভুইয়াগাতি পর্যন্ত বাসটি এসেছিল। কিন্তু সেখানকার ব্রিজটি দেবে যাওয়ায় প্রায় ১৫০ কিলোমিটার ঘুরপথে নাটোর হয়ে সেখানে আটকে পড়েছেন। প্রায় ৫ ঘণ্টা সেখানে আটকে রয়েছেন বাসের যাত্রীরা। তাঁদের সঙ্গে থাকা কমপক্ষে ১০ জন নারী ও শিশুকে নিয়ে দুর্ভোগে রয়েছেন। তাঁদের মতো অসংখ্য কোচের যাত্রীরা এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন।

যাত্রীবাহী কোচের পাশাপাশি কাঁচা মালামালবাহী ট্রাকগুলো আটকে পড়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকায় ট্রাকে থাকা কাঁচা তরকারি নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এতে আর্থিক ক্ষতিতে পড়বেন কাঁচা মালের মহাজনরা।

এদিকে বুধবার ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা কয়েকটি কোচের চালকেরা বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত তাঁরা সহজে এলেই সেতুতে এ পাশে এসে যানজটে আটকে পড়েন তাঁরা। টানা প্রায় ছয় ঘণ্টা দুর্ভোগ সয়ে তারা গুরুদাসপুরে পৌঁছান। তাঁদের ভাষ্যমতে, সেতু থেকে হাজিরপুর পর্যন্ত হাজার হাজার গাড়ি সড়কটির উভয় পাশে লাইন ধরে আটক রয়েছে। পুলিশের তৎপরতা নিয়েও অভিযোগ করেন এসব চালকেরা।

সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, মাছ পরিবহনের গাড়ির পানি পড়ে মহাসড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সংস্কার কাজ শুরু হওয়ায় যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। দ্রুতই তা নিরসন হবে।