সাংবাদিকের দুই পা ভেঙে দিল সন্ত্রাসীরা

জামালপুর পৌর শহরে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে শেলু আকন্দ (৫০) নামের এক সাংবাদিকের দুই পা ভেঙে দিয়েছে একদল সন্ত্রাসী। গুরুতর আহত অবস্থায় আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

হামলার ঘটনাটি ঘটে গতকাল বুধবার রাত ১১টার দিকে জামালপুর শহরের দেওয়ানপাড়ায় ব্রহ্মপুত্র নদের শহর রক্ষা বাঁধ এলাকায়।

গুরুতর আহত সাংবাদিক দেওয়ানপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি জামালপুর থেকে প্রকাশিত দৈনিক ‘পল্লীকণ্ঠ প্রতিদিন’-এর নিজস্ব প্রতিবেদক। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ বুধবার রাত তিনটার দিকে অভিযান চালিয়ে রাকিব খান (২৮) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। রাকিব জামালপুর জেলা ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক। তিনি জামালপুর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাসানুজ্জামান খানের ছেলে।

আহত সাংবাদিকের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি জামালপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে কাউন্সিলর হাসানুজ্জামান খানের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী এক সাংবাদিককে মারধর করেন। ওই ঘটনায় করা মামলার প্রধান সাক্ষী ছিলেন শেলু আকন্দ। সাক্ষী হওয়ার কারণে হাসানুজ্জামান খান ও তাঁর ছেলে রাকিব খান সাংবাদিক শেলু আকন্দকে হুমকি দিয়ে আসছিলেন। বুধবার রাত ১১টার দিকে রাকিব খানের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী লোহার রড দিয়ে শেলু আকন্দকে ব্যাপক মারধর করে। সন্ত্রাসীরা তাঁকে মৃত ভেবে জামালপুর শহরের দেওয়ানপাড়া ব্রহ্মপুত্র নদের শহর রক্ষা বাঁধ এলাকায় ফেলে পালিয়ে যায়। মারধরে শেলু আকন্দের দুই পা হাঁটুর নিচ থেকে ভেঙে গেছে। স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে সংবাদ পেয়ে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) পাঠানো হয়।

আহত শেলু আকন্দ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যক্তিগত কোনো শত্রুতা ছিল না হাসানুজ্জামান খানের সঙ্গে। সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে এক সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার সাক্ষী ছিলাম আমি। এতে তাঁরা বাবা-ছেলে আসামি ছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে আমি সাক্ষ্য দিয়েছিলাম। এতেই তাঁরা আমাকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছিলেন। শহর রক্ষা বাঁধ দিয়ে আমি হাঁটতে ছিলাম। হঠাৎ করে হাসানুজ্জামান খানের ছেলে রাকিব খান আমার পথরোধ করেন এবং সাক্ষী দিবি না—এই কথা বলেই আমাকে নির্মমভাবে মারধর শুরু করেন। মাটিতে ফেলে লোহার রড দিয়ে রাকিব খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২ জন আমার দুটি পা ভেঙে দেন। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য জামালপুর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাসানুজ্জামান খানের মুঠোফোনে ফোন করলেও তিনি ধরেননি। তাঁর বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের কাউকে পাওয়া যায়নি।

জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালেমুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বুধবার রাত তিনটার দিকে অভিযান চালিয়ে শহরের মুকুন্দবাড়ী এলাকা থেকে রাকিব খানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়েরর প্রস্তুতি চলছে। মামলা হওয়ার পর বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।’