ক্যাসিনো-কাণ্ডে ব্যবসায়ী সাহেদুলের বিরুদ্ধে মামলা

ক্যাসিনো–কাণ্ডে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের ধারাবাহিকতায় ব্যবসায়ী মো. সাহেদুল হকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ বৃহস্পতিবার দুদকের ঢাকা–১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি করেন সংস্থার সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী।

প্রথম আলোকে মামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুদকের মুখপাত্র প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য। তিনি বলেন, ওই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, চলমান শুদ্ধি অভিযান শুরুর পরপরই একটি ব্যাংক থেকে নগদ ১৪ কোটি টাকা তুলে নেওয়ার খবর বেরোনোর পর ব্যবসায়ী সাহেদুল হকের নাম আলোচনায় আসে। দুদক প্রাথমিক পর্যায়ে অনুসন্ধানের যে তালিকা তৈরি করে, তাতে উঠে আসে সাহেদুলের নাম।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, সাহেদুল হক যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। তিনি ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ভাগনে। ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাঁর যোগসাজশ রয়েছে। একসময় তিনি হাওয়া ভবনের কর্তাব্যক্তিদের ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে সূত্র জানায়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. সাহেদুল হক ২০১৭-১৮ করবর্ষ পর্যন্ত তাঁর আয়কর রিটার্নে ক্রিস্টাল ব্রিজ প্রাইভেট লিমিটেডের ১ লাখ ১ হাজার শেয়ারের বিনিয়োগ দেখিয়েছেন ১ কোটি ১ লাখ টাকা। যার প্রকৃত আয়ের উৎস পায়নি দুদক।

এ ছাড়া সাহেদুল হক নগদ ও বিভিন্ন ব্যাংকে জমা ৬২ লাখ ৪০ হাজার টাকা অস্থাবর সম্পদের ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু অনুসন্ধানের সময় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে পাওয়া তথ্য ও তাঁর নামে বিভিন্ন সঞ্চয়ী হিসাব যাচাই-বাছাই করে ৪ কোটি ৬৩ লাখ ৯৯ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ পাওয়া গেছে। এগুলোর কোনো বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি।

সাহেদুলের নিজ নামে আরও ২ কোটি ৬২ লাখ ৬১ হাজার ৪৮৮ টাকার স্থাবর সম্পত্তির তথ্য পেয়েছে দুদক। দুদকের অনুসন্ধানে সাহেদুল হকের বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে মোট ১৩ কোটি ৬৫ লাখ ৪০ হাজার ৯৩২ টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলে প্রথম দিনই রাজধানীর ইয়াংমেনস ফকিরাপুল ক্লাবে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে গ্রেপ্তার হন ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক (পরে বহিষ্কৃত) খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন অভিযানে একে একে গ্রেপ্তার হন কথিত যুবলীগ নেতা ও ঠিকাদার এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম, মোহামেডান ক্লাবের ডাইরেক্টর ইনচার্জ মো. লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, সম্রাটের সহযোগী এনামুল হক আরমান, জাকির হোসেন, কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের সভাপতি মোহাম্মদ শফিকুল আলম (ফিরোজ), অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান (মিজান) ও তারেকুজ্জামান রাজীব।

গ্রেপ্তার হওয়া এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বিপুল অর্থের মালিক হওয়া, অর্থ পাচারসহ নানা অভিযোগ ওঠে। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁদের অপকর্মে সহযোগী ও পৃষ্ঠপোষক হিসেবে সাংসদ, রাজনীতিক, সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন ব্যক্তির নাম উঠে আসে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তের পাশাপাশি এঁদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে মাঠে নামে দুদক। গত ৩০ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনো-কাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়। পরে আরও দুজনকে দলে যুক্ত করা হয়। দলের অন্য সদস্যরা হলেন উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. সালাহউদ্দিন, সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম, আতাউর রহমান ও মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী।

অনুসন্ধান দলের সদস্যরা গণমাধ্যমে আসা বিভিন্ন ব্যক্তির নাম যাচাই-বাছাই করে একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করে। সংস্থার গোয়েন্দা শাখার পক্ষ থেকে এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়। পাশাপাশি র‍্যাব ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধানেরা দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করেন। সেসব তথ্য ও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে এ পর্যন্ত ১৯টি মামলা করেছে দুদক দল। এসব মামলা হয়েছে ঠিকাদার জি কে শামীম, বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক ও তাঁর ভাই রুপন ভূঁইয়া, অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান, বিসিবি পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, কলাবাগান ক্লাবের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ, এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ, যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক আনিসুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী সুমি রহমান, কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান, তারেকুজ্জামান রাজীব, যুবলীগের সাবেক প্রভাবশালী নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, এনামুল হক আরমান, জাকির হোসেন ও তাঁর স্ত্রী আয়েশা আক্তার সুমা এবং গণপূর্তের সিনিয়র সহকারী শাখাপ্রধান মুমিতুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী জেসমিন আক্তারের বিরুদ্ধে।