ছাত্রলীগ নেতার স্বীকারোক্তি

ছিনতাই ও পর্নোগ্রাফি আইনের দুটি মামলায় সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাদিকুর রহমান ও তাঁর এক নারী সহযোগী গত বুধবার সন্ধ্যায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।  গত সোমবার একই আদালতে আকাশ রহমান নামের এক সাংবাদিক জবানবন্দি দিয়েছেন।

গ্রেপ্তার সাদিকুর সাতক্ষীরা শহরের মুনজিতপুরের, ওই নারী শহরের বাসিন্দা এবং আকাশ শহরের সুলতানপুর এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকেন। তাঁর বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়ি উপজেলার টিয়ারখালী গ্রামের বাসিন্দা।

 সাদিকুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিলাশ মণ্ডলের আদালতে বুধবার সন্ধ্যায় স্বীকারোক্তিমূলক ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি ৩১ অক্টোবর শ্যামনগরের বিকাশ এজেন্টের ২৬ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। বর্ণনায় বলা হয়, সদর উপজেলার আলীপুর বাজারে বসে তিনি, মামুনুল ইসলাম, সাইফুল, মামুন, মোস্তফা, আসিক ও মোহন ঘটনার পরিকল্পনা করেন। ছিনতাইয়ের জন্য অস্ত্র সরবরাহ করেন মোস্তফা। ছিনতাইয়ের ঘটনায় নাঈম, মেহেদি, বাবু ও শামীম ছিলেন। ছিনতাইয়ের পর তিনি ঢাকায় চলে যান। গত সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশ তাঁকে ঢাকা থেকে ছিনতাইয়ের চার লাখ টাকাসহ গ্রেপ্তার করে।

একই আদালতে একই দিন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন ওই নারী। তিনি তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, ‘ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক থাকার সময় সাদিকুরের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। সাদিকুর আমার মায়ের অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে বাধ্য করেছে বিভিন্ন লোকের সঙ্গে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে। পাশাপাশি ভিডিও করে তাঁদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তাঁরা। সাদিকুরের কথামতো ফজলুর রহমানের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে তাঁর বাড়িতে যাই। তাঁর শহরের বাড়িতে ফজলুরের ইচ্ছায় শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করি। তা ডিভাইসের মাধ্যমে ভিডিও করে সাদিকুরের কাছে দিই। পরে এ ভিডিও ব্যবহার করে সাংবাদিক আকাশ, পৌর যুবলীগের নেতা তুহিন, সংগ্রাম টাওয়ারের তুহিন, সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম, সাদিকুরের পাতানো চাচা মিলন, মামুনুল ও রুমন চাঁদাবাজি করতেন।’

আকাশ একই আদালতে গত সোমবার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি উল্লেখ করেন, সাংবাদিক হিসেবে কাজ করার সুবাদে মনিরুল, সাদিকুর, তুহিন, সাইফুল ও মামুনুলের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা হয়। তুহিন, সাদিকুর, সাইফুল ও মামুনুল শহরে ওই নারীকে দিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তি ও সরকারি কর্মকর্তাদের প্রেমের ফাঁদে ফেলতেন। এরপর তাঁদের সঙ্গে নগ্ন ভিডিও মেয়েটি হাতঘড়ির মাধ্যমে ধারণ করতেন। এসব ভিডিও ওই নারী মনিরুলের কাছে দিতেন। মনিরুল ওসব ভিডিও ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে চাঁদা দাবি করতেন। পাশাপাশি সাদিকুরসহ অন্যদের চাঁদাপ্রাপ্তিতে সহযোগিতা করতেন।’

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ব্যাপারে জানাতে চাইলে গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শক হারান চন্দ্র পাল বলেন, তিনজনই জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিলাশ মণ্ডলের আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁদের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ৩১ অক্টোবর কালীগঞ্জের পাওখালীতে এক বিকাশ এজেন্টের ২৬ লাখ টাকা ছিনতাই হয়। এই ছিনতাই চক্রের মাস্টারমাইন্ড সাদিকুরের দুই সহযোগী সাইফুল ও মামুনুল গত ৩০ নভেম্বর পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। এরপর থেকে সাদিকুর পলাতক ছিলেন। সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে সাদিকুরকে জেলা ছাত্রলীগের সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কার ও জেলা কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে দুই জনপ্রতিনিধিসহ কয়েকজন নারীর সঙ্গে অশালীন ভিডিও ধারণ করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে পর্নোগ্রাফি আইনে দুটি মামলা হয়। এর আগে এ মামলায় গত সোমবার সন্ধ্যায় আকাশকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে সাতক্ষীরা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। গত সোমবার সন্ধ্যায় সাদিকুরকে ছিনতাইয়ের চার লাখ টাকাসহ ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত ১৫ ডিসেম্বর সদর উপজেলার ঘোনা ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ও আশাশুনির প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সদর থানায় পৃথক দুটি মামলা করেন।