গাজীপুরে অরক্ষিত হয়ে আছে 'জাগ্রত চৌরঙ্গী'

অরক্ষিত ভাস্কর্য জাগ্রত চৌরঙ্গী। গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
অরক্ষিত ভাস্কর্য জাগ্রত চৌরঙ্গী। গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্যটি এখন অনেকটাই অরক্ষিত হয়ে আছে। এর আশপাশে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। ভাস্কর্যের দেয়ালে থাকা শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নামগুলোও মুছে যাচ্ছে। তা ছাড়া দেয়ালে ঝুলছে কয়েকটি ব্যানার-পোস্টার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শহীদদের স্মরণে নির্মিত এই ভাস্কর্যের নাম ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’। মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগ করেছেন, এমন শহীদদের স্মরণে ১৯৭৩ সালে ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয়। এর ভাস্কর আবদুর রাজ্জাক। ভাস্কর্যটির উচ্চতা ৪২ ফুট ২ ইঞ্চি। এর দেয়ালে ১৬ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৩ নম্বর সেক্টরের ১০০ এবং ১১ নম্বর সেক্টরের ১০৭ জন শহীদ সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধার নাম লেখা রয়েছে। কিন্তু প্রশাসনিকভাবে সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ না থাকায় এটি বেহাল হয়ে আছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, সড়ক সংস্কারের কারণে চার থেকে পাঁচ মাস আগে ভাস্কর্যটির সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ফেলা হয়েছে। এরপর থেকে ভাস্কর্যটি অরক্ষিত। ভাস্কর্যের চারপাশে মানুষের আনাগোনা থাকে। অনেকে ময়লা-আবর্জনা ফেলে এখানে। তা ছাড়া যে যার মতো ব্যানার–ফেস্টুন লাগায় ভাস্কর্যের চারপাশে। এতে ভাস্কর্য চত্বরের পুরো পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। ভাস্কর্যসংলগ্ন অনুপম সুপার মার্কেটের দোকানি মো. হাবিবুর রহমান বলেন, প্রতিবছর বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে পুরো ভাস্কর্য ঘষামাজা করে পরিষ্কার করা হয়। এবার সে রকম কিছুই দেখা যায়নি। ভাওয়াল সরকারি বদরে আলম কলেজের শিক্ষার্থী হাসনাত হেমী বলেন, ‘বই-পুস্তকে আমরা প্রায়ই এই ভাস্কর্যের কথা পড়ি, কিন্তু বইয়ের সঙ্গে এখন বাস্তবের মিল নেই।’

সরেজমিনে দেখা যায়, ভাস্কর্যটির চারপাশে কোনো সীমানাপ্রাচীর নেই। ভাস্কর্যের বেদির গোড়ায় জমে আছে বালু, মাটিসহ বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী। বেদিতে থাকা নামফলকে জমেছে ধুলার আস্তরণ। দেয়ালে থাকা শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নামগুলোও মুছে যাচ্ছে। তা ছাড়া দেয়ালে ঝুলছে কয়েকটি ব্যানার-পোস্টার। কেউ কেউ সেখানে ফেলছে ময়লা-আবর্জনা।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বিআরটি (বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট) প্রকল্পের উন্নয়নকাজ চলছে। সে কাজের অংশ হিসেবে ভাস্কর্যটির সীমানাপ্রাচীর অপসারণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রকল্প পরিচালক চন্দন কুমার বসাক বলেন, ‘আমরা এটাকে (ভাস্কর্য) যত্ন করেই রেখেছি। কাজের প্রয়োজনেই ভাস্কর্যটি সরাতে হবে। এ বিষয়ে আলোচনা চলছে।’

যোগাযোগ করা হলে জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে একটি ফ্লাইওভার (উড়ালসড়ক) হবে। এ কারণে ভাস্কর্যটি সাময়িকভাবে স্থানান্তরের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা উন্নয়ন সভায় আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেব।’